শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

জাতীয় ঐক্য সফল হলে সরকার তিনদিনও টিকবে না---মির্জা ফখরুল

 

স্টাফ রিপোর্টার: বিদ্যমান অবস্থার পরিবর্তনে জাতীয় ঐক্যের প্রক্রিয়া চলছে জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ওই প্রক্রিয়া সফল হলে আওয়ামী লীগ তিনদিনও ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা এ বিষয়ে নিয়মিত বসছি, আলোচনা করছি। 

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর মুক্তির দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন। যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোরতাজুল করিম বাদরুর সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নয়নের সঞ্চালনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদসহ অন্যান্যরা প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির লক্ষে কাজ শুরু করেছি, সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। ম্যাডাম জেলে যাওয়ার আগে তিনিও আহ্বান জানিয়ে গিয়েছেন, সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে তিনি জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন। এখন সবাই সচেতন হয়ে উঠেছেন যে, আজকে দেশের যে অবস্থা তা চলতে দেয়া যায় না।

তিনি বলেন, আজকে এই অবস্থার পরিবর্তন করতে হলে সকলের একটা ঐক্য দরকার এবং সেই জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির কাজ চলছে। আমরা আশা করি এটাতে সফল হওয়া যাবে। আর এটাতে যদি সফল হওয়া যায় তাহলে ইনশাআল্লাহ আওয়ামী লীগ ৩ দিনও ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির কারণ আন্দোলন করার জন্যই। এটাই আন্দোলনের পথে নিয়ে যাবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ৭৮ হাজার মামলা আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দেয়া হয়েছে। আজকে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা শান্তিতে একটু বাসায় থাকতে পারেন না। আজকে তারা শরণার্থী হয়ে পড়েছে, অন্য এলাকায় গিয়ে থাকে।

তিনি বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিব আসছেন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেখতে। গোটা বাংলাদেশের মানুষ এখন শরণার্থী, শুধু রোহিঙ্গারা নয়। জাতিসংঘের মহাসচিবসহ সকলকে এই বাংলাদেশকেই দেখতে আসা উচিৎ।

দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আপনারা অন্তত ঘরের মধ্যে প্রোগ্রাম করা বন্ধ করেন। যদি ১০ জনও হয় রাজপথে নামুন। নিজেরা সংগঠিত হোন।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করতে হলে আন্দোলনের বিকল্প নেই। ২০১৪ সালের আন্দোলনের আগে আমরা যে আন্দোলন করেছি, সমস্ত রা¯স্তঘাট সেদিন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সে আন্দোলন এখন আর হচ্ছে না। ২০১৪ সালের পর আমরা পারিনি, কেন পারিনি তারও নানা কারণ আছে, আমি সেদিকে না যায়।

ফখরুল বলেন, আমরা রাজপথে জীবন দিতে পারি, কিন্তু যুবকদের তো আসতে হবে আমাদের সাথে? যুবদল, ছাত্রদলকে রাজপথে নেমে আসতে হবে, জনগণের কাছে যেতে হবে।

তিনি আরো বলেন, এমনি এমনি কিছুই পাওয়া যায় না। পাওয়ার জন্য সংগ্রাম করতে হয়। আজ আমাদের নেত্রী কারাগারে। তাকে যদি কারামুক্ত করতে হয়, তবে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই আন্দোলন আরো বেগবান করতে হবে। তরুণদেরকে মাঠে থাকতে হবে। আমি দেখেছি এই প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে আমার বুকের ওপর থেকে রাজকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে। কিন্তু তাকিয়ে দেখি তরুণরা নেই। বক্তব্য শুরু হলেই পেছন থেকে তরুণরা সবাই চলে যায়। তাই আজ সবাইকে আত্মসমালোচনা করতে হবে।

ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকার নির্বাচন নির্বাচন খেলা করে জনগণের সাথে তামাশা করছে। আজকের নির্বাচন কমিশন একটি অথর্ব কমিশন। তারা সরকারের নির্দেশ মতো কাজ করে তাদেরকে সহযোগিতা করছে। এই কমিশনকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে আগামীতে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হবে, যে নির্বাচনে ভোটাররা নির্ভয়ে গিয়ে ভোট দিতে পারবে। নির্বাচনে সেনা বাহিনী মোতায়েন করতে হবে।

সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারাই পরিস্থিতি তৈরি করছেন। সেই দিন বেশি দূরে নয় যেদিন জনগণ তাদের জবাব দিয়ে দেবে। আওয়ামী লীগ তাদের জন্মের শুরু থেকেই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, কোনোদিন করেনি। তারা স্বাধীনতার পর সব রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করে দিয়ে একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছে। আজকে যেমন রাস্তার পাশে লাশ পড়ে থাকে, ওই সময়ও এভাবে রাস্তার পাশে লাশ পড়ে থাকত।

মির্জা আব্বাস বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমেই এই সরকারের পতন হবে। আন্দোলনের সব রুপরেখা এখন প্রস্তুত রয়েছে। সময় হলে আন্দোলন হবেই। আর তখন এই সরকারকে বিদায় করতে কয়েক দিন সময় লাগবে। আমরা দীর্ঘ আন্দোলন করবো না। অতি অল্প সময়ের আন্দোলনের এই সরকারের বিদায় হবে। 

তিনি আরও বলেন, আমরা নেত্রীর মুক্তি এবং গনতন্ত্রের মুক্তির জন্য আন্দোলন করবো। এই দু আন্দোলন চলবে এক সাথে। এই সরকারের পতনের মাধ্যমেই দেশনেত্রীকে মুক্ত করা হবে। এই সরকারকে ক্ষমতায় রেখে নেত্রীকে মুক্ত করা সম্বব হবে না।

গয়েশ্বর রায় বলেন,এই সরকার আবার ৫ জানুয়ারির মত আরেকটি নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসতে চায়। তাদের প্রধান শক্তি হলে প্রতিবেশি একটি দেশ। কিন্তু এবার আর কাজ হবে না। জনগন এমন আন্দোলন গড়ে তুলতে তারা প্রতিবেশি দেশে পালতে সময় পাবে না। আর সময় নেই। এখনই আন্দোলনের উপযুক্ত সময়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ