বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

আজ চাঁদ দেখা গেলে কাল ঈদ

মিয়া হোসেন: দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর রোযাদারের জন্য পবিত্র ঈদুল ফিতর এক মহা আনন্দের দিন। তাই তো জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের রেখে যাওয়া কবিতা আজো আকাশে বাতাসে সুরের ঝংকার তোলে “ও মন রমযানের ঐ রোযার শেষে এল খুশীর ঈদ, তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন্ আসমানী তাকিদ”। আজ শুক্রবার পবিত্র রমযান মাসের ২৯ তারিখ। আজ সন্ধ্যায় বাংলাদেশের পশ্চিম আকাশে বাঁকা কাস্তের মতো পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে কাল শনিবার উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। আর চাঁদ দেখা না গেলে রোববার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। পবিত্র ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখার জন্য আজ ইসলামিক ফাউন্ডেশনে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

পশ্চিম আকাশে পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার সাথে সাথে রোযাদার অরোযাদার সকলের মাঝে বইতে শুরু করবে আনন্দের বন্যা। শুধু রাতটা পোহালেই শুরু হবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশে মুসলমানদের মিলনের বন্ধন। রাজপ্রাসাদ থেকে কুড়েঘর পর্যন্ত খুশীর আলোয় আলোকিত হবে। একে অন্যের সাথে কুশলাদি বিনিময় করতে থাকবে। কোলাকুলি আর ফিরনী সেমাই খাওয়ার ধুম থেকে বাদ যাবে না কেউই। ঘুম থেকে ওঠার পরই শুরু হয়ে যাবে এসব ধুমধাম। পুরো বাংলাদেশ আনন্দের আলোয় ঝলমল করতে থাকবে। ইতোমধ্যে সকলেই ঈদের সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করেছে। প্রত্যেকেই জামাকাপড়সহ পছন্দের জিনিস পত্র ক্রয় করেছেন। বন্ধু বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনদের মাঝে বিভিন্ন উপহার সামগ্রী বিতরণ করছেন। পাশাপাশি ঈদ কার্ডে মনের কথা লিখে প্রিয়জনকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন অনেকেই। অপরদিকে ঈদ যতই কাছে আসছে মোবাইল ফোন খরচ ততই বাড়ছে। আর মোবাইল কোম্পানীগুলোও ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার কথা ঘোষণা করছে। এসব সুযোগ সুবিধা কাজে লাগিয়ে প্রিয়জনের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। মোবাইল থেকে কলের পাশাপাশি এস এম এস ও বিভিন্ন লগো পাঠিয়ে প্রিয়জনের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগী করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে অনেকেই। এসবের পাশাপাশি ই মেইলের মাধ্যমেও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করছে অনেকে। আবার ফেসবুক ও টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ঈদের শুভেচ্ছা জানানো হচ্ছে। পব্ত্রি ঈদ মুসলমানদের মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করে এবং সম্প্রীতি বৃদ্ধি করে। বিশ্ব মুসলিম একই আত্মার বন্ধনে আবদ্ধ এ কথা স্মরণ করিয়ে দেয় পবিত্র ঈদ। ধনী গরিব ভেদাভেদ ভুলিয়ে দিয়ে রাজা প্রজা এক কাতারে শামিল করিয়ে দেয় পবিত্র ঈদ। হিংসা বিদ্বেষ ও অহংকারসহ সকল অন্যায় ও পাপাচার মুছে দিয়ে নতুন করে সুখী পবিত্র জীবন যাপন শুরু করার তাগিদ এনে দেয় পবিত্র ঈদ।

ঈদের দিন আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাই আনন্দে মেতে ওঠে। একেকজন একেকভাবে আনন্দ উপভোগ করে থাকে। বিশেষ করে ছোট ও তরুণ তরুণীদের আনন্দ উপভোগটা সবারই নজরে পড়ে। তারা ঈদের দিন ভোরে ফিরনী সেমাই খেয়ে বন্ধু বান্ধবদের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করে ছুটে যায় ঈদের নামাযে। নামায শেষে ছোটরা খেলার সামগ্রী নিয়ে বন্ধু বান্ধবদের সাথে খেলায় মেতে ওঠে। আর অপরদিকে তরুণ তরুণীরা ছুটে যায় সিনেমা হলে বা টেলিভিশনের সামনে। অনেকে ভিসিডিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান দর্শনের মাধ্যমে ঈদের আনন্দ উপভোগ করে থাকে।

সদ্য বিবাহিত যুগলদের জন্য ঈদের রাতে থাকে বিশেষ আয়োজন। তাদের জন্য ঈদের রাতকে চাঁদ রাত নামে অভিহিত করা হয়। শ্বশুর বাড়িতে তাদের জন্য বিশেষ আয়োজন করা হয়। বিশেষ করে নতুন জামাইর আদর বেড়ে যায় চাঁদের রাতে। তাদের জন্য শ্বশুর শাশুরির পক্ষ থেকে থাকে নানান উপহার সামগ্রী এবং ভাল উন্নতমানের খাবার। জামাইর সাথে আগতরাও তা থেকে বাদ যান না।

চাঁদ দেখে রোজা শুরু ও সমাপ্তির নির্দেশনা ইসলাম দিয়েছে। এ ব্যাপারে হাদীস শরীফে পরিষ্কারভাবে উল্লে¬খ রয়েছে। হয়রত আব্দুল¬াহ বিন ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, রমযানের চাঁদ দেখা না যাওয়া পর্যন্ত তোমরা রোজা রেখো না। আর শাওয়ালের চাঁদ না দেখা পর্যন্ত তোমরা ইফতার করো না। আকাশ মেঘলা থাকার দরুন চাঁদ তোমাদের দৃষ্টিগোচর না হলে রমযানের দিনগুলো পূর্ণ করে নেবে। ( বোখারী ও মুসলিম)। চাঁদ দেখার ব্যাপারে ইমামদের বক্তব্য হচ্ছে, শাওয়ালের চাঁদ দেখা প্রমাণিত হওয়ার জন্য কমপক্ষে দু‘জন বিশ্বস্ত লোকের স্বাক্ষ্য অপরিহার্য। আর মেঘ মুক্ত বা পরিষ্কার আকাশ থাকলে অনেক লোকের চাঁদ দেখা শর্ত। উল্লেখ্য, মাসের ৩০ দিন পূর্ণ হয়ে গেলে চাঁদ দেখার প্রয়োজন নেই।

ঈদ শব্দের সরল অর্থ আনন্দ। আর আল্ল¬াহর পক্ষ থেকে ঈদ হচ্ছে বান্দার জন্য বিরাট আতিথেয়তা। তাই তিনি ঈদের দিন রোজা পালনকে হারাম করে দিয়েছেন। ফিতর মানে রোজা ভাঙ্গা। ইফতার শব্দও ফিতর থেকে এসেছে। ঈদুল ফিতর মানে রোজা ভাঙ্গার ঈদ। অন্য এক মত অনুযায়ী ফিতর ফিতরাত শব্দ থেকে এসেছে। এর অর্থ স্বভাব প্রকৃতি। রমযানের দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনায় কষ্ট ও ক্লান্তির পর স্বাভাবিক ভাবেই সুখ ভোগের বিষয়টি এসে যায়। ঈদুল ফিতর রোজাদারদের সেই স্বভাবসমেত সুখ উপহার দেয়।

ঈদের দিন সর্বপ্রথম রোজা ভাঙ্গার সাথে সাথে আল্ল¬াহর শুকরিয়া আদায় ও রাসূল (সাঃ) এর উপর দুরুদ পাঠ করা উচিত। ঈদের রাতে ইবাদাত করতেও উৎসাহিত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হযরত ওবাদাহ বিন সামেত (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দু‘ রাত সজাগ থাকে। যে দিন সকল অন্তর মরে যাবে কিন্তু তার অন্তর মরবে না। (তাবরানী)। ঈদের দিন ভোরে ঈদের নামাযের আগে ফিতরা আদায় করতে হবে। তারপর ঈদের নামায আদায় করতে হবে। ঈদের নামায মাঠে আদায় করাই উত্তম। সম্ভব হলে পায়ে হেঁটে ঈদে যাওয়াও উত্তম। ভিন্ন পথে ঈদগাহে যাতায়াত ও ভোরে উঠে খেজুর বা মিষ্টি কিছু খাওয়া রাসূল (সাঃ) এর সুন্নাত। ঈদের দিন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করা উত্তম। নতুন পোশাক পরিধান করায় কোন বাধ্যবাধকতা নেই। এটিকে প্রাধান্য দেয়া ভ্রান্ত ও অমূলক ধারণা।

ঈদের আনন্দ সর্বব্যাপী সবার জন্য এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকার অবকাশ নেই। তবুও ঈদুল ফিতরের আসল উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য বিশ্লে¬ষণে দেখা যায়, এ ঈদ প্রকৃত সিয়াম পালনকারীদের জন্য। যারা রমযান মাসব্যাপী সুবহে সাদেক থেকে সূযাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার ও স্ত্রী সম্ভোগ থেকে নিবৃত্ত থাকেন তারাই কেবল তাকওয়ার গুণাবলী অর্জনে সক্ষমতা লাভ করেন এবং তাদের জন্যই ঈদ নিয়ে আসে দুনিয়া ও আখেরাতের সওগাত। ঈদের আনন্দ হোক প্রতিদিনের আনন্দ। সবার ঘরে, সবার মুখের ঈদের হাসিটুকু স্থায়িত্ব পাক।

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নেতৃবৃন্দ দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছে। রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, এছাড়াও বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানো হয়েছে। দৈনিক সংগ্রামের পক্ষ থেকেও সকলকে ঈদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানো হচ্ছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ