শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির শ্রমিক ও এলাকাবাসীকে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক ব্যর্থ

ফুলবাড়ী, (দিনাজপুর) সংবাদদাতা: দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের ১৩ দফা ও ক্ষতিগ্রস্ত ২০ গ্রামের সমন্বয় কমিটির ৬ দফা  দাবি আদায়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক ভেস্তে গেছে। গত ১৫ই মে সকাল সাড়ে ৮টায় কয়লা খনির কর্মকর্তা কর্মচারীরা খনির ভিতরে কর্মস্থলে যাওয়ার সময় বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির শ্রমিক ও এলাকাবাসী বাঁধা প্রদান করে। এতে শ্রমিক ও খনির কর্মকর্তাদের সাথে বাগবিতন্ডায় সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এতে গত ১৫ ই মে সকাল ৯ টায় কয়লা খনির গেটের সামনে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে শ্রমিক ও কয়লা খনির কর্মকর্তাদের মধ্যে পুলিশসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। আহতরা হলেন বড়পুকুরিয়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের কনস্টেবল মোঃ শাহিনুর, কয়লা খনির মহা-ব্যাবস্থাপক এবিএম কামরুজ্জামান, প্রশাসন, মোঃ সানাউল্লাহ্, ব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) সৈয়দ ইমাম হাসান, ব্যবস্থাপক সাজিউল ইসলাম সাজু, মোঃ জাহেদুর রহমান, সহকারী ব্যবস্থাপক কমল মল্লিক, মোঃ সাজ্জাদ হোসেন, মোঃ মুন্সি মিয়া ও মোঃ আবু সায়েম।
এদিকে বড়পুকুরিয়া শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে মোঃ রাকিব হোসেন, এনামুল হক, মোতালেব হোসেন, কয়লা ব্যবসায়ী মোঃ গোলাম মোস্তফা ও আয়জার রহমান। আহতদেরকে গত ১৫ই মে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং অন্যান্যদেরকে পার্বতীপুর ফুলবাড়ীর স্থানীয় উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করেন।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, দিনাজপুর ও ফুলবাড়ীতে বসবাসকারী বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির কয়েকজন কর্মকর্তা ঐ দিন সকালে খনিতে ঢুকতে চাইলে ধর্মঘটী শ্রমিক ও ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসী নেতৃবৃন্দরা বাঁধাপ্রদান করে। এই সময় বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ভিতরে অবস্থানরত কয়েকজন কর্মকর্তা খনির গেটে এগিয়ে এলে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এতে দু’পক্ষের মধ্যে আহত হয়। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রবিউল ইসলাম রবি ও সাবেক সভাপতি ওয়াজেদ আলী এবং সাধারণ সম্পাদক সুফিয়ান অভিযোগ করে বলেন, গত ১২ ই মে শনিবার থেকে ১৩ দফা দাবীতে শ্রমিকেরা ও গ্রামবাসীদের ৬ দফা দাবী শান্তিপূর্ণভাবে খনির গেটে ধর্মঘট পালন করে আসছেন। কিন্তু গত ১৫ ই মে মঙ্গলবার সকালে খনির কর্মকর্তারা পরিকল্পিতভাবে শ্রমিকদের উপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেন।
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আলহাজ্ব  হাবিব উদ্দিন আহমেদ জানান, খনির শ্রমিকেরা ধর্মঘটের নামে গত ৪দিন ধরে খনির গেটে অবস্থান নিয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীদের অবরুদ্ধ করে রেখেছে। ১ শত পরিবার তাদের ধর্মঘটের কারণে জিম্মি হয়ে পড়েছে। স্কুলের ছেলে মেয়েরা স্কুলে আসতে পারছে না বা কেউ বাহির হতেও পারছে না। আমাদের উপর অমানবিক নির্যাতন করা হচ্ছে। বাহিরে অবস্থানকারী কয়েকজন কর্মকর্তা খনিতে ঢুকতে গেলে শ্রমিকদের সাথে বাক বিতন্ডা শুরু হলে কতিপয় শ্রমিকরা এই হামলা করে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য খনির ভিতর থেকে খনির উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। কিন্তু শ্রমিকরা সাঠিসোটা এবং ইট পাটকেল নিয়ে তাদের উপর হামলা চালায়। এতে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী মারাত্মকভাবে আহত হয় বলে জানান। এদিকে সংঘর্ষের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঐদিন বিকেল সাড়ে ৪টায় বড়পুকুরিয়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রেহানুল হক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এডিশনাল এস.পি (ফুলবাড়ী সার্কেল) এর মোঃ রফিকুল ইসলাম, পার্বতীপুর মডেল থানার ইনচার্জ মোঃ হাবিবুল হক প্রধান ধর্মঘটী শ্রমিক নেতাদের ও ক্ষতিগ্রস্ত ২০ গ্রামের সমন্বয় কমিটির নেতৃবৃন্দদেরকে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন। অবশেষে বৈঠকে ফলপ্রসূ আলোচনা না হওয়ায় বৈঠক ভেস্তে যায়। গতকাল ১৬ ই মে খনি শ্রমিক ও ২০ গ্রামের সমন্বয় কমিটির নেতৃবৃন্দরা তাদের ১৩ দফা ও ৬ দফা দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে জানার জন্য পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহানুল হক এর সাথে গতকাল বুধবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন গ্রহণ করেননি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ