শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

টানা ৯বারের মতো বাজেট বাস্তবায়নে সরকার ব্যর্থ

মুহাম্মাদ আখতারুজ্জামান: দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগের ক্ষমতার দশ বছর পূর্ণ হতে চলেছে। ঘোষণা করা হয়েছে সরকারের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের দশম বাজেট। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। এবারও বিশাল বাজেট অতিতের সব রেকর্ড ভেঙ্গেছে। সরকার বিশাল বাজেটের চমক দিলেও কোনো বছরই বাস্তবায়ন করতে পারছে না। বিগত অর্থবছরগুলোর ন্যায় সদ্য বিদায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরেও বাস্তবায়ন না করতে পারায় কমানো হয়েছে বাজেটের আকার। এ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে তিন লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা। মূল বাজেট থেকে কাঁটছাট করা হয়েছে ২৮ হাজার ৭৭১ কোটি টাকা। দশম বাজেট বাস্তবায়ন হবে কি-না তার জন্য এক বছর অপেক্ষা করতে হবে। এবং তা বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। কেননা বাজেট বাস্তবায়ন করতে টানা নবম বারের মতো ব্যর্থ হলো বর্তমান সরকার। 

কোনো বছরই বাজেট বাস্তবায়নে সফলতা আসছে না। তারপরও থেমে নেই উচ্চভিলাসী বাজেট পেশের। বাস্তবায়ন যাই হোক বিশাল বাজেট দিতে হবে এমনটাই যেন রীতিতে পরিণত হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা প্রত্যেক বছর বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট দেয়ার দাবি করে আসলেও কোনো কথার পাত্তা না দিয়ে সরকার একের পর এক বাজেটের আকার বাড়িয়ে চলেছে। ফলে সরকারের বাস্তবায়নহীন এ বাজেটকে অর্থহীন বলছেন বিশেষজ্ঞরা। বাজেটকে জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য না করাতে পারলে দীর্ঘ মেয়াদে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে মন্তব্য তাদের।

বাজেটের আকার বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আর এটা ছিল তার আগের অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট থেকে প্রায় ৮৩ হাজার কোটি টাকা বেশি। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে সে রেকর্ডও ভেঙ্গে গেলো। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে এর পরিমান ৯৩ হাজার ৭৮ কোটি টাকা বেশি।

এর আগে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে বাজেটের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। অর্থবছরের শেষ এসে সরকার বুঝতে পারে যে এ বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভম নয়। ফলে সংশোধনের পথে হাটে সরকার। মূল বাজেট থেকে কাঁটছাট করা হয় ২৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। এতে সংশোধিত বাজেটে মোট বরাদ্দ দাঁড়ায় ৩ লাখ ১৭ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা। 

২০১৫-১৬ অর্থবছরে জন্য ২ লাখ ৯৫ হাজার ১শ’ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করে সরকার। এ বছরও বাজেট বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয় সরকার। বছরের শেষে এসে বাজেটে ছুরি চালানো হয়। কমিয়ে আনা হয় বাজেটের পরিমান। এ অর্থবছরের বাজেটে ৩০ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা কমানো হয়। ফলে সংশোধিত বাজেটে মোট বরাদ্দের পরিমান দাঁড়ায় ২ লাখ ৬৪ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা। 

২০১৪-১৫ অর্থবছরে পাস হওয়া বাজেটের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। বাজেটে আয় ধরা হয় ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। আর ঘাটতি ধরা হয় ৬১ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত আয় ধরা হয় ১ লাখ ৫৫ হাজার ২৯২ কোটি টাকা। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে বাজেট কাটছাঁটের পরিমাণ ছিল ২১ হাজার কোটি টাকা।

২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশের ইতিহাসে প্রথম দুই লাখ কোটি টাকার বেশি বাজেট ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ সরকার। সেবার আগের অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে ২৭ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে দুই লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়। ওই বাজেটের মধ্যে এক লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়। সে হিসাবে অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়ন হয় বাজেটের ৮৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

২০১২-১৩ অর্থবছরে এক লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়। তাতে আগের অর্থবছরের চেয়ে ২৫ হাজার ৪১১ কোটি টাকার বাজেট বাড়ানো হয়। এর মধ্যে ব্যয় হয় এক লাখ ৭৪ হাজার কোটি টাকা। আর অর্থবছরে মূল বাজেটের ৯০ দশমিক ৭৬ শতাংশ বাজেট বাস্তবায়ন হয়।

২০১১-১২ অর্থবছরে আরও ৩১ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা বৃদ্ধি করে এক লাখ ৬৩ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়, যার মধ্যে ব্যয় হয় এক লাখ ৫২ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এ অর্থবছরে বাজেটের ৯৩ দশমিক ১৮ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়।

২০১০-১১ অর্থবছরে ১৮ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা বাড়িয়ে এক লাখ ৩২ হাজার ১৭০ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়। অর্থবছর শেষে বাজেট বাস্তবায়ন হয় ৯৭ দশমিক ০৬ শতাংশ। ওই অর্থবছরের বাজেটে প্রকৃত ব্যয় হয় এক লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসায় পর অর্থমন্ত্রী হন আবুল মাল আবদুল মুহিত। ২০০৯-১০ অর্থবছরে তাঁর ঘোষিত বাজেট ছিল এক লাখ ১৩ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১০-১১ অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়ন হয় ৯৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। ২০১১-১২ অর্থবছর বাস্তবায়ন হয় বাজেটের ৯৩ দশমিক ১৮ শতাংশ। ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়ন হয় মূল বাজেটের ৯০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাস্তবায়ন হয় বাজেটের ৮৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাস্তবায়ন হয় বাজেটের ৮১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছর বাস্তবায়ন হয়েছে মূল বাজেটের ৭৮ দশমিক ৫০ শতাংশ। 

বাজেট যত বাড়ছে বাস্তবায়নের হার ততো কমছে। এটা দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো লক্ষণ নয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, সরকারের উচিত উচ্চবিলাসী বাজেট না দিয়ে বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট দেয়া। 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ