রমযানের পর হিসাব-নিকাশ এবং মেরুকরণ
আশিকুল হামিদ : সংবাদপত্র তথা গণমাধ্যমের জগতে সেন্সরশিপ বলে বহুল আলোচিত এবং নিন্দিত একটা কথা আছে। সহজ বাংলায় একে নিষেধাজ্ঞা বলা যায়। সাধারণত কোনো বিশেষ দলের বা বিশেষ ধরনের খবর প্রকাশ না করার জন্য এই নিষেধাজ্ঞা সরকারের পক্ষ থেকে আরোপ করা হয়। এটা হয়ে আসছে পাকিস্তান আমল থেকে। বিগত কয়েক বছরে সরকারের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মালিকদের নিষেধাজ্ঞাও।
সব মিলিয়ে বিষয়টি বেশ কৌতূহলোদ্দীপক হয়ে উঠেছে। কোনো বিশেষ বিষয়ে সরকার প্রথমে অ্যাডভাইস বা পরামর্শের আড়ালে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। একে অজুহাত বানিয়ে মালিক পক্ষ সংবাদিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছেন। এভাবে চলতে চলতে ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত সাংবাদিকদের অনেকে আবার নিজেরাই নিজেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে শুরু করেছেন। বলছেন, এটা নাকি স্ব-আরোপিত নিষেধাজ্ঞা! এর ফলে বহু বিষয়ে জানলেও ওই সাংবাদিকরা লিখছেন না। টেলিভিশনেও রিপোর্ট হচ্ছে না। ফলে হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে বহু ইন্টারেস্টিং ইস্যু ও খবর। জানার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন পাঠক-দর্শকরাও।
শুরুতে এত কথা বলার কারণ জানানো যাক। পাঠকরা সম্ভবত লক্ষ্য করেছেন, আজকাল আর আগের মতো রাজনীতি নিয়ে লিখি না। পাঠকদের কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে না লেখার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাও করেন। আমি সুকৌশলে উত্তর এড়িয়ে যাই। কখনো কখনো দৈনিক সংগ্রাম কর্তৃপক্ষের দিকে আঙুল ওঠাই। বলি, তাদের জিজ্ঞাসা করে দেখুন। এর পরে ঠিক কি ঘটে সে সম্পর্কে আমাকে অবশ্য কেউ জানান না। তবে কথা যখন উঠেছেই তখন সংক্ষেপে জানিয়ে রাখি, রাজনীতি নিয়ে না লেখার কারণ জানানো যাবে সম্ভবত আরো বছর খানেক পর। সবকিছু যদি বিশেষ কিছু গোষ্ঠীর পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটতে থাকে তাহলে তার আগেও জানানোর সুযোগ এসে যেতে পারে!
কথাটার মধ্যে পাঠকরা সম্ভবত রহস্যের গন্ধ পেয়েছেন। সেটাই স্বাভাবিক। আর সর্বশেষ উপলক্ষে এর কারণ তৈরি করেছেন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীÑ যাকে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অসম্মানজনকভাবে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল বলে প্রচারণা রয়েছে। আরো কিছু বিষয়েও একই বি চৌধুরীকে নিয়ে গুজব ও প্রচারণার কথা শোনা যায়। যেমন, ১৯৮১ সালের ৩০ মে মুক্তিযোদ্ধা ও প্রথম নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউর রহমানকে যখন অভ্যুত্থানের নামে হত্যা করা হয় তখন চট্টগ্রামের একই সার্কিট হাউজে ডা. বি চৌধুরীও ছিলেন। কিন্তু তার শরীরে কোনো বুলেটের টোকা পর্যন্ত লাগেনি। অথচ ক্ষমতাসীন দল বিএনপির মহাসচিব এবং একাধিকবারের মন্ত্রী হিসেবে তার বিরুদ্ধে সকল মহলেই তখন অনেক ক্ষোভ ছিল।
সে অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীই সম্প্রতি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন এক বিষয়কে প্রাধান্যে এনেছেন। রমযানের শুরুর দিকে বিএনপি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের জন্য ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছিল। ওই মাহফিলে দেয়া বক্তৃতায় বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানানোর ধারে-কাছে না গিয়ে বি চৌধুরী বলেছেন, বিএনপি এবং আওয়ামী লীগসহ সব দলের সক্রিয় নেতা-কর্মীরাই নাকি তার কাছে গিয়ে নিজেদের ভয়ের কথা শোনান। নির্বাচন হলে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, দেশে নাকি রক্তের বন্যা বইবে। রাস্তায় নাকি লাশের পাহাড় জমবে। অমন ভয় ও আশংকার কারণেই বি চৌধুরী মনে করেন, নির্বাচন কিংবা নির্বাচিত সরকারের চাইতেও দেশে একটি সর্বদলীয় তথা ঐকমত্যের সরকার বেশি দরকার। কথাটার মধ্য দিয়ে বি চৌধুরী যা কিছুই বুঝিয়ে থাকুন না কেন, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা কিন্তু এর অন্য রকম অর্থ করেছেন। অনেকে এমনকি সাবেক রাষ্ট্রপতি হলেও বি চৌধুরী এখন আওয়ামী লীগের অধীনে মন্ত্রিত্ব চাচ্ছেন বলেও ব্যঙ্গ-তামাশা করেছেন।
পর্যবেক্ষকদেরই অন্য একটি গ্রুপ আবার বি চৌধুরীর মধ্যে আওয়ামী লীগের আরেক ‘সেভিয়ার’কে আবিষ্কার করেছেনÑ যে ‘সেভিয়ার’-এর ভূমিকা একবার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পালন করেছিলেন। এটা অবশ্য ২০০৬ থেকে ২০০৮ সালের সময়কার কথা। পাঠকদেরও মনে পড়তে পারে, ২০০৮-এর নির্বাচন পরবর্তী বহু উপলক্ষেই এরশাদ জানিয়েছিলেন, লন্ডনের সমঝোতা অনুযায়ী আওয়ামী লীগ তাকে প্রেসিডেন্ট না করায় ‘তার মনে অনেক দুঃখ’। স্মরণ করা দরকার, জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে নির্বাচনী সমঝোতা হয়েছিল ২০০৮ সালের জুলাই মাসে। ঘটনাস্থল ছিল লন্ডন। এ ব্যাপারে এরশাদ নিজেই ঘোষণা দিয়েছিলেন লন্ডন থেকে ফিরে আসার পর। সে সময় গুঞ্জনে শোনা গিয়েছিল, শেখ হাসিনার সঙ্গে লন্ডনে এরশাদের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে শেখ রেহানা ও শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ছাড়াও জাতীয় পার্টির তখনকার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন বাবলু উপস্থিত ছিলেন। সেবার ঢাকায় ফিরে এরশাদ বলেছিলেন, শেখ হাসিনাকে তিনি ‘বোন’ ডেকেছেন। এরশাদ আরো বলেছিলেন, জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোটে ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। এরশাদ একই সঙ্গে ঘোষণা করেছিলেন, মহাজোট বিজয়ী হলে তিনিই দেশের প্রেসিডেন্ট হবেন। সবাইকে চমকে দিয়ে এরশাদ তখন আরো বলেছিলেন, এ শুধু তার ইচ্ছা নয়, শেখ হাসিনাও তাকে প্রেসিডেন্ট পদে মেনে নিতে রাজি হয়েছেন। প্রেসিডেন্ট বানানোর শর্তেই জাতীয় পার্টি মহাজোটে থাকবে বলেও ঘোষণা দিয়েছিলেন এরশাদ। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হাসতে হাসতে এরশাদ বলেছিলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হতে ‘প্রস্তুত’ আছেন!
কিন্তু সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে গিয়েছিল নির্বাচনের পর। আরেক বৃদ্ধ এবং প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা জিল্লুর রহমানের কাছে হেরে গিয়েছিলেন এরশাদ। তিনি আর প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি। সেই থেকে কথা উঠলেই নিজের মনের দুঃখের কথা শোনাতেন এরশাদ। কে জানে, এই দুঃখের কারণেই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে যাওয়া বা না যাওয়া নিয়ে তিনি নাটক করেছিলেন কি না। এখনো বলা হয়, নসিয়তের আড়ালে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং-এর ধমকের কারণেই এরশাদকে নাকি সেবার নির্বাচনে যেতে হয়েছিল। সাজানো অসুখের চিকিৎসার জন্য কম্বাইন্ড মিলিটারি হসপিটালÑ সিএমএইচে ভর্তি হয়েও সুজাতা-ধমকের দুর্নাম কাটিয়ে উঠতে পারেননি তিনি। এরশাদ অবশ্য সুযোগ পেলেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুনিয়ে এসেছেন, এত বিপুল মেজরিটির ফল নাকি মন্দও হতে পারে। কে জানে, তেমন কোনো মন্দের ব্যাপারে আগে-ভাগে জেনে গেছেন বলেই তিনি বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের বাইরে চলে আসার এবং নাম সর্বস্ব কিছু দলকে নিয়ে জোট গঠন করার পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন। অন্তত মুখের কথায় আওয়ামী লীগকে ছেড়ে দেন।
বলা হচ্ছে, এরশাদ বর্ণিত মন্দ নাকি যে কোনোভাবেই ঘটতে পারে। প্রসঙ্গক্রমে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদন্ড দেয়া থেকে একের পর এক মামলায় তার জামিন স্থগিত করার মতো বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে অনেকটা হঠাৎ করে বি চৌধুরী রক্তের বন্যা এবং লাশের পাহাড়ের ভয় দেখিয়েছেন। বলেছেন, নির্বাচন বা নির্বাচিত সরকার নয়, ঐকমত্যের বা যে নামেরই হোক, অন্য রকম সরকারই নাকি সমাধান। বলা হচ্ছে, পর্দার অন্তরালে এমন অনেক কিছুই হয়তো ঘটে চলেছে, যার ভিত্তিতে বি চৌধুরী হঠাৎ অন্য রকম সরকারের প্রেসক্রিপশন হাজির করেছেন। তিন-তিনবারের প্রধানমন্ত্রী এবং দু’বারের বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে সরকার যে কার্যক্রম চালাচ্ছে সেটাও বি চৌধুরী বর্ণিত সম্ভাব্য পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রাখতে পারে। বেশি খোঁজ-খবর যারা রাখেন তারা আবার এরশাদের সুরে সরকারকে সতর্ক হওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন। বলেছেন, কোথায় দিয়ে কারা কিভাবে কি করে বসবেন তা নাকি প্রধানমন্ত্রী নিজেও বুঝে উঠতে পারবেন না! কারণ, বি চৌধুরীরা নাকি ‘গভীর জলের মাছ’! বড় কথা, বি চৌধুরী আবার একাও ‘মুভ’ করছেন না। তার সঙ্গে এমন কয়েকজনও রয়েছেন, এই মুহূর্তের রাজনীতিতে কোনো গুরুত্ব না থাকলেও ‘অঘটন’ ঘটানোর বিষয়ে যাদের বিশেষ দক্ষতা ও যোগ্যতা রয়েছে বলে শোনা যায়!
লিখবো না বলে শুরু করলেও রাজনীতি নিয়ে একটু বেশিই লেখা হয়ে গেলো। কিন্তু আজ এ পর্যন্তই। কারণ, আদার ব্যাপারীর জাহাজের খোঁজ-খবর না করাই ভালো। এখানে বরং দেশের বাস্তব দু-একটি বিষয়ে কিছু বলা যাক। রাজনীতির মতো চমকপ্রদ না হলেও নিত্যপণ্যের দাম এরকম একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পবিত্র রমযান শুরু হওয়ার আগেই বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর ব্যাপারে এবছরও ব্যবসায়ী-মহাজনরা তৎপর হয়ে উঠেছে। প্রকৃতপক্ষে রমযানের শুরু থেকেই মূল্য পরিস্থিতি মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের রিপোর্টে জানানো হয়েছে, একের পর এক পণ্যের দাম বাড়িয়ে চলেছে ব্যবসায়ী-মহাজনরা। পেঁয়াজ-রসুন ও ডাল থেকে বিভিন্ন ধরনের সবজি পর্যন্ত তো বটেই, চিনি, লবণ ও সয়াবিনসহ নিত্যপণ্যের সবকিছুরই দাম বেড়ে গেছে। ভারতীয় রসুনের মতো কোনো কোনো পণ্যের দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৩০/৫০ টাকা পর্যন্তও। পেঁয়াজ রসুন থেকে কাঁচা মরিচ পর্যন্ত সব পণ্যের দামই বেড়ে চলেছে লাফিয়ে লাফিয়ে। মুগ এবং মাসকালাইসহ দেশি ও ভারতীয় সব ডালের দামও প্রতি কেজিতে ১৫/২৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। জিরা, দারুচিনি, শুকনো মরিচ, লবঙ্গ, এলাচের মতো অন্য পণ্যগুলোরও দাম বেড়ে গেছে- যেগুলো রমযানে বেশি দরকার পড়ে। আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, মার্কিন ডলারের দাম হঠাৎ পাঁচ-ছয় টাকার বেশি বেড়ে যাওয়ায় ছোলাসহ বিভিন্ন পণ্যের দামে সরাসরি প্রভাব পড়েছে। ফলে এবারের রমযানে মানুষকে সব পণ্যই অনেক বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, এবারের রমযানেও সব মিলিয়ে বাজার পরিস্থিতি অত্যন্ত ভীতিকর হয়ে পড়েছে। নাম ধরে ধরে কোনো সবজির দাম পৃথকভাবে উল্লেখ না করেও বলা যায়, প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়ে চলেছে বেশ কিছুদিন ধরেই। তা সত্ত্বেও মানুষকে বাজারে যেতে হচ্ছে। রমযান বলে তো যেতে হবেই। কারণ, স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি রমযানে রয়েছে ইফতারি ও সাহরি খাওয়ার বাড়তি বিষয়। সুতরাং বেশি দাম দেয়ার সাধ্য না থাকলেও বাজারে না গিয়ে পারছে না মানুষ। অতীতে সব সময়, এমনকি গতবারের রমযানেও একই অবস্থা দেখা গেছে। সেজন্য সঙ্গত কারণে প্রশ্ন উঠেছে, দেশে আদৌ কোনো সরকার রয়েছে কি না। কারণ, কোনো পণ্যের দামই রাতারাতি বা কেবলই রমযান মাসকে সামনে রেখে বাড়ায়নি ব্যবসায়ী-মহাজনরা। দাম বেড়ে আসছে বহুদিন ধরেই। কিন্তু কোনো পর্যায়ে, কোনো বছরই ধমক দেয়ার এবং লম্বা আশ্বাস শোনানোর বাইরে মূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার ফলপ্রসূ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এবারও ব্যতিক্রম ঘটার কোনো সম্ভাবনা দেখা যায়নি, দেখা যাচ্ছেও না। বাজার সংশ্লিষ্টরা বরং বলেছেন, রমযান আসার এবং পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার পর মন্ত্রীরা বড়জোর ব্যবসায়ী-মহাজনদের ভয় দেখানোর অভিনয় করেন। শুনিয়ে থাকেন, বাজারের ব্যাপারে ‘কঠোর নজরদারি’ করা হচ্ছে। ক্ষেত্র বিশেষে ‘অসৎ ব্যবসায়ীদের’ ওপর দোষ চাপাতেও পিছিয়ে থাকছেন না মন্ত্রীরা।
অন্যদিকে ব্যবসায়ী-মহাজনরা যে কোনো ধমককেই পাত্তা দেয় না, দিচ্ছেও না- সে কথাটাও আগেভাগেই বোঝা গেছে। কারণ, সরকার যা কিছুই বোঝাতে চাক না কেন, ভুক্তভোগী মানুষ কিন্তু ঠিকই জানে, তারা বুঝতেও পারে- এই ব্যবসায়ী-মহাজনদের সঙ্গে মন্ত্রীদের তথা সরকারের অতি চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। সে কারণেই সরকারের কোনো কথায় কান দেয়ার দরকার বোধ করে না তারা। আর এই অতি চমৎকার সম্পর্কের পেছনে যে চাঁদা ও কমিশন ধরনের কিছু ফ্যাক্টর বা নির্ধারক যে রয়েছে সে কথাটাও আজকাল আর কাউকে বুঝিয়ে বলতে হয় না। এ ব্যাপারেও মানুষের অভিজ্ঞতা মোটেই মধুর নয় বরং তিক্ত। নাহলে কথিত ‘কঠোর নজরদারি’ সত্ত্বেও প্রতি বছরই রমযানের প্রাক্কালে এবং রমযান জুড়ে নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে পারতো না। বলা বাহুল্য, চাঁদা ও কমিশনসহ সহজবোধ্য কিছু কারণে সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয় না বলে ব্যবসায়ী-মহাজনরাও সুযোগের সদ্ব্যবহার করে যথেচ্ছভাবে। এবারও করতে শুরু করেছে রমযানের আগে থেকেই। একই কারণে দামও চলে গেছে মানুষের নাগালের অনেক বাইরে। সব কিছুর পেছনে রয়েছে সরকারের প্রশ্রয়। অতীতেও একই কারণে মানুষকে কষ্ট ও ভোগান্তির কবলে পড়তে হয়েছে। সাধারণ মানুষের তো বটেই, নাভিশ্বাস উঠেছে এমনকি মধ্যবিত্ত ও উচ্চ বিত্তের মানুষদেরও।
বলার অপেক্ষা রাখে না, অসৎ ও মুনাফাখোর টাউট ব্যবসায়ী-মহাজনদের প্রশ্রয় ও সহযোগিতা দেয়ার পরিবর্তে সরকারের উচিত কঠোরতার সঙ্গে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা ও পণ্যের মূল্য কমিয়ে আনা। চিনি ও ছোলার মতো জরুরি কিছু পণ্য বিক্রির ব্যাপারে সরকারকে অবশ্যই ওএমএস ধরনের বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। মনিটরিং করে দাম বাড়ানোর অপতৎপরতাকে প্রতিহত না করা গেলে পণ্যের দাম আরো বাড়তেই থাকবে। সরকার যতোই ‘কঠোর নজরদারি’র প্রশ্নসাপেক্ষ পদক্ষেপ নিক না কেন, রমযানে মানুষ কোনো সুফলই ভোগ করতে পারবে নাÑ যেমনটি ১৭ রমযান পেরিয়ে যাওয়া পর্যন্তও পারেনি। মানুষকে বরং সীমাহীন কষ্টের শিকার হতে হচ্ছে। এই কষ্ট চলবে রমযানের শেষ পর্যন্তও। এরপরই সম্ভবত ডা. বি চৌধুরীর কথাগুলো নিয়ে নতুন পর্যায়ে আলোচনা শুরু হবে। শুরু হবে নানা রকমের হিসাব-নিকাশ এবং মেরুকরণও। ওদিকে তখন কিন্তু সংসদ নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসবে। শুরু হয়ে যাবে বিশেষ পরিণতির অভিমুখীন তৎপরতাও।