বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

খুলনায় আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে

 

খুলনা অফিস : তুচ্ছ কারণেই আত্মহত্যার মত ভয়ঙ্কর পথ বেছে নিচ্ছে তরুণীরা। আর সহজ উপায় হিসেবে বিভিন্ন প্রকার কীটনাশক ও হারপিক পানে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে তারা। চলতি মাসেই শুধুমাত্র খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিষপানে আহত হয়ে ভর্তি হয়েছে ৫০ জন তরুণী। মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সমাজবিজ্ঞানীরা বলছে সামাজিক অবক্ষয় থেকে মানসিক বিষণœতায় ভুগেই তরুণীরা এমন ভয়ঙ্কর পথ বেছে নিচ্ছে।

খুমেক হাসপাতালের বিভিন্ন সূত্রে জানাগেছে, খুলনার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী শিক্ষার্থী গত ২০ মে সন্ধ্যার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে বসে একাধিক ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। বর্তমানে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আগের দিন কীটনাশক পানে মুমূর্ষু অবস্থায় মণিরামপুর ও মংলার দুই তরুণীকে হাসপাতালে ভর্তি করে তাদের স্বজনরা। ১৮ মে সোনাডাঙ্গা গল্লামারী এলাকার বাসিন্দা পারভীন আক্তার বিষপানে আত্মহত্যা করে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভর্তি রেজিস্ট্রার পর্যালোচনা করে দেখা যায় চলতি মাসের শুরুর দিকে খুলনা বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক পানে গত ২১ মে পর্যন্ত ৫০ জন তরুণী আত্মহত্যার চেষ্টা করে মুমূর্ষু অবস্থায় ভর্তি হয়। ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ৪ জন। তরুণীদের আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। 

বাংলাদেশ সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন এন্ড রিচার্স বাংলাদেশ এর ওয়েব সাইট থেকে পাওয়া তথ্য মতে, বাংলাদেশে প্রতিবছর ১০ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে। বাংলাদেশে প্রতিদিন ২৮ জন মানুষ আত্মহত্যা করে। ২০২০ সালে যা দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রতিবছর গলায় ফাঁস ও কীটনাশক পানে গড়ে ১০ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করছেন। এর বাইরে আছে ঘুমের ওষুধ খাওয়া, ছাদ থেকে লাফ দিয়ে পড়া, রেললাইনে পড়ে। তাদের হিসাবে এর বাইরে দেশের বড় বড় হাসপাতালগুলোর জরুরী বিভাগে যত রোগী ভর্তি হয়, তার সর্বোচ্চ ২০ ভাগ আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়া লোকজন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদক, প্রেমে ব্যর্থতা, পারিবারিক কলহ, অতিরিক্ত উচ্চ আকাঙ্খার কারণে তরুণ-তরুণী বেশি হারে আত্মহত্যা করছেন। 

বাংলাদেশ জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম বলেন, আত্মহত্যার দু’টি ধরণ আছে-পরিকল্পিতভাবে এবং আবেগতাড়িত হয়ে আত্মহত্যা। বাংলাদেশে অধিকাংশ আত্মহত্যার ঘটনা আবেগতাড়িত। তরুণ-তরুণীরাই বেশি আত্মহত্যা করেন। তাছাড়া নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেশি হওয়ার কারণ আমাদের আর্থ সামাজিক অবস্থা, নির্যাতন, ইভটিজিং, যৌতুক, সম্ভ্রমহানি, অবমাননা, অর্থনৈতিক সক্ষমতা না থাকা ইত্যাদি। 

খুলনাঞ্চলে আত্মহত্যা প্রবণতা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক উপাধ্যক্ষ মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ধীরাজ মোহন বিশ্বাস বলেন, তরুণ-তরুণীরাই বেশি আত্মহত্যা করেন। তাছাড়া নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেশি হওয়ার কারণ আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, নির্যাতন, ইভটিজিং, যৌতুক, সম্ভ্রমহানি, অবমাননা, অর্থনৈতিক সক্ষমতা না থাকায় সৃষ্ট মানসিক বিষন্নতা থেকেই তরুণ-তরুণীরা এ ভয়ঙ্কর পথ বেছে নেয়। তবে এক্ষেত্রে তরুণীদের সংখ্যাই বেশি। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে মানসিক সুস্থতা জরুরী। আনন্দের মধ্যে থাকা। আলোচনা করা জরুরী।

দৃশ্যমান হচ্ছে না কেডিএ’র আলোচিত শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প : বছরের পর বছর পার হলেও খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ)’র নেয়া অতি গুরুত্বপূর্ণ আলোচিত শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প বাস্তবায়ন দৃশ্যমান হচ্ছে না। ফলে এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নগরবাসী।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে সরকারি অর্থায়নে ৯৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পে রয়েছে, সড়ক প্রশস্তকরণের মাধ্যমে চার লেনে উন্নীতকরণ, ডিভাইডার, লাইট ও ৩টি কালভার্ট নির্মাণ। ওই বছর ৩০ জুলাই প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন মেলে। যার বাস্তবায়নকাল ধরা হয় ২০১৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত। কিন্তু নানা জটিলতায় বাস্তবায়নের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। এরপর কেডিএ মন্ত্রণালয়ে বাস্তবায়ন মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রেরণ করে। এর প্রেক্ষিতে প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১২৬ কোটি টাকা, আর বাস্তবায়নকাল নির্ধারণ করা হয় ২০১৭ সালের জুন মাস পর্যন্ত। কিন্তু এ মেয়াদেও প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। শুধুমাত্র পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ও ভূমি হুকুম দখল কার্যক্রমের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এখন পুনরায় মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে। এভাবে দীর্ঘ প্রায় ৫ বছরেও প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নগরবাসী।

নগরবাসী জানান, প্রকল্প নিয়ে আসলে কী হচ্ছে নগরবাসী কিছুই জানে না। ৫ বছরে অতিবাহিত হলেও এখনও সড়কের কাজ আরম্ভ করতে পরেনি কেডিএ। তাই খুব শিগগির প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের দাবি জানান তারা। 

তবে কেডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী (পূর্ত) ও প্রকল্প পরিচালক মো. আরমান হোসেন বলেন, অধিগ্রহণকৃত জমির ওপর বিভিন্ন স্থাপনা নিলামের জন্য বৈষয়িক শাখা টেন্ডার আহ্বান করেছে। নিলাম প্রক্রিয়া শেষ হলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান স্থাপনা অপসারণ করবে। তখন মাঠ পর্যায়ের কাজ শুরু করা হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ