শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

মাদকবিরোধী অভিযানে ঢাকায় ৩ জনসহ নিহত আরও ১৪

স্টাফ রিপোর্টার : প্রশ্ন উঠতে থাকলেও মাদক নির্মূলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। মঙ্গলবার রাতে বিভিন্ন স্থানে নিহত হয়েছেন ১৪ জন। এর মধ্যে ঢাকায়ই তিনজনের মৃত্যু ঘটেছে র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে। মাগুরায় উদ্ধার হয়েছে তিনজনের গুলীবিদ্ধ লাশ। এছাড়া যশোরে দুজন, কক্সবাজারে একজন, চট্টগ্রামে একজন, কুমিল্লায় একজন, সিরাজগঞ্জে একজন, নড়াইলে একজন ও চুয়াডাঙ্গায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অভিযান শুরুর পর এ নিয়ে গত ১১ দিনে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১৭ জন।
নিহতরা সবাই মাদক কেনা-বেচায় জড়িত বলে দাবি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। তবে তাদের বক্তব্য ও ঘটনার বিবরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
শুরুতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা পড়ার কথা জানানো হলেও এখন গুলীবিদ্ধ লাশ উদ্ধারের খবর দিয়ে বলা হচ্ছে, অভ্যন্তরীণ কোন্দলে গোলাগুলিতে মারা পড়ছেন তারা।
সমালোচনার মধ্যেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, তারা মাদকের বিরুদ্ধে ‘অলআউট’ যুদ্ধে নেমেছেন, নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।
আমাদের ব্যুরো,জেলা ও উপজেলা সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর:
ঢাকা: ভাষানটেক দেওয়ানপাড়া লোহার ব্রিজ এলাকায় ভোররাতে র‌্যাবের কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা যান আতাউর রহমান (৪৬), বাপ্পি (৩৮) ও মোস্তফা হাওলাদার (৫০) নামে তিনজন।
র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক চৌধুরী মঞ্জুরল কবির বলেন, “মাদক বিক্রেতাদের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে রাতে লোহার ব্রিজ এলাকার একটি নির্মাণাধীণ বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। “র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক বিক্রেতারা র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এসময় র‌্যাবও পাল্টা গুলী চালায়। একপর্যায়ে আতাসহ তিন মাদক বিক্রেতাকে আহত অবস্থায় পাওয়া যায়।”গুলিবিদ্ধ তিনজনকে প্রথমে মিরপুর আধুনিক হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে তাদের দেখে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
র‌্যাব বলছে, আতা সাভারের ‘শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী’ এবং বাপ্পি ও মোস্তফা ভাষানটেক এলাকার ‘মাদক ব্যবসায়ী’।ঘটনাস্থল থেকে দুটি পিস্তল ও  প্রায় ১৮ হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধারের কথাও জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে, আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এক ডাকাত নিহত হয়েছেন। এসময় ঘটনাস্থল থেকে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। মঙ্গলবার ভোর রাতে টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের মরাগাঙ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে নিহতের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
মাগুরা: শহরতলীর বাটিকাডাঙ্গা মাঠপাড়া এলাকা থেকে রাত ২টার দিকে তিন ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, এরা ‘মাদক ব্যবসায়ী’।
সদর থানার ওসি ইলিয়াস হোসেন বলেন, “বাটিকাডাঙ্গা মাঠপাড়া এলাকায় গোলাগুলীর শব্দ শুনে টহল পুলিশ সেখানে গিয়ে তিন ব্যক্তির রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখে।”সেখান থেকে ৩২০ গ্রাম হেরোইন, এক কেজি গাঁজা, ছয় বোতল ফেনসিডিল, ৬টি রাইফেলের গুলী উদ্ধারের কথাও জানান তিনি।
তিনজনকে মাগুরা ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মমতাজ মজিদ বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই তিনজনের মৃত্যু ঘটেছে।
জেলা পুলিশ সুপার খান মো. রেজোয়ান বলেন, নিহতদের একজন শহরের ইসলামপুর পাড়ার রায়হান ঢালী ওরফে বিট্রিশ (৩০), ভায়না এলাকার বাচ্চু চোপদার (৫৫) ও নতুন বাজার বৈরাগি পাড়ার কিশোর অধিকারী ওরফে কালা।রায়হান ও কিশোর অধিকারীর বিরুদ্ধে ১০টি এবং বাচ্চু চোপদারের বিরুদ্ধে ৭টি মাদক মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
কক্সবাজার: শহরে সমুদ্র সৈকতে র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মো. মুজিবুর রহমান (৪২) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। নেত্রকোনা জেলার বাসিন্দা মুজিবুরের বিরুদ্ধে তার জেলার বিভিন্ন থানায় ১০টি মাদক মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।
রাত সোয়া ১২টার দিকে সৈকত সংলগ্ন কবিতা চত্বরে এই ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হয় বলে র‌্যাব-৭ এর কক্সবাজার কোম্পানি কমান্ডার মেজর রুহুল আমিন জানিয়েছেন।তিনি বলেন, “র‌্যাব সদস্যরা মাদক ব্যবসায়ী সন্দেহে কয়েকজনকে চ্যালেঞ্জ করলে তারা র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে। তখন আত্মরক্ষার্থে র‌্যাবও পাল্টা গুলী ছোড়ে।“পরে ঘটনাস্থল থেকে নেত্রকোণার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও ১০টি মামলার আসামি মজিবুরের গুলিবিদ্ধ দেহ পাওয়া যায়।”সেখান থেকে ছয় হাজার ইয়াবা, একটি ওয়ান শ্যুটার গান, তিন রাউন্ড গুলি ও দুটি গুলীর খোসা উদ্ধার করা হয় বলে জানান এই র‌্যাব কর্মকর্তা।
চট্টগ্রাম: রাত ২টার দিকে শহরের পলোগ্রাউন্ড এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ইসহাক (৩৫) নামে সন্দেহভাজন এক মাদক বিক্রেতা নিহত হন।
র‌্যাব-৭ এর চাঁদগাও কোম্পানির কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আশেকুর রহমান বলেন, “মাদকের চালান লেনদেনের খবরে তারা র‌্যাব সদস্যরা এলাকায় অভিযানে গেলে তাদের ওপর গুলী চালানো হয়। আত্মরক্ষায় র‌্যাবও পাল্টা গুলী চায়।” পরে ঘটনাস্থলে ইসহাকের গুলীবিদ্ধ মরদেহ, চার হাজার ইয়াবা, একটি ওয়ান শ্যুটার গান ও ১০ রাউন্ড গুলী উদ্ধার করা হয়।
চুয়াডাঙ্গা: পৌর এলাকার সাতগাড়ি গ্রামের মাঠে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে তানজিল আহমেদ (৩০) নিহত হন। তিনি পুলিশের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী বলে জানানো হয়েছে।তানজিল চুয়াডাঙ্গার শহরতলী দৌলাৎদিয়াড় গ্রামের মৃত রমজান আলীর ছেলে। তার বিরুদ্ধে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় ১২টি মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানায়।
সদর থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, “একদল মাদক ব্যবসায়ী পৌর এলাকার সাতগাড়ি গ্রাম এলাকা দিয়ে মাদকের চালান নিয়ে যাচ্ছে বলে খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল সেখানে পৌছালে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলীবর্ষণ করে। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলী চালায়।“প্রায় ১০ মিনিট গোলাগুলীর পর মাদক ব্যবসায়ীরা পিছু হটলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মাদক ব্যবসায়ী তানজিলের মরদেহ উদ্ধার করে।”
লাশের পাশ থেকে একটি ওয়ান শুটার গান, চার রাউন্ড গুলী ও এক বস্তা ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয় বলে ওসি জানান।তিনি  বলেন, এই ঘটনায় চুয়াডাঙ্গা সদর থানার এসআই রবিউল ইসলাম ও কনস্টেবল আব্দুস সবুরও আহত হয়েছেন।
কুমিল্লা: বুড়িচং উপজেলার লড়িবাগ এলাকায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে রোছমত  আলী (৪০) নামের একজন নিহত হয়েছেন। বুড়িচংয়ের ছয়গ্রাম এলাকার মৃত আলী আহাম্মদের ছেলে রোছমতের বিরুদ্ধে ৭টি মাদক মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানায়।
বুড়িচং থানার ওসি মনোজ কুমার দে বলেন, ওই অভিযানের সময় মাদক চক্রের হামলায় ৩ পুলিশ আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে ১ রাউন্ড কার্তুজসহ একটি পাইপগান ও ৪০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে।
নড়াইল: রাত আড়াইটার দিকে নড়াইল-লোহাগড়া সড়কের সদর উপজেলা আউডিয়া ইউনিয়নের মালিবাগ মোড়ে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সজিব (২৫) নামে একজন নিহত হয়েছেন।সজিব সদর উপজেলার দত্তপাড়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য আলতাব হোসেনের ছেলে। তার বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে বলে নড়াইল সদর থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন।
নড়াইলের সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) মো. মেহেদী হাসান জানান, মালিবাগ মোড়ে রাতে মাদক বিক্রেতাদের অবস্থানের খবর পেয়ে পুলিশের একটি বিশেষ দল অভিযানে যাওয়ার পর এই ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হয়। এতে ২ এসআইসহ ৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হন বলেও জানান তিনি। ঘটনাস্থল থেকে ২১৩টি ইয়াবা ট্যাবলেট, একটি রিভলবার, ২ রাউন্ড গুলী ও দুটি রামদা উদ্ধারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।
যশোর: বেনাপোলের বড়আচড়া সীমান্তে মাদক বিক্রেতাদের দুই পক্ষের গোলাগুলীতে দুজন নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছে পুলিশ। নিহতরা হলেন লিটন হোসেন ও চাকমা বাদশা। তাদের বাড়ি বেনাপোল দিঘিরপাড় গ্রামে।
বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি অপূর্ব হাসান বলেন, “বড়আচড়া সীমান্তে ভোর রাতে মাদক ব্যবসায়ীদের দুই গ্রুপে গোলাগুলীর ঘটনা ঘটে। এতে নিহত হয় লিটন ও বাদশা। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাদের লাশ উদ্ধার করে।”ঘটনাস্থল থেকে একটি অস্ত্র, ২ রাউন্ড গুলি ও ১০ কেজি গাঁজা উদ্ধারের কথা জানান তিনি।
ওসি অপূর্ব হাসান বলেন, “লিটন ও বাদশা এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী এবং তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।”
সিরাজগঞ্জ: কামারখন্দে র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে আশান হাবিব (৪৫) নামে একজন নিহত হয়েছেন। কামারখন্দ উপজেলার কামারখন্দ হাটপাড়া গ্রামের ইজার উদ্দিনের ছেলে। হাবিবের বিরুদ্ধে ৭টি মামলা বিচারাধীন।
র‌্যাব এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ভোরে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়কের ঝাঐল ওভার ব্রিজের পাশে একটি ইউক্যালিপটাস বাগানে ভেতরে এ ‘বন্দুকযুদ্ধ’র ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শুটার গান, এক রাউন্ড গুলী, এক হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট ও ২০ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করা হয়।
অভিযানে র‌্যাব সদস্য ল্যান্স নায়েক ছাবলুর রহমান, নায়েক তোফায়েল আহমেদ ও কনস্টেবল আরিফ হোসেন আঘাতপ্রাপ্ত হন এবং তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ