বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

ক্লিন ইমেজের এডভোকেট জুবায়ের মেয়র পদে মনোনয়ন পত্র জমা

কবির আহমদ, সিলেট : ২০০৩ সাল থেকে আধ্যাত্মিক নগরী নামে খ্যাত সিলেট সিটি কর্পোরেশনের যাত্রা শুরু। ৪ দলীয় জোট সরকারের সময় ২০০৩ সালে নির্দলীয়ভাবে মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত হয় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচন। ২০০৩ সাল থেকেই গণমানুষের সংগঠন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সিদ্ধান্ত নেয় স্থানীয়ভাবে অথবা জোটগতভাবে সিসিক নির্বাচনে জামায়াত অংশগ্রহণ করবে। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে জোটের কারণে নির্বাচনে প্রার্থী দিলেও শেষ পর্যন্ত বিরত থাকতে হয় দলটিকে। ২০১৩ সালের সিসিক নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী সিলেট মহানগর আমীর এ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের এর পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে এবং জোটগত নির্বাচন করার কারণে তা প্রত্যাহার করে আরিফুল হক চৌধুরীকে সমর্থন জানায়। ২০১৮ সালে ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নাগরিক ফোরামের ব্যানারে নির্বাচন করছেন সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর সিলেট জেলা বারের নির্বিবাদী সজ্জন ব্যক্তিত্ব ২৭টি ওয়ার্ডের জনগণের প্রিয় নেতা এ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরের দিকে সিলেট জেলা বারের দুইবারের নির্বাচিত সভাপতি বিজ্ঞ আইনজীবী এ্যাডভোকেট মুহাম্মদ লালা নাগরিক ফোরামের পক্ষ থেকে এ্যাডভোকেট জুবায়েরের সিসিক নির্বাচনে প্রার্থীতা ঘোষণা করেন। আইনজীবিদের এই জনাকীর্ণ সমাবেশে সিলেট আইনজীবি সমিতির সভাপতি আশাবাদ ব্যক্ত করেন এ্যাডভোকেট জুবায়ের একজন ক্লিন ইমেজের মানুষ। তাকে মেয়র নির্বাচিত করলে নগরবাসী আশানুরূপ সেবা পাবে। গতকাল বুধবার নাগরিক ফোরামের প্রার্থী হিসেবে সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর এ্যাডভোকেট জুবায়ের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন নির্বাচন অফিসে। জামায়াত নেতৃবৃন্দ ছাড়াও সিলেটের বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন। নাগরিক ফোরাম নির্বিবাদী সজ্জন ব্যক্তিত্ব এ্যাডভোকেট জুবায়েরকে সিসিক নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী করায় জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী সমমনা দলগুলোসহ সিলেটে শুধু সমাজের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। নাগরিক ফোরামও এ্যাডভোকেট জুবায়েরকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত সিসিক নির্বাচনে টিকে থাকবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। 
এবারের সিসিক নির্বাচনে সিলেটে ২০ দলীয় জোটের কোন প্রার্থী নেই। বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন বলে গতকাল বুধবার বিএনপির হাইকমান্ড তাকে মনোনয়ন প্রদান করেছেন। জোটগত প্রার্থী থাকলেও জামায়াত তাদের নিজস্ব প্রার্থী দিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবীর প্রেক্ষিতে দীর্ঘদিন থেকে প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে। নাগরিক ফোরামের প্রার্থী এ্যাডভোকেট জুবায়ের ইতিমধ্যে নগরীর ২৭ টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন মোড়, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মুখে ব্যানার ফেষ্টুন, বিলবোর্ড টাঙ্গিয়ে রেখেছেন। গত ২ বৎসর ধরে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহাসহ বিভিন্ন দিবসে নগরবাসীকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে সিসিক নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে জানান দিচ্ছেন এ্যাডভোকেট জুবায়ের। ২০১৩ সালে জামায়াতের সমর্থন আদায় করে নগরপিতার চেয়ারে বসেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী। জামায়াত তখনও প্রার্থী দেয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। বিএনপি-জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সকল বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় আগামী ৫ বৎসর পর সিসিক নির্বাচন এলে জামায়াতকে মূল্যায়ন করবে আরিফুল হক চৌধুরী ও তার দল। কিন্তু সে প্রতিশ্রুতি রক্ষা হয়নি। নগরের সম্মানিত নাগরিকবৃন্দ ও দলের নেতাকর্মীদের চাপের মুখে এবার নাগরিক ফোরাম থেকে প্রার্থী হলেন সিলেটের জনপ্রিয় আইনজীবি এ্যাডভোকেট জুবায়ের। এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর নায়েবে ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক মো: ফখরুল ইসলাম দৈনিক সংগ্রামকে জানান সিসিক নির্বাচন এটা একটি স্থানীয় নির্বাচন। স্থানীয় নির্বাচনে জামায়াত প্রার্থী দিবে ইতিমধ্যে দলীয় ফোরামে ঠিক হয়ে গেছে। এর প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পড়বে না। স্থানীয় সরকারের যে কোন নির্বাচন জোটগতভাবে না করলেও হয়। সম্মানিত নগরবাসী ও দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন থেকে দাবী জানিয়ে আসছেন সিলেট নগর জামায়াতের আমীর এ্যাডভোকেট জুবায়েরকে মেয়র পদে নির্বাচন করার জন্য। জনমতের প্রতি সম্মান জানিয়ে নগরীর অলিগলিতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ২০ দলীয় জোট থেকে সিসিক নির্বাচনে জামায়াতকে ছাড় দিলে ভালো হয়, না দিলে জামায়াতের নগর আমীর এ্যাডভোকেট জুবায়ের নাগরিক ফোরামের প্রার্থী হিসাবে অংশ নিবেন। ইতিমধ্যে তিনি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে গতকাল জমা দিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিলেট জেলা বারের এক হিন্দু মহিলা আইনজীবি এ প্রতিবেদককে জানান, নির্বাচন নিরপেক্ষ হলে এ্যাডভোকেট জুবায়ের বিজয়ী হবেন। ২ নং বারে সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৪/৫ টা পর্যন্ত আমরা কয়েক শত আইনজীবি এক সাথে কাজ করি। আমাদের চেয়ে এ্যাডভোকেট জুবায়েরকে আর কেউ ভালো চিনেন না।  তাঁর মতো একজন সাদা মানুষকে আমাদের আমানত ভোটাধিকার প্রয়োগ করে মেয়র নির্বাচিত করলে সিলেটবাসী ভাগ্য খুলে যেতো। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা তা হয়তো করতে পারবো না। কথা হয় সিলেট মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারী মাওলানা সোহেল আহমদের সাথে। তিনি বলেন, এবার এখানে স্থানীয় নির্বাচন জোটগতভাবে হচ্ছে না। সিসিক নির্বাচনে জামায়াতের নগর আমীর এ্যাডভোকেট জুবায়ের নাগরিক ফোরামের একজন প্রার্থী। নগরবাসী এবং তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবীর প্রেক্ষিতে তিনি সিসিক নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে সকল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। অতীতে আমরা জোটগতভাবে স্থানীয় নির্বাচন করেছি, এমনকি কানাইঘাট উপজেলায় আমাদের দলের একজন প্রার্থী দলের সিদ্ধান্ত না মেনে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এখনও তাকে দলে আনা হয়নি। অথচ অন্যান্য দল জোটের প্রতি বা জোটগত দলগুলোর প্রতি এ সম্মান দেখাতে পারেনি। তিনি বলেন, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী মাওলানা লোকমান আহমদ সামান্য ভোটে পরাজয় বরণ করেছেন। এখানে সিদ্ধান্ত হয়েছিল জোটের প্রার্থীর বিরুদ্ধে আর কোন প্রার্থী থাকবে না। এরপরও দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় সিলেট জেলা বিএনপির বর্তমান সেক্রেটারী আলী আহমদ বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৩য় স্থান অধিকার করে। এরপর তাকে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে দলে নেয়া হয়। এই হিসেবে তিনি মনে করেন স্থানীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে জাতীয় নির্বাচনে ২০ দলের মধ্যে কোন প্রভাব পড়বে না।
অপর একটি সূত্র জানায়, ২০০৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল প্রায় ১৫ বছর জামায়াত সিসিক নির্বাচনে মেয়র পদে অংশ নেয়ার টার্গেট জামায়াতে ইসলামীর। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে নানা কারণে জামায়াত জোটগত সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে ছাড় দিচ্ছে। ২০০৩ সালে ৪ দলীয় জোট সরকারের সময়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে জামায়াত থেকে প্রার্থী দেয়ার প্রয়াস শুরু হয়। ২০০৮ সালে ১/১১ এর সময় তৎকালীন সিলেট মহানগর আমীর বর্তমানে দলের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল ডা: শফিকুর রহমানও সিসিক নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। পরবর্তী নির্বাচন বয়কটের কারণে প্রার্থী দেয়নি জামায়াত। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় কথা হয় নাগরিক ফোরামের মেয়র প্রার্থী এ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের এর সাথে। তিনি জানান, সিলেটের সম্মানিত নাগরিকবৃন্দ দীর্ঘদিন থেকে আমাকে মেয়র পদে নির্বাচন করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে আসছিলেন। বর্তমান সময়ে আমাদের দল প্রবাসী অধ্যুষিত এই সিলেটে অত্যন্ত গতিশীল ও শক্তিশালী। নগরবাসী ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবীর কথা ইতিমধ্যে জানিয়ে দেয়া হয়েছে ২০ দলীয় জোট এর নেতৃবৃন্দ। ঈদুল ফিতরের পরের দিন সিলেটের ২০ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দকে সিসিক নির্বাচনে নাগরিক ফোরামের প্রার্থী হিসাবে আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো বলে জানিয়ে দিয়েছি। এ সময় বিএনপি, খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্যজোটসহ ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। নগরবাসী মনে করছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে চলতি বছরের ৩০ জুলাই সিসিক নির্বাচনে এ্যাডভোকেট জুবায়ের আশানুরূপ ফলাফল গড়ে তুলতে পারবেন।
জুবায়েরের মনোনয়ন পত্র দাখিল
ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নেতাকর্মী ও বিশিষ্টজনের উপস্থিতিতে আসন্ন সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন সিলেট নাগরিক ফোরাম মনোনীত মেয়র প্রার্থী এ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। গতকাল বুধবার দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসার আলিমুজ্জামানের নিকট মনোনয়ন পত্র জমা দেন সিলেট জেলা বারের বিশিষ্ট আইনজীবী, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমীর এ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।
মনোনয়ন পত্র দাখিলের সময় উপস্থিত ছিলেন- জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও জেলা উত্তরের আমীর হাফিজ আনোয়ার হোসাইন খান, মহানগর নায়েবে আমীর হাফিজ আব্দুল হাই হারুন, জেলা উত্তরের নায়েবে আমীর সৈয়দ ফয়জুল্লাহ বাহার, সেক্রেটারী মাওলানা সোহেল আহমদ, সহকারী সেক্রেটারী এ্যাডভোকেট আব্দুর রব, মোঃ শাহজাহান আলী, গোলাপগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজ নজমুল ইসলাম, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জৈন উদ্দিন, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. আব্দুল আহাদ, ইসলামিক ল’ইয়ার্স কাউন্সিল সিলেটের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আলিম উদ্দিন, জামায়াত নেতা মাওলানা আব্দুল মুকিত, মাওলানা মুজিবুর রহমান, হাফিজ মশাহিদ আহমদ, চৌধুরী আব্দুল বাছিত নাহির, বিশিষ্ট আইনজীবী এ্যাডভোকেট জামিল আহমদ রাজু, এ্যাডভোকেট আব্দুল খালিক, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সিলেট মহানগর সভাপতি নজরুল ইসলাম ও সেক্রেটারী ফরিদ আহমদ, জেলা পূর্বের সভাপতি পারভেজ আহমদ, জেলা পশ্চিমের সেক্রেটারী আব্দুর রহমান সায়মন প্রমুখ।
মনোনয়ন পত্র দাখিল শেষে উপস্থিত সাংবাদিক ও নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে এ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন- নিজের মেধা, যোগ্যতা ও সততা দিয়ে সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত আদর্শ সিলেট নগরী গঠন করাই আমার প্রধান অঙ্গিকার। সর্বত্র সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করাই আমার লক্ষ্য। সকলের ভালবাসা, দোয়া ও সহযোগিতা নিয়ে আমার পথ চলা। আগামীর পথ চলায় নগরবাসীই আমার চালিকাশক্তি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ