শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

খালেদা জিয়ার কিছু হলে তার দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে -বি. চৌধুরী

স্টাফ রিপোর্টার: সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সর্বোচ্চ সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন, খালেদা জিয়ার কিছু হলে দায় সরকারের। সরকারকে মনে রাখতে হবে তিনি দেশের একজন সম্মানিত প্রবীণ নাগরিক। দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলেরও প্রধান। তিনি বলেন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মানবতা যেখানেই সঙ্কটে পড়ছে আমরা সেখানেই কথা বলবো। প্রতিবাদ করবো। সেটা কার পক্ষে বা বিপক্ষে গেলো সেটি বড় বিষয় নয়। গতকাল রোববার তোপখানারোডস্থ শিশু কল্যাণ মিলনায়তনে বাংলাদেশ জনদল আয়োজিত আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিজেডি’র চেয়ারম্যান ডা. এস.এম শাজাহানের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব মাহবুবুর রহমান জয় চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জেএসডি’র সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন,বিকল্পধারার সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ওমর ফারুক, বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব এম.গোলাম মোস্তফা ভূইয়া, সোনার বাংলা পার্টির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ হারুন অর রশিদ, বিজেডি নেতা হারুন অর রশিদ, আবুল হাসেম সরকার, আতিকুল ইসলাম প্রমুখ।
বি. চৌধুরী বলেন, পত্রিকায় দেখলাম, বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরা বলেছেন, তিনি (বেগম জিয়া) ৭ মিনিট অজ্ঞান ছিলেন, এ কথা সঠিক হয়ে থাকলে তার নিশ্চয়ই টিআইএ হয়েছিল। অর্থাৎ তার সাময়িকভাবে মস্তিস্কে রক্ষ চলাচল কমে গিয়েছিল। (TIA,TRANSIENT ISCHCEMIC ATTACK)। এই ধরনের রোগীর ভবিষ্যতে ব্রেন স্ট্রোক বা প্যারালাইসিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। সেইহেতু এই পর্যায়ে সর্বোত্তম নিউরোলজিক্যাল সেন্টারে তার চিকিৎসা হওয়া উচিত।
সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, যেহেতু খালেদা জিয়া ৩ বার প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী দলের নেতা ছিলেন সুতরাং অন্য বিবেচনা বাদ দিয়ে শুধুমাত্র রাজনৈতিক ও সামাজিক বিবেচনায় তার সঠিক চিকিৎসা হওয়া উচিত। রোগবিজ্ঞানের অধ্যাপক ডা. বি. চৌধুরী বলেন, প্রয়োজন হলে সর্বোত্তম চিকিৎসার জন্য তাকে (খালেদা জিয়া) পৃথিবীতে এই ধরনের রোগের জন্য শ্রেষ্ঠতম নিরাময় কেন্দ্রে পাঠানো উচিত। এই হিসাবে আমি তাকে লন্ডনের (Institute of Neurology, Queens Square, London) ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজি কুইনন্স স্কয়ার অথবা লন্ডনের হ্যামার স্মীথ হাসপাতালের (সাবেক রয়েল পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিকেল স্কুল) (Hammersmith Hospital, formerly the Royal Postgraduate Medical School)মতো নিরাময় কেন্দ্রে তার চিকিৎসা হওয়া উচিত।
যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান বি. চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি আমার সঙ্গে এতো খারাপ ব্যবহার করার পরও আমি খালেদা জিয়ার পক্ষে কেনো কথা বলি? স্মরণ রাখা উচিত আমি আওয়ামী লীগ নেতা কাউন্সিলর একরাম হত্যার তীব্র প্রতিবাদ করেছি। যেখানেই গণতন্ত্রের উপর আঘাত আসবে, যেখানে মানবতাবিরোধী কার্যকলাপ হবে, সেখানে সরকার বা বিরোধী দল বুঝি না, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলতেই থাকবো, এটা বিকল্পধারা ও যুক্তফ্রন্টের নীতি। তিনি বলেন, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন এখন জনগণের মৌলিক দাবি। এর জন্য নির্বাচনের অন্তত ১০০ দিন আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। যাতে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে। তার আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার অথবা সবদলের সব্র্ সম্মতিক্রমে স্বীকৃত জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।   
বি চৌধুরী আরো বলেন, কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশ্ন উঠলে এই সরকারের মন্ত্রীরা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধানে নাই। কিন্তু আমি যখন সংসদে উপনেতা ছিলাম সেসময় ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর একরাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস করেছিলাম, তারপর মাত্র ৪ মাসের মধ্যে নতুন নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করেছিলাম। সুতরাং আপনারা (আওয়ামী লীগ) কেনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা জাতীয় সরকার আগামী এক মাসের মধ্যে করতে পারবেন না? সত্যিকারের নির্বাচন করতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা জাতীয় সরকারের কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, আমরা চাই সমস্যার শান্তিপূণ্র্ সমাধান। যেমন হয়েছে মালয়েশিয়ায়, শান্তিুপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে সেখানে মাহাথির মুহাম্মদ নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের একজন কর্মীকেও জেলে রাখা হয়নি অথবা ভোটের পর একজন কর্মীকেও নির্যাতন করা হয়নি।
নাগরিক ঐক্য আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, গত ৫দিন যাবত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া অসুস্থ আর সরকার তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন না এটি অমানবিক। কে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা সরকার গ্রহন করলেন না, জাতি প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চায়। সরকারকে মনে রাখতে হবে, বেগম জিয়ার কিছু হলে তাদের মুক্তি নাই। এর জন্য বিশেষ কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তার দায় সরকারকেই বহল করতে হবে।
তিনি বলেন, এই সকার যে বাজেট পেশ করেছে তা ব্যাংক ডাকাত আর চোরদের জন্য করেছে। ব্যাংক ডাকাত আর চোরদের জন্য করা বাজেটে জাতির মুক্তি হবে না। জাতির মুক্তির জন্য দল-মত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করতে হবে। শপথ নিতে হবে চুড়ি করে নৌকাকে আর বিজয়ী হতে দিব না।
 জেএসডি সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন বলেন, অন্যদেশের সনদ নিয়ে যারা দেশ পরিচালনা করতে চান তাদের দিয়ে আর যাই হোক দেশের ভাঘ্যের পরিবর্তন হবে না। পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন গণআন্দোলন। তিনি বলেন, দশ বছরে কারা শেয়ারবাজার লুট করেছে, হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করেছে, তাদের গুলি করে হত্যার কোনো ব্যবস্থা নেই। অথচ দশটা ইয়াবার ব্যবসায়ী বা বহনকারীদের গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, তাকে যে নির্জন কারাবাসে রাখা হয়েছে এটা এক ধরনের নির্যাতন। সেখানে তিনি দিনদিন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। সুচিকিৎসাও দেয়া হচ্ছে না। তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। সেজন্য সরকারকে দায়দায়িত্ব বহন করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা খবর পেয়েছি তিনি মাইল্ড স্ট্রোকে আক্রান্ত। সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। আমরা সরকারকে বলবো, তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। তাকে মুক্তি দেয়ার ব্যবস্থা করুন।’
এদিকে কারারুদ্ধ বেগম খালেদা জিয়া পড়ে গিয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে  ড্যাব। ডক্টরস এসোসিশেন অব বাংলাদেশ, ড্যাব কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের পক্ষে সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ এ কে এম আজিজুল হক ও মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেন এক যৌথ বিবৃতিতে বেগম খালেদা জিয়া’র সুচিকিৎসা নিয়ে সরকার ও কারা কর্তৃপক্ষের আচরণে উদ্বিগ্ন ও তীব্রনিন্দা এবং প্রতিবাদ জানান। তারা বলেন,  অসুস্থ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি সরকারের এ আচরণ অত্যন্ত নিন্দনীয় ও গ্রহীত অপরাধ। তারা বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে প্রায় ৪ মাস আগে দাবীকৃত মিথ্যা, বানোয়াট, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত, প্রহসনমূলক ও প্রকৃত বাস্তবতায় সাজাপ্রাপ্তের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণহীন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছে। পরিত্যক্ত ও যে কোন মানে বসবাসের অযোগ্য কনসানট্রেশন ক্যাম্পের সাথে তুলনীয় নির্জন কারাগারে তিনি যে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তার প্রতি ইতোমধ্যে দেশ ও দেশের বাইরে বিশ^বাসীর দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে এবং একে এক গভীর ও সুদূর প্রসারী রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসাবে পরিগণিত করছে। আমরা আশা করি সরকার অনতিবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। অন্যথায় এর দায়-দায়িত্ব বর্তমান সরকারকেই বহন করতে হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ