শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

সিলেটে অভিজাত মিষ্টির দোকানে ভেজালের ছড়াছড়ি ॥ লাখ লাখ টাকা জরিমানা

সিলেট ব্যুরো : পবিত্র রমযান মাসে প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটে আত্মীয়-স্বজনের বাসায় ইফতার সামগ্রী পাঠাতে মিষ্টির প্রাধান্য বেশী থাকে। নগরীর বিভিন্ন অভিজাত মিষ্টির দোকানে রয়েছে ভেজালের ছড়াছড়ি। পহেলা রমযান শুক্রবার থেকে ১৩ রমজান বুধবার পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালত বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে অভিযান চালিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করছে। সুপারশপ হিসেবে খ্যাত এসব দোকানগুলোতে পঁচা, আবর্জনা ও পোকামাকড়ের ছড়াছড়ি দেখে বিষ্মিত ও অদ্বিগ্ন হয়েছেন সিলেটের অসংখ্য জনসাধারণ।  ক্রেতা সাধারণ অভিজাত এসব দোকান ও তাদের কারখানায় পঁচা, বাসী খাবারের স্তূপ দেখে রীতিমত অবাক হয়েছে। অনেকে এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধের দাবীও জানিয়েছেন।  খাদ্যপণ্য প্রস্তুতকারী ও সরবরাহকারী ‘রিফাত এন্ড কোং’ নামের প্রতিষ্ঠানটি সিলেটে অভিজাত সুপারশপ হিসেবে খ্যাত। সিলেটজুড়ে এ প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকটি শাখাও রয়েছে। কিন্তু এ প্রতিষ্ঠানটিও মানুষকে ভেজাল খাদ্যপণ খাওয়াচ্ছে এটা ভাবতে অনেকে নারাজ। ভ্রাম্যমাণ আদালতের ‘রিফাতে’র বিভিন্ন শাখায় অভিযান চালিয়ে তাদের মুখোশ উন্মোচন করেছেন। এই প্রতিষ্ঠানটি অন্যান্য দিনে সামান্য টাকা জরিমানা গুনলেও গত মঙ্গলবার ‘রিফাত’ গুনলো আট লক্ষ টাকা জরিমানা। সাধারণ মানুষ থেকে নিয়ে উচ্চবিত্ত পরিবারের সবাই কেনাকাটা করে স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য এসব অভিজাত মিষ্টান্ন শপে। কিন্তু শর্ষের মধ্যে যে ভূত তা মানুষ জানতো না।  ভ্রাম্যমান আদালত মানুষের চোখ খুলে দেয়ায় অনেকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন এ অভিযান যেন অব্যাহত থাকে।
গত ২২ মে সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারস্থ সহির প্লাজায় রিফাতের একটি শাখায় অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে বিভিন্ন ধরনের মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার জব্দ করা হয়। এছাড়া মিষ্টির মধ্যে মাছি বসে থাকার বিষয়টিও নজরে আসে আদালতের। রিফাতকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন আদালত।
এরপর গত ২৪ মে জিন্দাবাজার পয়েন্ট সংলগ্ন রিফাতের আরেকটি শাখায় অভিযান চালিয়ে ভেজাল দই ও সস বিক্রির অপরাধে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এদিকে, ২৯ মে মঙ্গলবার নগরীর কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড এলাকাস্থ রিফাতের মূল কারখানা ও পাশর্^বর্তী আরেকটি কারখানায় অভিযান চালায় র‌্যাব-৯ এর একটি দল। পঁচা, বাসি, দুর্গন্ধযুক্ত ও পোকায় ধরা বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য এবং নোংরা অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের দায়ে এবার ৮ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় রিফাতকে।
র‌্যাবের অভিযানের সময় দেখা যায়, কুমারগাঁওয়ে রিফাত এন্ড কোং এর মূল কারখানায় খাবার অনুপযোগী তেল, ফ্রিজে পঁচা দুর্গন্ধযুক্ত মাংস, খাবার অনুপযোগী পোকায় ধরা ঘি, ডাল, পনির, পঁচা প্রোটিন রয়েছে।
পাশর্^বর্তী তাকওয়া কমপ্লেক্সে রিফাতের আরেকটি কারখানায় খাবার অনুপযোগী ময়দা, আটা, সেমাই তৈরীর সরঞ্জাম দেখতে পায় র‌্যাবের অভিযানিক দল। উভয় কারখানার পরিবেশ ছিল চরম অস্বাস্থ্যকর, নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন।
এসময় র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুর রহমান রিফাত এন্ড কোং-কে দুটি ধারায় ৮ লাখ টাকা জরিমানা করেন।
রিফাত এন্ড কোং এ একের পর এক ভেজাল ধরা পড়ায় আঁতকে ওঠছেন সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন, মানুষকে এসব কি খাওয়াচ্ছে রিফাত!
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মামুন আহমদ বলেন, এতদিন আমরা জানতাম ‘রিফাত এন্ড কোং একটি অভিজাত মিষ্টান্ন ভান্ডার কিন্তু তারা যে মানুষকে এসব অখাদ্য, কুখাদ্য খাওয়াচ্ছে, তা ভাবতেই আঁতকে উঠেছি!’ এদের লাইসেন্স বাতিল করার দাবী জানান এই মেধাবী শিক্ষার্থী। কুমারপাড়ার গৃহিনী সুলতানা আক্তার জানান, পত্রিকায় রিফাতের কুকর্ম দেখে ঘৃণা জন্ম নিয়েছে। তিনি রিফাত সহ যেসব প্রতিষ্ঠান অখাদ্য, কুখাদ্য মানুষের মধ্যে বিক্রি করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সরকারের প্রতি দাবী জানান।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ