বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

বাজেটের প্রভাব সিগারেট ও নন ব্রান্ডেড মোবাইলে

খুলনা অফিস : বাজেট ঘোষণার দুই দিনের মাথায় চালের বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। পুনরায় ২৮ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণার সাথে সাথে দাম বেড়েছে সব ধরনের চালে। পাইকারীরা ইতোমধ্যে কৃত্তিম সংকট সৃষ্টির অভিযোগ করছে খুচরা চাল ব্যবসায়ীরা। আর এই সুযোগে ঈদের আগে এবং পরে আবারও চরম অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে পারে চালের বাজারে এমন আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্টরা। এদিকে এবারের বাজেটে নতুন করারোপ ঘোষণায় দাম বেড়েছে সিগারেট ও  মোবাইলে। ফলে বাজারেও পড়েছে বাজেটের প্রভাব।
খুলনার খুচরা চালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজেট ঘোষণার একদিনের মাথায় প্রতি চালের দাম কেজি প্রতি বেছে ২-৪ টাকা পর্যন্ত। আমদানি করা স্বর্ণা মোটা (চাল) একদিন আগে ৪০ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল তা ৪৩ টাকা বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন ধরনের মিনিকেট-এর খুচরা মুল্য ৫২ থেকে ৫৮ টাকার মিনিকেট প্রত্যেকটিতে কেজি প্রতি ১ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের বালাম ৪৫ টাকা থেকে ৪৮ টাকার চাল বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায়।
নিউ মার্কেটের খুচরা ব্যবসায়ী আহমদ বলেন, আমদানি চালের শুল্ক বাড়ছে এমন ঘোষণায় পাইকাররা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে আশঙ্কার জায়গা সৃষ্টি হয়েছে ঈদের আগেই কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি হতে পারে চালের বাজারে পাইকাররা এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে তিনি জানান। আমদানি করা চালের দাম বাড়লে সব ধরনের চালেই এর প্রভাব পড়বে বলে তিনি জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভারত চাল রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে এমন গুজবে গত বছরের শুরুর দিকে সব ধরনের চালে কেজি প্রতি ৮-১০ টাকা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া দেশি চালের ফলন না হওয়ায় তা আরও বাড়তে থাকে। চালের বাজার স্থিতিশীল করতে গত বছরের ২১ জুন আমদানি চালের শুল্ক প্রথমে ১৮ শতাংশ কমিয়ে ১০ শতাংশ পড়ে ১৮ আগস্ট আরও ৮ শতাংশ কমিয়ে মাত্র ২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। এর পরে আমদানি করা চালের মূল্য কিছুটা কমলেও আগের দামে ফিরে আসেনি। এর মধ্যে আবার ২৮ শতাংশ শুল্ক আরোপ চালের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে এমন আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
এদিকে বাজেটে নতুন করে করারোপ প্রস্তাবের পণ্যের তালিকায় তেমন কোন নিত্যপণ্য না থাকলেও মোবাইলসহ ইউপিএস, আইপিএস, ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজারসহ বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস রয়েছে। রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী, সিরামিক সামগ্রী, মধু, টুইনগামসহ বিভিন্ন ধরনের চকলেট জাতীয় খাদ্যের নতুন করে শুল্ক আরোপের প্রস্তাব এসেছে। এছাড়া এসেছে বরাবরের মত তামাকজাত পণ্যের শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব। নগরীর মোবাইল ও ইলেকট্রনিক্স বাজারগুলোতে দেখা যায় শুল্ক বৃদ্ধির খবরে মোবাইল ব্যবসায়ীরা নন ব্রান্ডেড প্রতিটি মোবাইলে মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। দাম বেড়েছে পান ও সব ধরণের সিগারেটেও।
নগরীর সিগাটের দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, একদিনের মাথায় সব ধরনের সিগারেটে ১ টাকা মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে দোকানীরা। বেনসন ১১ থেকে ১২ টাকা ডারবি ৩ থেকে ৪, নেভি ৫ থেকে ৬. স্টার ৫ থেকে ৬ এবং  গোল্ডলিফ ৮ থেকে ৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে নতুন করে এখনও দাম বাড়েনি প্রসাধনী, অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ও সিরামিক পণ্যে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ৭ পাটকলে
বকেয়া ১৮ কোটি টাকা
খুলনা ও যশোরের রাষ্ট্রায়ত্ত ৭ পাটকলে ১৮ কোটি বকেয়া রয়েছে। এর মধ্যে শ্রমিকদের প্রায় ১২ কোটি টাকা মজুরি ও কর্মচারী কর্মকর্তাদের ৬ কোটি টাকা বেতন রয়েছে। ঈদের আগে এ বকেয়া পরিশোধের প্রচেষ্টা চলছে। ঈদকে সামনে রেখে বোনাস ও বকেয়া মজুরির প্রত্যাশায় শ্রমিকরা উন্মুখ।
শ্রমিকরা জানায়, বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) আওতায় বর্তমান ৯টি পাটকল চালু রয়েছে। এর মধ্যে ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, স্টার, আলীম, ইস্টার্ন, জেজেআই ও কাপেটিং জুট মিলে স্থায়ী ও অস্থায়ী শ্রমিক দিয়ে উৎপাদন চলছে। অন্যদিকে খালিশপুর ও দৌলতপুর জুটমিল পে-অফ হবার পর শ্রমিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বকেয়া পরিশোধ করে মিল বন্ধ থাকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ অঞ্চলের মানুষের আবেদনে সাড়া দিয়ে মিল দু’টি চালু করেন। ডেইলী ব্যাসিস পদ্ধতিতে চলছে মিল দু’টি। তাই শ্রমিকরা ন্যূনতম একটি মজুরি পাচ্ছে। এ শ্র্রমিকরা চাকরি স্থায়ীকরণ ও মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে কয়েক দফা আন্দোলন করেছে। বিষয়টি সরকারের কাছে মিল কর্তৃপক্ষ উপস্থাপন করেছে। যা সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে অন্য ৭ পাটকলের শ্রমিকদের মজুরি বকেয়া পড়েছে প্রায় ১১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বেতন বকেয়া পড়েছে ৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে ক্রিসেন্ট জুট মিলে শ্রমিকদের ২ সপ্তাহের মজুরি বাবদ ২ কোটি ৮০ লাখ এবং কর্মচারী কর্মকর্তাদের ২ মাসের বেতন বাবদ ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা, প্লাটিনাম জুট মিল শ্রমিকদের ১ সপ্তাহের মজুরি বাবদ ২ কোটি ২৪ লাখ এবং কর্মকর্তা কর্মচারীদের ১ মাসের বেতন বাবদ ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, স্টার জুট মিলের শ্রমিকদের ৩ সপ্তাহের মজুরি ২ কোটি ৫ লাখ এবং কর্মকর্তা কর্মচারীদের ২ মাসের বেতন ২ কোটি ২০ লাখ টাকা, ইস্টার্ন জুট মিলের শ্রমিকদের ৩ সপ্তাহের বকেয়া মজুরি ৮০ লাখ টাকা এবং কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বকেয়া ২ মাসের বেতন ৪০ লাখ টাকা, আলীম জুট মিলের শ্রমিকদের ৫ সপ্তাহের মজুরি ১ কোটি ৩০ লাখ কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের ৪ মাসের বেতন ১ কোটি ৪ লাখ টাকা, জেজেআই’র শ্রমিকদের ৩ সপ্তাহের মজুরি ১ কোটি ৬৫ লাখ এবং কর্মচারী-কর্মকর্তাদের ৩ মাসের বেতন ১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, কার্পেটিং জুট মিলের শ্রমিকদের ২ সপ্তাহের মজুরি ৩৬ লাখ এবং কর্মচারী কর্মকর্তাদের ১ মাসের বেতন ২২ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। এছাড়া আলিম জুট মিলের প্রশাসনিক জটিলতার কারণে শ্রমিকদের ৪৫ সপÍাহের মজুরি ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের ১১ মাসের বেতন বাবদ ৯ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। শ্রমিক পরিবারের শিক্ষা ভাতা বকেয়া আছে প্রায় ৬৬ লাখ টাকা।
ক্রিসেন্ট জুট মিলের মহাব্যবস্থাপক গাজী সাহাদাত হোসেন জানান, নিজেদের বেতন কম নিয়ে শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ করেছি। যেটুকু বাকী আছে ঈদের আগে পরিশোধ করতে পারবেন। মিলকে লাভজনক করতে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করার কথা জানান তিনি।
প্লাটিনাম জুট মিলের মহাব্যবস্থাপক মুজিবর রহমান মল্লিক জানান, শ্রমিকরা কর্মমুখী। উৎপাদন বিষয়ে তারা খুবই সিরিয়াস। বিজেএমসি, মন্ত্রণালয় এবং সরকারও সদয়। ফলে আমারা অচীরে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব বলে প্রত্যাশা করেন।
বিজেএমসি খুলনা জোনের লিয়াজোঁ কর্মকর্তা মো. মুরাদ হোসেন জানান, বর্তমান ৯ পাটকলে প্রায় ৩০ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদিত পাটজাত পণ্য মজুদ রয়েছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ২৪০ কোটি টাকা। সে তুলনায় শ্রমিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে দেনা খুবই কম। ঈদের আগে সকল বকেয়া বিজেএমসি ও মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিশোধ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।
শ্রমিক নেতা সোহরাব হোসেন জানান, শ্রমিকদের মজুরি কমিশনসহ অন্যান্য দাবির বিষয়ে মন্ত্রণালয় ও সরকার সদয় হবেন এমনটাই আশা করছেন তারা।
ক্রিসেন্ট জুট মিলের শ্রমিক শাহ আলম ও প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক আজিজুল জানান, নিয়মিত কাজ করে নিয়মিত মজুরি না পেলে কিভাবে চলবে তাদের সংসার। তাই অবিলন্বে মজুরি কমিশনসহ সকল দাবি পূরণ করে নিয়মিত মজুরির ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ