শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

যুক্তরাষ্ট্রে চরম দারিদ্র্যের কবলে প্রায় ২ কোটি মানুষ

 

জুন ২৮, ইন্টারনেট : সবশেষ হালনাগাদকৃত এক মার্কিন পরিসংখ্যান অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ৪ কোটি। এদের মধ্যে প্রায় দুই কোটি মানুষ রয়েছে চরম দারিদ্র্যের কবলে। যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশটিতে দিনকে দিন ধন বৈষম্য প্রকট হচ্ছে। দিনে ২ ডলারেরও কম অর্থে জীবন ধারণ করতে বাধ্য হওয়া মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর হালনাগাদ করা ‘ইউএস সেনসাস ব্যুরোর’ তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৮ জনে ১ জন অন্তত দরিদ্র। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৪ কোটি দরিদ্র মানুষ মোট জনসংখ্যার ১২.৭ শতাংশ। এদের মধ্যে ১ কোটি ৮৫ লাখ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করেন, যাদের পারিবারিক আয় দারিদ্র্য সীমার অর্ধেকের কম। এদিকে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক বৈষম্য ও মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর জাতিসংঘ সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘে নিয়োজিত বিশেষ দূত ফিলিপ অ্যাস্টন তার দায়িত্বের অংশ হিসেবে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দারিদ্র্য ও মানবাধিকার পরিস্থিতির বিপন্ন বাস্তবতার কথা তুলে এনেছেন। তার গবেষণা এবং এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির ভয়াবহতাকেই তুলে ধরেছে। দারিদ্র্য ও মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত অ্যাস্টন তত্ত্বাবধানে পরিচালিত গবেষণার প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যারা দরিদ্র ছিল তাদের ৪০ শতাংশই ছিল অতি দরিদ্র। ২০১৫ সালে ওই হার বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৪৬ শতাংশ। এছাড়াও প্রতিদিন মাথাপিছু ২ ডলারেরও কম অর্থে জীবনযাপন করতে বাধ্য হওয়া চরম দরিদ্রদের সংখ্যা বাড়ছে বেকারত্ব ও সামাজিক সুরক্ষা না পাওয়ার কারণে। অপেক্ষাকৃত কম বয়সীদের দারিদ্র্যের হিসেবেও এগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র। ওইসিডি দেশগুলোতে যেখানে এ হার ১৪ শতাংশ সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের যুবকদের এক চতুর্থাংশই দরিদ্র। ওইসিডিভুক্ত উন্নত ৩৭টি দেশের মধ্যে দারিদ্র্য ও বৈষম্য নিরসনের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ৩৫ তম। পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে আয় বৈষম্য যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি। ‘স্ট্যানফোর্ড সেন্টার অন পোভার্টি অ্যান্ড ইনইকুয়ালিটির’ মতে, অপরাপর উন্নত দেশের তুলনায় দারিদ্র্যের মধ্যে থাকা শিশুদের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে অনেক বেশি। অ্যালস্টন লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধনী, সবচেয়ে শক্তিশালী। প্রযুক্তিগত দিকে থেকেও সবচেয়ে বেশি এগিয়ে। অথচ না তার ধনসম্পদ, না তার প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্ব্য আর না তার ক্ষমতা দারিদ্র্যের মধ্যে থাকা ৪ কোটি মানুষের অবস্থার পরিবর্তনে নিয়োজিত।’

যুক্তরাষ্ট্রের দরিদ্র জনগণ ও দেশটির মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে অ্যালস্টন একদিকে যেমন কথা বলেছেন ওয়াশিংটন ডিসির নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা এবং সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে, তেমনি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন ক্যালিফর্নিয়া, অ্যালাবামা, জর্জিয়া, পুয়েরতো রিকো ও ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকাগুলো। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারিভাবে প্রকাশিত পরিসংখ্যানের তথ্য দিয়েই তিনি দেখিয়েছেন দেশটি দারিদ্র্য নিরসনে কতটা পিছিয়ে। অ্যালস্টনের ভাষ্য, ‘দেশটির দারিদ্র্য পরিস্থিতি তার বৈভবের তুলনায় অত্যন্ত দৃষ্টিকটু এবং দেশটির প্রতিষ্ঠাকালীন মানবাধিকারের নীতির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।’ তিনি মনে করেন, দারিদ্র্য নিরসনে কোন জাদু বাস্তবতা সম্ভব না হলেও যুক্তরাষ্ট্রের মতো ধনী দেশে দারিদ্র্য মূলত ক্ষমতাবানদের ভূমিকার ফলাফল। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে সর্বোচ্চ দ্রুততায় দারিদ্র্যের অবসান ঘটানো সম্ভব।

স্বাস্থ্যহানিতে কর্মস্পৃহা হারাচ্ছে দরিদ্ররা, শ্রমিক সুরক্ষায় নেই পর্যাপ্ত নীতিমালা

যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতার কারণে স্বাস্থ্যহানি হচ্ছে দরিদ্রদের। এতে তারা হারিয়ে ফেলছে কর্মস্পৃহা, যার প্রভাব পড়ছে তাদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে। যারা দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়েছেন, কিংবা চিকিৎসার অভাবে দাঁত হারিয়েছেন, তাদের জন্য নেই সুরক্ষার ব্যবস্থা। শ্রমিক সুরক্ষায় রাষ্ট্রীয় নীতিমালার অভাবে বঞ্চনার শিকার সেখানকার লাখ লাখ দরিদ্র মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক বৈষম্য ও মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর জাতিসংঘের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদন থেকে এসব কথা জানা গেছে। 

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক বৈষম্য ও মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর জাতিসংঘ সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘে নিয়োজিত বিশেষ দূত ফিলিপ অ্যাস্টন তার দায়িত্বের অংশ হিসেবে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দারিদ্র্য ও মানবাধিকার পরিস্থিতির বিপন্ন বাস্তবতার কথা তুলে এনেছেন। তার গবেষণা এবং এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির ভয়াবহতাকেই তুলে ধরেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চিকিৎসার জন্য তহবিল বরাদ্দ না থাকায় যুক্তরাষ্ট্রে দরিদ্র মানুষদের স্বাস্থ্যহানি ঘটছে, যা তাদের কর্মক্ষতা হ্রাস করছে। অ্যালস্টন তার প্রতিবেদনে লিখেছেন, স্বাস্থ্যহানির কারণে সামাজিক সুরক্ষা তহবিলের সহায়তা নিতে বাধ্য হওয়া এইসব দরিদ্র মানুষদের নিয়ে সমালোচকদের অভিযোগ, তারা কাজ না করে বসে বসে অর্থ নিচ্ছে। অথচ শুরুতেই যদি তাদের চিকিৎসার জন্য তহবিল বরাদ্দ থাকত, তাহলে শ্রম বাজার থেকে তাদের ছিটকে পড়তে হতো না। সরকারি নীতিমালার অভাবে কর্মক্ষেত্রে কোনও সুরক্ষার ব্যবস্থা নেই দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের। ফলে পঙ্গুুত্ব বরণ করে এখন তাদেরকে সামাজিক সুরক্ষা তহবিলের অর্থে জীবন যাপন করতে হচ্ছে। অ্যালস্টন মনে করেন, শুরুতেই যদি শ্রমিকের নিরাপত্তা বিধানে সরকারি আইন বলবৎ করা হতো তাহলে তাদের পঙ্গুত্ব বরণ করতে হতো না। আর কর্মহীন হয়ে গিয়ে দরিদ্রদের জন্য বরাদ্দ করা সামাজিক সুরক্ষা তহবিলের অর্থে জীবন ধারণে বাধ্য হতে হতো না। ওয়েস্ট ভার্জিনিয়াতে পঙ্গুত্বের হার বেশি হওয়ার বিষয়টি লক্ষ্য করে অধ্যাপক অ্যালস্টন মার্কিন সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন। তারা অ্যালস্টনকে জানিয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণকারীদের অধিকাংশই কম শিক্ষিত। তারা প্রচণ্ড শারীরিক পরিশ্রম করতে হয় এমন কাজে নিয়োজিত ছিলেন। এদের অনেকেই কর্মক্ষেত্রে এমন দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন যেসবের বিষয়ে তাদের নিয়োগকর্তারা কোনও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে আইনত বাধ্য ছিলেন না। অর্থাৎ দরিদ্রদের কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষা দেয়া সংক্রান্ত যথাযথ সরকারি বিধান কার্যকর না থাকাতেই নিয়োগকর্তারা পঙ্গুত্বের আশঙ্কা আছে এমন সম্ভাব্য দুর্ঘটনার বিরুদ্ধে কোনও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেননি। যার শিকার হয়েছেন স্বল্প বেতনে কায়িক পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করা দরিদ্র ব্যক্তিরা। এখন তাদের সামাজিক সুরক্ষার অর্থের বিষয়ে সমালোচনা করা হচ্ছে, বলা হচ্ছে পঙ্গুত্ব ভাতা নেয়া অনেকেই প্রতারণা করে অর্থ নিচ্ছেন। মার্কিন দরিদ্রদের কাছে লভ্য চিকিৎসা সেবার অপ্রতুলতার কথা লিখতে গিয়ে অ্যালস্টন দাঁতের চিকিৎসার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে তিনি এমন অনেক দরিদ্রের দেখা পেয়েছেন যাদের একটা দাঁতও অবশিষ্ট নেই। কারণ ওই দরিদ্রদের জন্য যে চিকিৎসা সেবার বন্দোবস্ত আছে তাতে দন্ত চিকিৎসা অন্তর্ভুক্ত নয়। প্রাপ্ত বয়স্ক দরিদ্রদের জন্য কার্যত দাঁতের জন্য কোনও সুষ্ঠু চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করেনি সরকার। প্রচণ্ড ব্যথায় যদি দাঁত তুলে ফেলার মতো অবস্থা হয় তখন জরুরি চিকিৎসা সেবার অংশ হিসেবে দাঁত তুলে দেয়া হয়। অথচ দাঁতের সমস্যা ও দাঁত যথাযথভাবে সারিবদ্ধভাবে না থাকলে তা কর্মসংস্থানের সুযোগের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এ নিয়ে সম্প্রদায়ের অন্যান্যদের কাছ থেকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের শিকার হতে হয়, যা কর্মদক্ষতার ওপর প্রভাব ফেলে। নাগরিক অধিকার ও মর্যাদা ক্ষুণ্ন হওয়ার মতো এমন একটি মৌলিক বিষয়ে কেন্দ্রীয় বা প্রাদেশিক সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনও কার্যক্রম নেই।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ