শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

চলতি বছর উৎপাদন শুরু ॥ টার্গেট ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ

মাহমুদুল হাসান: বঙ্গোপসাগরের কাছাকাছি ফেনী নদীর মোহনায় সোনাগাজীর বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে এক হাজার একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প। ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানী অব বাংলাদেশ লিঃ (বিদ্যুৎ বিভাগের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান)  একটি সরকারী প্রতিষ্ঠান যার মাধ্যমে সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়া ইউনিয়নের চর পূর্ব বড়ধলী মৌজায় এক হাজার একর জায়গার উপর এ বিদ্যুৎ প্রকল্প প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ  বিভাগের অধিনস্থ পাওয়ার সেল এর তত্বাবধানে ও বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় উক্ত স্থানে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই (ফিজিবিলিটি স্টাডি) করার জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কনসালটেন্ট নিয়োগের টেন্ডার হয়েছে। 

পর্যায়ক্রমে এর পরিধি আরো বাড়বে বলে কোম্পানীর লোকজন জানিয়েছেন। সূত্রে জানাগেছে প্রাথমিক পর্যায়ে এ সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প হতে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এবং বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প হতে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ  সহ মোট ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে যা দেশের জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রীডে যোগ হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক জমির সর্ব্বোচ্চ ব্যবহারের লক্ষ্যে সোলার প্যানেলের নিচে উপকূলীয় প্রজাতির মৎস্য চাষের পরিকল্পনা আছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এটি এশিয়া মহাদেশের তথা আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে সর্বপ্রথম অনন্য প্রকল্প হিসাবে বিবেচিত হবে। ২০১৬ জুলাই মাসে বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সচিব মনোয়ারুল ইসলাম উক্ত বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকা সরেজমিনে এসে পরিদর্শন করেন। এ সময় তাঁর সাথে ছিলেন ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানী অব বাংলাদেশ লিঃ এর এমডি, এটিএম জহিরুল ইসলাম মজুমদার, নির্বাহী পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) এ এম মনসুর উল আলম, প্রকল্প পরিচালক ড. কাজী মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, প্ল্যানিং ও ডেভেলপমেন্ট সেকশনের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ইব্রাহীম মুহাম্মদ শাফী আল মোহতাদ, নির্বাহী প্রকোশলী মোঃ  সাইফুর রহমান, পিডিপির প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট এর সদস্য মোহাম্মদ আবুল বাশার, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লা ও ফেনী জোনের প্রধান প্রকৌশলী, ফেনী জেলা প্রশাসনের এল এ শাখার সার্ভেয়ার মোঃ মিজানুর রহমান সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরিফা হক, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিদর্শী সম্বৌধী চাকমা, সার্ভেয়ার কবির হোসেন, তহশিলদার মোঃ ইলিয়াছ, এলএ শাখার চেইন মেন মৃত্যুঞ্জয় কুমার দাস লিটন প্রমুখ। 

সোলার ও বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে এসে বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ারুল ইসলাম তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে উপস্থিত লোকজন সহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, পৃথিবীর বহু দেশ ভ্রমন করে এরকম বিদ্যুৎ উন্নয় প্রকল্প দেখার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু আমার দেশের সাগরের কাছাকাছি আবারিত সম্ভাবনাময় প্রকল্প উপযোগী আর কোন স্থান চোখে পড়েনি। প্রকল্পের কাজটি যাতে দ্রুততম সময়ে শুরু করা যায় এতদ্বিষয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট কোম্পানীর কর্মকর্তা ও প্রশাসনের লোকদেরকে মৌখিকভাবে নির্দেশনা প্রদান করেন। প্রকল্পের প্রজেক্ট ডিরেক্টও ড. কাজী মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর জানান, এই বিদ্যুৎ প্রকল্পটি  বাংলাদেশের “প্রথম হাইব্রিড” যা এশিয়া মহাদেশের ও আন্তর্জাতিক পরিসরেও একটি মডেল হিসাবে গন্য হবে। প্রকল্প এলাকায় প্রথম পর্যায়ে ১০০০ একর ভূমি অধিগ্রহন করা হয়েছে। পর্যাক্রমে এর পরিধি আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।  তিনি আরো বলেন, এ বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পটি সম্পূর্ণ পরিবেশ বান্ধব। এখানে প্রতিনিয়ত সাগরের দিক হতে বাতাস প্রবাহিত হয় আর সূর্যের রশ্মিও তীক্ষতা বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চল হতে কিছুটা বেশী। প্রকল্পটি যাতে সফলভাবে বাস্তবায়ন করা যায় এ জন্য আমরা আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরেজমিনে প্রকল্প এলাকার বাতাসের গতি এবং সূর্যের আলোর তীক্ষ্মতা পর্যবেক্ষণ করা হবে। অপর দিকে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহারের লক্ষ্যে প্রকল্প এলাকায় সোলার প্যানেলের নিচে মাছ চাষের প্রকল্পও হাতে নেয়া হবে যার মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হবে। 

চলতি বছর  বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প হতে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। 

ইজিসিবি এর প্রকল্প পরিচালক ড. কাজী মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রকল্পের পক্ষ হতে ভূমি অধিগ্রহণ খাতে প্রায় ১০০ কোটি ৩২ লাখ টাকা ফেনী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পরিশোধ করা হয়েছে। 

২০১৭ সালের জুলাই মাসে প্রকল্প এলাকায় বেড়ী বাঁধের উপর ভূমি অধিগ্রহণ কালে ক্ষতিগ্রস্ত ভূমির মালিকদের মাঝে আনুষ্ঠানিক ভাবে ভূমির ক্ষতিপূরণ টাকার চেক বিতরণ ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। ফেনী জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কুল প্রদীপ চাকমার সঞ্চালনায় এবং জেলা প্রশাসক মনোজ কুমার রায় এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত চেক বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে চেক বিতরণ করেন বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত সচিব ও ইজিসিবি লিঃ এব ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএম মনসুর উল আলম, প্রকল্প পরিচালক ড. কাজী মোঃ হুমায়ুন কবির। অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী কাওছার ফিরোজ, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ইব্রাহীম আহমদ শাফি আল মোহতাদ, নির্বাহী প্রকোশলী ইঞ্জিঃ ইলিয়াছ হোসেন, সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মিনহাজুর রহমান সহ উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা।

চেক বিতরণ অনুষ্ঠান ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জালানী মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, সরকারের সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হচ্ছে বিদ্যুৎ খাত। জীবনকে পরিবর্তন করবে উন্নত প্রযুক্তি আর সে জিনিসটাই হচ্ছে সোলার সিস্টেম। এ প্রযুক্তি বিশ্বেও জন্য একটি মডেল। স্বল্প সময়ের মধ্যে এ বিদ্যুৎ  প্রকল্পের টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু হবে। 

আমরা এটাও আশা করছি যে, প্রকল্প এলাকায় পুরোদমে কার্যাক্রম শুরু হলে সোনাগাজীর চেহারা পরিবর্তন হয়ে যাবে। এ দিকে প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট কোম্পানীর লোকজন জানায়, বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ইজিসিবি লিঃ এর আওতায় সোনাগাজীর এ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ প্রকল্পটি বাংলাদেশের প্রথম হাইব্রিড প্রজেক্ট। যা এশিয়া মহাদেশেরও আন্তর্জাতিক পরিসরে একটি মডেল হিসেবে গণ্য হবে। তাদের মতে দেশে দিন দিন শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠার প্রতিনিয়ত বিদ্যুৎ সমস্যাটি দেশের প্রধান সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জালানি হতে এ বিশাল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়ন হলে আমদানিকৃত জালানীর উপর ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশের নির্ভরশীলতা কমে আসবে ও বিদ্যুৎ উৎপাদন সমস্যার অনেকটাই সমাধান হবে বলে মনে করেন।

প্রকল্পের প্রজেক্ট ডিরেক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, প্রকল্প এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েগেছে। প্রকল্প এলাকার ভূমিতে ১৭০৪টি সীমানা পিলার স্থাপন করা হয়েছে। মূল প্রজেক্টের জন্য বিশ্ব ব্যাংক এর সাথে ঋন প্রদানে সম্মতি প্রদান করা হয়েছে। 

এ ঋন পাওয়া গেলে প্রথম দাপে ৫০ মেগাওয়াটের সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান করা হবে। সাথে সাথে বেড়ি বাঁধের ভেতরে অফিসিয়াল অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। তিনি আরও জানান এ প্রজেক্ট থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরাসরি জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রীডে যোগ হবে এবং আর একটি বিশেষ লাইন যোগে মীরশরাই শিল্প জোনে বিদ্যুৎ সাপ্লাই দেয়া হবে।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, প্রকল্প এলাকাটি সাগাগরের কাছাকাছি হওয়ায় প্রাকৃতিক দূর্যোগ ছাড়াও জলোচ্ছাসের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

তাই প্রকল্প এলাকার বাহিরে যত সম্ভব আউটার বেড়ীবাঁধ নির্মান অত্যন্ত জরুরী।

অভিজ্ঞ মহলের মতে দেশে দিন দিন শিল্প কলকারখান গড়ে উঠায় পতিনিয়ত বিদ্যুৎ সমস্যাটি দেশের প্রধান সমস্যা হিসেবে দাঁডিয়েছে। বর্তমানে নবায়ন যোগ্য জ্বালানি হতে এ বিশাল বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়ন হলে আমদানিকৃত জ্বালানীর উপর ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশের নির্ভরশীলতা কমে আসবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ