শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

খুলনাঞ্চলের ঈদ বাজারের ক্রেতারা ভারতমুখী

খুলনা অফিস : ভারতের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় খুলনাঞ্চলের মানুষ অনেকটা ভারতমুখী। তারা আসন্ন ঈদ উপলক্ষে শপিং এর জন্য বেছে নিয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতকে। ফলে ক্ষতির আশঙ্কায় খুলনার ব্যবসায়ীরা।
জানা যায়, ঈদ উপলক্ষে বিপণি বিতানগুলোর মালিকপক্ষ প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করছে এবং অস্থায়ী জনবল নিয়োগ করেছে। রমযানের ১৪টা পার হলেও এখনও জমে ওঠেনি ঈদবাজার।
মহানগরীর নিউমার্কেটের একুশে ফেব্রিক্স এন্ড টেইলার্সের প্রোপ্রাইটার এস এম শিপলু বলেন, আমাদের এখানে লেডিস এন্ড জেন্টসের প্রায় সকল প্রকারের পোশাক পাওয়া যায়। কিন্তু এবার এখনও উল্লেখ করার মত বিক্রয় হচ্ছে না। তবে আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে বিক্রয় ভাল হবে। তিনি আরও বলেন, এই বছর বিক্রয় বাণিজ্য নিয়ে শঙ্কায় রয়েছি। কারণ ভারতের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় খুলনার বিলাসি শ্রেণি শপিং করতে ভারতমুখী হচ্ছে। চাকরিজীবীরা বেতন বোনাস না পাওয়ায় এখনও শপিং এ আসছে না।
মনে রেখো বিপণি বিতানের সেলসম্যান গোপাল চন্দ্র সাহা বলেন, ক্রেতারা সব ভারতমুখী। ঈদ উপলক্ষে আমাদের যথেষ্ট কালেকশন থাকলেও বিক্রয়ে এখনও সুবিধা করতে পারছি না। তবে আশা করি সামনের দিনগুলোতে বিক্রয় আরও বাড়বে।
নগরীর শপিং কমপ্লেক্সের ফ্যাশন পয়েন্টের প্রোপ্রাইটার বলেন, এখনও খুব বেশি বিক্রয় হচ্ছে না। তবে সবাই বেতন বোনাস পেলেই বিক্রয় বেড়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভারমুখির ব্যাপারে তিনি বলেন, ক্রেতারা ভারতমুখি হচ্ছে- সত্য কিন্তু আমাদের তাতে খুব বেশি প্রভাব পড়েনি।
নকশা আর কারুকাজে মুগ্ধ পাঞ্জাবীর ক্রেতারা : প্রতিবারের মত এবার ঈদেও পুরুষের প্রথম পছন্দ পাঞ্জাবীতে আনা হয়েছে নতুনত্ব। নজরকাড়া এবং রুচিশীল ডিজাইনে ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে কারুকাজে বৈচিত্র্য এনেছেন ব্যবসায়ীরা। কাপড়ের মান এবং দৃষ্টিনন্দন নকশা বিবেচনায় এনে ক্রেতারাও পাঞ্জাবী কিনতে তৎপর। ইতোমধ্যেই পাঞ্জাবীর বাজারে ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। গলা, হাতা, বুক বা পিঠের কাছে আছে নানা ধরনের নকশা। এসব নকশায় রয়েছে সুতোয় বোনা হস্তশিল্পের কাজ, রয়েছে স্ক্রীন প্রিন্ট, এ্যাম্ব্রয়ডারি, কারচুপি ও জারদৌসীর কাজ। দেখা গেল পাঞ্জাবীর ভিন্নতা আনতে টিউনিক কলার, সিঙ্গেল কলার এবং গলার কাজের সাথে মিলিয়ে হাতার কাজ। কোনটির বোতাম লাগানো হয়েছে কাঁধের দিক কেটে, আবার কোনটির বুকের মাঝখান দিয়ে কেটে লাগানো হয়েছে বোতাম। আছে জমিদারী কাটের জমকালো পাঞ্জাবী। কোন পাঞ্জাবীতে আবার লাগানো হয়েছে থ্রী কোয়ার্টার হাতা। লাল, খয়েরি, কমলা, নীল, কালো, সাদা, ছাই, হালকা সবুজ, হলুদ, বেগুনী ইত্যাদি রঙের পাঞ্জাবীতে সমৃদ্ধ দোকানগুলো।
নগরীর মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর শপিংমলগুলোতে শিশুদের জন্য বাহারী ডিজাইনের সব পাঞ্জাবী রাখা হয়েছে। মোদী পাঞ্জাবীর এখনও কদর রয়েছে ক্রেতাদের নিকট। শিশুদের বায়না মেটাতে অভিভাবকরাও এই পাঞ্জাবী কিনতে ছুটছেন শপিংমলে। তবে উটঠতি বয়সের তরুণসহ বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণী পেশার পুরুষের দৃষ্টি কাড়তে শপিংমলগুলোতে অ্যান্ডি, অ্যান্ডি কটন, অ্যান্ডি সিল্ক, জামদানি, কাতান, টুপিয়ান কাপড়ের ব্লক, স্প্রে, টাই-ডাই, স্কিল, প্রিন্ট নামের পাঞ্জাবীর আমদানী করতেও ভুল করেননি পোশাক বিক্রেতারা। এর বাইরে অ্যাপালিক, নম্বর জারিকার চুপি, হাতের কাজ ও বিভিন্ন ধরনের লেজ ব্যবহৃত করে নানা নামের পাঞ্জাবী স্থান পেয়েছে অধিকাংশ দোকানে। লাল, নীল, হলুদ, সাদা, বেগুনি, কমলা, বাদামী, খিয়া, সবুজ, টিয়া ও কালোসহ অনেক রং বে-রঙের কাপড়ে তৈরি এসব পাঞ্জাবীর ডিজাইন ক্রেতার দৃষ্টি কাড়ছে সহজেই। সবমিলিয়ে শপিংমলগুলোতে পাঞ্জাবীর বেচাকেনা জমজমাট হয়ে উঠেছে। শিশুদের পাঞ্জাবীর বিক্রি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। এ সুযোগে ইচ্ছে-খুশি মতো দাম নেয়া হচ্ছে। দোকান ভেদে পাঞ্জাবীর দামে বেশ হেরফের হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অনেক ক্রেতা।
লম্বা বা খাটো দুই ধরনেরই টিউনফিট পাঞ্জাবি আছে বাজারে। পাঞ্জাবির কাপড়ে ব্যবহার করা হয়েছে নানা ধরনের সুতি, জামেবার, তসর, সিল্ক, খাদি, তাঁতের কাপড়, মটকা, জয় সিল্ক, কাতান ইত্যাদি। বুকের দিকে ডাবল পকেট বা জরি সুতার কাজ করা। কোনো পাঞ্জাবিতে আবার ব্যবহার করা হয়েছে থ্রি-কোয়ার্টার হাতা। মোট কথা পাঞ্জাবীতে ক্রেতাদের আগ্রহী করতে আনা হয়েছে বিচিত্রতা। তবে পাঞ্জাবীতে এবারও ভারতীয় সংস্কৃতির প্রভাব বিদ্যমান।
মার্কেটে নরেন্দ্র মোদি ও শর্ট আর সেমি লং পাঞ্জাবীতে ছেয়ে গেছে। পাঞ্জাবীর দোকানগুলোতে ৩শ’ টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত শিশু পাঞ্জাবী বিক্রি হচ্ছে। ঈদে বেশিরভাগ পাঞ্জাবীর নামকরণ করা হয়েছে ইন্ডিয়ান সিরিয়াল দ্বারা।
এবারের ঈদের আকর্ষণীয় এসব পাঞ্জাবী কিনতে পারবেন ৫শ’ থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে। আর এর বেশী দামে কিনতে চাইলেও ১৫ হাজার টাকা দামেরও পাঞ্জাবী রয়েছে মার্কেটে। আড়ং, রংধনু, অঞ্জনস, কারখানা, হ্যাভেন, ডায়মন্ড, ক্যাটস আই, ইজি, ও-২, পাঞ্জাবী হাউসসহ বাহারী নামের ব্রান্ডের দোকানগুলোতে রকমারি পাঞ্জাবীর সমাহার ঘটেছে। এছাড়াও খুলনার শপিং কমপ্লেক্স, রেলওয়ে মার্কেট, নিউ মার্কেট, নগরীর মজিদ স্মরনীতে অবস্থিত বেশ কিছু ব্রান্ডের শপিং সেন্টারেও এসব পাঞ্জাবী পাওয়া যাচ্ছে।
নগরীর নিউ মার্কেটস্থ পাঞ্জাবী হাউজের সেলসম্যান সরোয়ার হোসেন জানান, মার্কেটে অনেক ধরনের পাঞ্জাবীর এসেছে। এবারও ঈদে শর্ট ও সেমি লং পাঞ্জাবী ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে বেশী।
পাঞ্জাবী কিনতে আসা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তৈয়েবুর রহমান, বাঁধন ও জাভেদ জানান, নতুন পাঞ্জাবী ছাড়া ঈদ হতেই পারে না। দাম বাড়ার আগেই কিনে ফেলতে চাইছেন তারা ঈদের পোশাক। তবে এবার দাম বেশী বলে দাবি করেছেন তারা।
তরুণীদের মন কেড়েছে ‘ছুঁচলে জামিন’ : খুলনার ঈদ বাজারে তরুণীদের মন কেড়েছে ‘ছুঁচলে জামিন’ ও ‘গোটা পাত্তি’। তবে, ছুঁচলে জামিন সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকলেও গোটা পাত্তির দাম বেশি।
খুলনা শপিং কমপ্লেক্সের সেলসম্যান মো. শেখ রিপন বলেন, ‘এ বছর ভারতীয় বিভিন্ন সিরিয়ালের নামে আসা পোশাকের মধ্যে ছুঁচলে জামিন ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে।’
নিউমার্কেটের মনে রেখো বিপণি বিতানের মো. হেলাল বলেন, ‘এ বছরের সবচেয়ে দামি পোশাক গোটা পাত্তি। যদিও এখনও পোশাকটির বিক্রি জমেনি। দাম বিভিন্ন ক্যাটাগরি ভেদে ৭ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৩৭ হাজার টাকা পর্যন্ত।’
কলেজছাত্রী আফরিন আরা বলেন, ‘গোটা পাত্তি নামের থ্রি পিসটি অনেকটা বিলাসি পোশাক। ফলে কেনার চেয়ে এ পোশাকের দর্শনার্থী মিলছে বেশি।’
নিউ মার্কেটের বিপণি বিতান মনে রেখোর সেলসম্যান গোপাল চন্দ্র জানান, তিনি দিল্লি বুটিকসের গোটা পাত্তি, ফুল পাত্তি ও কামদানি এনেছেন।
আওয়ার চয়েজের সেলসম্যান ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘ভিড় বাড়ছে, কিন্তু বিক্রি বাড়েনি।’
এ্যারাবিয়ান লেডিস টেইলার্সের প্রোপাইটর মো. মোশারফ বলেন, ‘এবার ক্রেতাদের তৈরি পোশাকে আকর্ষণ বেশি। রমযানের শুরু থেকে তেমন অর্ডার পাওয়া যায়নি। যা অর্ডার পাওয়া গেছে তাতে কর্মীদের বেতন-ভাতা দেয়াও কঠিন হবে।’
শাড়ির নকশা আর বুননে নতুনত্ব খুঁজছেন নারীরা : ‘একলা হয়ে দাঁড়িয়ে আছি, তোমার জন্য গলির কোণে, ভাবি আমার মুখ দেখাব, মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে।’ অতিরিক্ত বিজ্ঞাপন বিড়ম্বনার কথা কবি শঙ্খ ঘোষ এভাবেই বলেছিলেন তার ‘কবিতা আমার অষ্টাদশী প্রেমিকা’তে। তবে বিজ্ঞাপনের চটকদার শ্লোগানে না ভুলে আকর্ষণীয় ডিজাইন, নকশার কারুকাজ এবং বুননে মসৃণতা খুঁজছেন খুলনার নারীরা।
শাড়ির প্রতি বাঙালি রমনীদের আকর্ষণ চিরন্তন। বাঙালি নারীর সাথে শাড়ির যে টান তার প্রমাণ মিলছে এবারের ঈদ বাজারে। ঈদ উপলক্ষে খুলনা মহানগরীর শপিংমলগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ধরনের দৃষ্টিনন্দন শাড়ি।
নগরীর বুটিক হাউজগুলোও এনেছে নান্দনিক অনেক ধাঁচের শাড়ি। তবে এবারের ঈদে দেশি শাড়ির প্রতি আকর্ষণ বেশি রমনীদের। আর যুগোপযোগী ও রুচিশীল রমনীদের জন্য শাড়িতেও যুক্ত হয়েছে নানা ধরনের আকর্ষণীয় কাজ।
নগরীর বিভিন্ন বিপণী বিতান ঘুরে দেখা গেছে, অন্যান্য পোশাকের দোকানের পাশাপাশি শাড়ির দোকানগুলোতেও ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। এ বছর দেশি ও ভারতীয় বিভিন্ন ধরনের বাহারি রঙের শাড়ির পসরা সাজিয়েছে দোকানিরা। তবে ভারতীয় শাড়ির চেয়ে দেশি শাড়ির প্রতি আকর্ষণ বেশি রমণীদের। আর দেশি শাড়ির মধ্যে সুতি শাড়িই বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতারা। এসব সুতির শাড়িতে রয়েছে বাহারি নকশা। এসব শাড়ির আঁচল এবং পাড়ে বৈচিত্র্য নিয়ে আসছেন ফ্যাশন ডিজাইনাররা। রকমারি শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে-বড় বাজার, শপিং কমপ্লেক্স, বিভিন্ন ব্রান্ডের শো-রুমগুলোতে, নিউ মার্কেট, আড়ং, কে ক্রাফটসহ বিভিন্ন শপিং মলে। এসব আকর্ষণীয় শাড়ির কুচিতেও থাকছে আলাদা ডিজাইন। আবার সুতি শাড়িতে ব্লক প্রিন্ট, বাটিক, স্ক্রিন প্রিন্ট, ভেজিটেবল ডাই, এমব্রয়ডারি করে আনা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ও বৈচিত্র্য। রয়েছে কাঁথা স্টিচ, ফুলেল ও জামদানি প্রিন্ট, কুচি প্রিন্ট, অ্যাপ্লিক, গুজরাটি কাজের মতো বাহারি নকশা। এছাড়া কোঁটা, নেট সুতি এবং চোষা সুতির কিছু শাড়ির প্রতিও আকৃষ্ট রমনীরা। সাধারণ তাঁতের শাড়ি থেকে শুরু করে ডিজাইনার সুতি শাড়ি, টাঙ্গাইল তাঁত, মণিপুরী তাঁত, ব্লক বা বাটিক প্রিন্ট, প্রিন্ট বা জলছাপ, পিওর সিল্ক মসলিন বা হাফ সিল্ক, হাতের কাজ, চেক, জামদানি, কাতান, মসলিন, রাজশাহী সিল্ক, কটন, এন্ডি সিল্ক শাড়িগুলোই বেশি চোখে পড়ছে দোকানগুলোতে। এসব শাড়ি কেনা যাচ্ছে ৬০০ থেকে ২০ হাজার টাকায়। এছাড়া রয়েছে স্মোক শিফনের শাড়ি, ধুপিয়ান কাতান, অপেরা জুট কাতান, গাদোয়ান কাতান, গাদ্দি কাতানের মতো বাহারি ডিজাইনের শাড়ি। এসব দেশীয় কাপড়ের প্রাধান্যের পাশাপাশি বিভিন্ন শপিংমলগুলো শাড়ি কালেকশনে রেখেছে হরেকরকম কাতান, ইন্ডিয়ান সিল্ক, কাঞ্জিভরম, মীনা-কুমারি, হ্যান্ডলুমের শাড়ি। এর মধ্যে কাঞ্জিভরম ও সুতি টাঙ্গাইল শাড়ির চাহিদা বেশি বলে বিক্রেতারা জানান।
নগরীর নিউ মার্কেটে কেনাকাঁটা করতে আসা গৃহবধূ তাসলিমা আক্তার বলেন, ঈদে অন্য পোশাক যাইই কিনি না কেন কমপক্ষে একটা শাড়ি তো কিনতেই হবে। আরামদায়ক শাড়ির মধ্যে সুতিই সেরা। সুতি শাড়ি শুধু ঐতিহ্যবাহীই নয়, ফ্যাশনেবলও বটে।’
নিউমার্কেটের চার্মিং হাউজের স্বত্বাধিকারী তৌহিদ মৃধা বলেন, কেনা বেচা ভালই হচ্ছে। পনেরো রমজানের পর থেকেই আরও বেশী ক্রেতা সমাগম হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
ঈদে ফ্যাশান বৈচিত্র্যে জুতার চাহিদা বাড়ছে : পছন্দের পোশাকের সাথে মানানসই জুতা হবে না তাই কি হয়। তাও আবার ঈদে। সারা বছর জুতার চাহিদা থাকলেও ঈদের জুতার ব্যাপারে সবাই একটু বেশিই সচেতন। জুতা আর পোশাক মানিয়ে পরাকে রুচিশীল ব্যক্তিত্বের প্রকাশ বলে মনে করা হয়। এবারও হালের ফ্যাশন হিসেবে পোশাকের সাথে সাথে ঈদে জুতার বাজারে বাড়তি ভিড়। মোটেও কৃপণতা করছেন না ক্রেতারা। নগরীর দোকানগুলোও ভরে উঠেছে হাল ফ্যাশনের জুতার সম্ভার নিয়ে। রোজার মাঝামাঝিতে এসে জুতার দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে।
নগরীর মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের চাহিদা, পছন্দ আর সাধ্যের কথা মাথায় রেখে হাল ফ্যাশনের দেশি-বিদেশি নান্দনিক ডিজাইনের জুতা তৈরি করেছে উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলো। হাতের নাগালেই যে কোন মার্কেটে পাওয়া যাচ্ছে এসব জুতা। জুতা বাজারের জন্য নিউ মার্কেট, সিমেট্রি রোডের দোকানগুলো, শঙ্খ মার্কেট, বড় বাজার, বিভিন্ন ব্রান্ডের দোকানগুলোই ক্রেতাদের কাছে প্রিয়।
নগরীর সিমেট্রি রোডের প্রায় অর্ধশত দোকান রয়েছে জুতার। এখানে লোট্টো, বাটা, স¤্রাট, এ্যাপেক্স, হ্যামকো, বে, লিবার্টি, ওরিওনসহ অসংখ্য দোকান রয়েছে। রয়েছে শিশু, বৃদ্ধ থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষের পছন্দসই জুতো। এই এলাকা জুতার দোকানের জন্য অনেক আগে থেকেই নগরবাসীর নিকট পরিচিত। এখানকার দোকানগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, ক্রেতাদের এতো ভিড় যে বিক্রেতাদের দম ফেলার সময় নেই। মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের জন্য কেনাকাটায় আরামদায়ক এ মার্কেট। এখানে দেখা গেল স্বদেশ সুজ, রংধনু সুজ, ঝর্ণা সুজ এমন অসংখ্য জুতার দোকান। শুধু ক্রেতা নয়, পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের আনাগোনায় মুখরিত দোকানগুলো।
এছাড়া নিউ মার্কেটে রয়েছে দেশী-বিদেশি জুতার বাহারি সমাহার। ক্রেতাদের ভিড়ও ভীষণ। মঙ্গলবার নগরীর বিভিন্ন জুতার বাজার ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার তরুণরা নানা রঙের কেডস ও ফ্লাট হিলের জুতা বেশি কিনছে।
তবে, তরুণীদের সিøপারসের চাহিদা কিছুটা কমে হাইহিলের দিকে আগ্রহ বেশি দেখা যাচ্ছে। ঈদ শিশুদের কাছেই সবচেয়ে বেশি আনন্দের। তাই ঈদের কেনাকাঁটায় ভালো জুতার প্রতি তাদের আকর্ষণও ব্যাপক। সে দিক থেকে পরিবারের সবাই শিশুদের আনন্দের পরিপূর্ণতা আনতে শিশুর পছন্দসই জুতাই কিনে দেয়। নগরীতে এপেক্স, বাটা, আড়ংসহ সকল শোরুমেই শিশুদের জন্য সাজানো হয়েছে পছন্দের পসরা। এগুলোতে শিশুদের জুতা, স্যান্ডেল বিক্রি হচ্ছে রেকর্ড পরিমাণ। গ্যালারি এপেক্সের শতাধিক শোরুমে শিশুদের স্যান্ডেল বিক্রি হচ্ছে ৩৯০ টাকা থেকে ১২৫০ টাকায়। এপেক্সের নতুন ডিজাইনের জুতার দাম পড়বে ৩২০ থেকে ১২০০ টাকা। আর সাধারণ জুতার শোরুমগুলোতে শিশুদের জুতা ৩০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকায় পাওয়া যাবে। বাটার শোরুমগুলোতে এগুলোর দাম ৩৫০ থেকে এক হাজার ১৫০ টাকার মধ্যে।
মেয়েদের পছন্দের ধরন অনেক বদলেছে সময়ের সঙ্গে। ঈদে মেয়েদের পছন্দের জুতার সঙ্গে সোল ও হিলে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করা হয়েছে। বাজারে এবার বিভিন্ন ধরনের মেটাল ও ট্রান্সপারেন্ট হিলের জুতাই বেশি। বিদেশি পণ্যের পাশাপাশি দেশি স্যান্ডেল ও জুতার প্রতিও তরুণীদের আগ্রহ কম নয়।
জুতা কিনতে আসা বাগমারা এলাকার বাসিন্দা মনিরা খাতুন বলেন, ‘হাই হিলের পাশাপাশি কভারওয়ালা স্যান্ডেলের প্রতি মেয়েদের আগ্রহ বাড়ার কারণ হলো এ ধরনের স্যান্ডেল জুতা যে কোনো ধরনের পোশাকের সঙ্গে ব্যবহার উপযোগী।’
দৌলতপুর বাজারের এ্যাংকর সম্রাটের স্বত্তাধিকারী মো. নুরুল আমিন বলেন, বিক্রি বেশ ভালো। দামি এবং সস্তা সব ধরনের জুতার কালেকশন তার দোকানে রয়েছে। ছেলে ও মেয়েদের রকমারি ডিজাইনের জুতা পাওয়া যাচ্ছে তার দোকানে। একই কথা জানালেন বিভিন্ন দোকানে কর্মরত ইব্রাহিম, আসাদুল ইসলাম, নুরুল হকসহ অনেক বিক্রেতাই।
জমে উঠেছে ঈদ আনন্দ মেলা : নগরীর জিয়া হল প্রাঙ্গনে জমে উঠেছে মাসব্যাপী ঈদ আনন্দ মেলা। বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন খুলনা শাখা আয়োজিত এই মেলা পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরকে সামনে রেখে ইতোমধ্যেই জমে উঠেছে। মেলায় বাহারি পণ্য ছাড়াও রয়েছে শিশুদের বিনোদনের জন্য বিভিন্ন ধরনের রাইডস।
জানা যায়, গত ২৭ মে নগরীর জিয়া হল প্রাঙ্গনে মাসব্যাপী ঈদ আনন্দ মেলার উদ্বোধন করা হয়। পবিত্র ঈদ উল ফিতরকে সামনে রেখে ক্রেতা সাধারণের বিনোদনের জন্য আয়োাজিত এই মেলায় রয়েছে দেশি-বিদেশি ৮০টি স্টল। এ সব স্টলে রয়েছে কসমেটিক্স, ক্রোকারিজ, গার্মেন্টস, জুতা, বোরকাসহ নানা ধরনের পণ্যের স্টল। মেলার শুরুতেই মেয়েদের ভিড় হতে শুরু হয় আর গতকাল দেখা যায় নানা পণ্যের পসরা সাজানো। মেয়েদের ব্যাগ, কসমেটিক্স, ল্যাহেঙ্গা, বোরকা কেনার ধুম পড়ে গেছে। মেলায় ৪ বছরের শিশু কন্যা রোজাকে নিয়ে এসেছেন সুমাইয়া সুমু নামের একজন গৃহিণী। তিনি জানান, ‘ভেবেছিলাম ১৫ রমজান হয়ে পারেনি ভিড় কম হবে তাই আগে ভাগেই মেলা থেকে কেনাকাঁটা করে আসি। কিন্তু এসে দেখি তিল ধারণের ঠাঁই নেই। এবারে বেশ ভাল মানের নতুন নতুন পণ্য এসেছে এবং বাজারের অন্যান্য দোকানের তুলনায় দাম একটু কম।’
মেলার আয়োজক বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন খুলনা শাখার সভাপতি বাপ্পী খান জানান, ‘খুলনাবাসীর বিনোদনের জায়গা একেবারেই সঙ্কীর্ণ। তাদের সাথে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে এসোসিয়েশনের উদ্যোগে এই আয়োজন। মেলায় শিশুদের বিনোদনের বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। রয়েছে দেশি-বিদেশি পণ্যের অসংখ্য স্টল। দাম তুলনামূলক অনেক কম। নগরীর প্রাণকেন্দ্রে নিরাপদ ও উন্মুক্ত পরিবেশে ঈদ আনন্দ মেলা বেশ উপভোগ করছে সাধারণ মানুষ।’

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ