বিষখালি ও কুশিয়ারার ভাঙ্গনে বহু ঘরবাড়ি ফসলীজমি নদীগর্ভে বিলীন
মো: সাইদুল ইসলাম, রাজাপুর (ঝালকাঠি) সংবাদদাতা: ঝালকাঠির রাজাপুরে বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই তীব্র নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। যার ফলে হুমকির মুখে পড়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বেশ কিছু দোকান ঘর ও অনেক ফসলি জমি। ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার বাদুরতলা এলাকা থেকে বয়ে যাওয়া বিষখালি নদীর ভাঙ্গনে ইতোমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে অসংখ্য বাড়ি-ঘর ও ফসলী জমি। ভাঙ্গনের মুখে আরও রয়েছে মসজিদ ও মাদরাসাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। উপজেলার বিভিন্ন যায়গায় বৃষ্টি পাতের কারণে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে মরিচ, মুগ, ছোলা বুটসহ বিভিন্ন ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যার ফলে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
রাজাপুরে বর্ষা আসার আগেই বিষখালী সহ অন্যান্য নদ-নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। সেই সাথে নদী ভাঙ্গনের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এছাড়াও ঐ এলাকায় বিষখালী নদী ভাঙ্গনের ফলে বাদুরতলা লঞ্চ ঘাট, স্কুল, মসজিদ, বাদুরতলা বাজার ও বিদ্যালয়সহ অসংখ্য বসতবাড়ি ও ফসলি জমি ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে।
ভাঙ্গন এলাকার কিছু ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার জানান, অনেক আগে থেকেই নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে, আমাদের অনেক জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের স্মরণাপন্ন হলে তাদের উত্তর একটাই আসে এখানে আমাদের কিছুই করার নেই। আমরা উপরে জানিয়েছি তারা ব্যবস্থা করবেন।
এ বিষয়ে উপজেলার মঠবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল সিকদার বলেন, “নাপ্তার হাট থেকে চল্লিশ কাহনিয়া প্রায় ৪-৫ কিলোমিটার জায়গায় ভাঙ্গন বৃদ্দি পেয়েছে। নদী ভাঙ্গনের ফলে আগে যে সুন্দর গ্রাম ছিল এখন আর নেই। শতাধিক বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তিনি আরও জানান ইতিমধ্যে আমাদের মাননীয় সংসদ সদস্য বিষখালী নদী ভাঙ্গন নিয়ে জাতীয় সংসদে একাধিকভার উত্থাপন করেছেন এবং বরিশাল থেকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। তিনি একটি বেড়ীবাধ নির্মাণ সহ নাপ্তার হাট ও বাদুরতলা স্কুলের ওখানে ব্লক নির্মাণ করার আশ্বাস দিয়েছেন”।
এ ব্যপারে রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা বেগম পারুল বলেন, “নদী ভাঙ্গনের কথা আমাদের ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ড কতৃপক্ষের কাছে জানানো হয়েছে। তারা হয়ত খুব শীঘ্রই এর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে”।
গোলাম সারোয়ার,জগন্নাথপুর থেকে:
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার আশারকান্দি ইউনিয়নের বৃহত্তর ঐহিত্যবাহী জনবহুল বড় ফেছি বাজার প্রবাহমান কড়াল গ্রাসী কুশিয়ারা নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে ক্রমান্বয় বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
হযরত শাহ ফছিহ (র:) নামে বাজারটির নাম করণ করা হয়।আশারকান্দি ইউনিয়নের দক্ষিণ প্রান্তের বড় ফেছি,কালাইনজুড়া,নোয়াগাঁও(আটঘর),মিলিক,উত্তর কালনিরচঁর,পাইলগাঁও ইউনিয়নের নতুন কসবা ও পূর্ব কাতিয়া গ্রাম সহ নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের মাধবপুর,গালিমপুর,দীঘলবাক গ্রামের জনসাধারণ বড়ফেছি বাজারে দৈনন্দিন কেনাকাটা করে আসছেন।
বড় ফেছি বাজারের ব্যবসায়ী হাজী মো.দুরুদ মিয়া,হাজী মো.ছালিক মিয়া ও মো. জিতু মিয়ার সাথে আলাপ করে জানা যায়, ২০০৫ সাল থেকে কুশিয়ারা নদীর আগ্রাসী ভাঙ্গনে বাজারটির প্রধান গলি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যায়। দালানকোঠা সহ বহু দোকান ঘর বিলিন হওয়ায় অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে যায়। অনেক বড় বড় ব্যবসায়ী অনেক আগেই এ বাজারটি থেকে ব্যবসা গুঠিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন।আমরা এলাকাবাসী ঐতিহ্যর বাজারটি টিকিয়ে রাখতে ভাঙ্গন কবলিত বাজার থেকে দুইশত ফুট দূরে বিকল্প বাজার প্রতিষ্ঠা করি। শেষপর্যন্ত বাজারের বাকি অংশটুকুও বর্তমানে বিলিন হতে চলছে।
বড় ফেছির বাজারের ব্যবসায়ী মো.মাসুদ আহমদের সাথে মুঠোফোনে বাজারের অবস্থায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপসোস সাংবাদিক ভাই। বর্তমান সরকারের তিনজন মন্ত্রী হেলিকপ্টার করে আমাদের বাজার পরিদর্শন করে যান ঘোষণা দেন কাজের কিন্তু আজ তো পুরো বাজার বিলিন হয়ে গেল। কাজ তো দুরের কথা স্বান্তনা দেওয়ার মত মানুষ খুঁেজ পাচ্ছিনা। আর কত দিন এভাবে চলবো আমরা জরুরী ভিত্তিতে বাজার রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানাই।
কুশিয়ারা নদীর চলমান ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে জনবহুল বড় ফেছি বাজারের মানচিত্র একেবারেই মুছে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। চরম দুর্ভোগে পড়ার আশংকা রয়েছে আশে পাশে বাজারে আসা এলাকাবাসী। প্রতিদিনই নতুন ভাঙ্গনের ভয়াবহ দৃশ্য দেখে হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন বাজারবাসী। অবিলম্বে ভাঙ্গন প্রতিরোধে প্রদক্ষেপ গ্রহণের জন্য স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধি সহ সংশিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সু-দৃষ্টি কামনা করেন বাজারবাসী।