বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

উত্তর প্রদেশে গরু হত্যার গুজব রটিয়ে মুসলিম যুবককে হত্যা

কাশিমের লাশ

১৯ জুন, পার্সটুডে : ভারতের বিজেপিশাসিত উত্তর প্রদেশে গরু হত্যার গুজব রটিয়ে কাশিম (৪৫) নামে এক মুসলিম যুবককে গণপিটুনিতে হত্যা করেছে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা। ওই ঘটনায় সামেদ্দীন (৭৫) নামে অন্য এক মুসলিম ব্যক্তি গুরুতর আহত হয়েছেন।

গত সোমবার দুপুরে পিলখুয়ার বছেড়া খুন্দ গ্রামের ওই ঘটনায় পুলিশ অজ্ঞাত ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রবল উত্তেজনা থাকায় জেলা প্রশাসকের নিন্দেশে ঘটনাস্থলে প্রচুর পুলিশ ও পিএসি বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা গোলযোগপূর্ণ এলাকায় ঘাঁটি গেঁড়ে রয়েছেন।

গত মঙ্গলবার গণমাধ্যমে প্রকাশ, সামেদ্দীন নামে এক কৃষক চাষ ছেড়ে নিজের গবাদি পশুর জন্য খাবার আনতে গিয়েছিলেন। এসময় তার জমিতে একটি গরু ও বাছুর ঢুকে পড়লে সামেদ্দীন সেই গরু-বাছুরকে জমি থেকে তাডাচ্ছিলেন। স্থানীয় মানুষজন গো-হত্যার গুজব রটিয়ে দিলে এলাকার দুর্বৃত্তরা জড়ো হয়ে সামেদ্দীন (৭৫) ও তার সঙ্গী কাশিম (৪৫) নামে দুই মুসলিম ব্যক্তিকে প্রচ- মারধর করে। পুলিশ আহত অবস্থায় দু’জনকে হাসপাতালে ভর্তি করলেও চিকিৎসারত অবস্থায় মারা যান কাশিম। সামেদ্দীনের চিকিৎসা চলছে। পুলিশের সন্দেহ, একটি মোটরবাইক দুর্ঘটনা নিয়ে গোলযোগের জেরে ওই ঘটনা ঘটেছে। এ ব্যাপারের তদন্ত শুরু হয়েছে।

গত বুধবার বিজেপিশাসিত ঝাড়খন্ডে মোষ চুরির অভিযোগে স্বঘোষিত গো-রক্ষকদের নৃশংস আক্রমণে চিরাগউদ্দিন আনসারি (৩৫) ও মুর্তজা আনসারি (৩০) নামে দু’জন মুসলিম যুবক নিহত হয়েছিলেন। নিহত মুর্তজা আনসারির বাবা হালিম আনসারি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটা পুরোনো শত্রুতার ঘটনা। আমার ছেলেকে ধোঁকা দিয়ে গ্রামে ডেকে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়েছে।’

গত মে মাসে বিজেপিশাসিত মধ্য প্রদেশে উন্মত্ত জনতা গরু হত্যাকারী সন্দেহে রিয়াজ নামে এক মুসলিম যুবককে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করেছিল। ওই ঘটনায় শাকিল নামে তার এক সঙ্গীকেও মারধর করলে তিনি গুরুতরভাবে আহত হন।

এদিকে এ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের কোলকাতার সুরেন্দ্রনাথ ওমেন কলেজের বিশিষ্ট অধ্যাপিকা ড আফরোজা খাতুন গতকাল মঙ্গলবার রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘ভারতে আজ এক ভয়ঙ্কর আতঙ্ক তৈরি হয়েছে যে, কে ব্যাগে গরুর মাংস নিয়ে যাচ্ছে, বাড়িতে গরুর মাংস খাচ্ছে, কে গরু চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে এজন্য সন্দেহবশত মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে এবং এটা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। তার কারণ হচ্ছে, রাষ্ট্রের প্রচ্ছন্ন বা স্পষ্ট যাই হোক না কেন তাদের একটা সমর্থন রয়েছে। যারা দুর্বৃত্ত তাদেরকে আশ্রয় দেয়া হচ্ছে। আমরা জানি, (পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি শ্রমিক) আফরাজুলকে হত্যা করার পর অভিযুক্ত দুর্বৃত্তকে পুরস্কৃত করা হয়েছে, তার জন্য আইনি সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

ড আফরোজা খাতুন বলেন, ‘আজ যদি গো-রক্ষার নামে মানুষ হত্যা করা হয়, তাহলে কী মানুষের চেয়ে গরুর জীবনের দাম বেশি? এ ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করা দরকার, আর যেন এই সরকার, সাম্প্রদায়িক সরকার ফিরে না আসে। তাহলে আমাদের গণতন্ত্র তো শেষ হয়ে গেছেই, এরপরে যে আমরা কোন তন্ত্রে বাস করব, ভবিষ্যতে কোন নৈরাজ্যের মধ্যে বাস করব তা হয়তো স্পষ্ট বুঝতে পারছি না। তা বোঝানোর জন্য আমাদের অনেকটা দায়বদ্ধতা তৈরি হয়েছে। গো-রক্ষার নামে মানুষকে হত্যা করা একটা কৌশল মাত্র, সেই জায়গা থেকে আমরা মুক্তি পেতে চাই, তার পথ খুঁজতে হবে।’ 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ