শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

চট্টগ্রাম মহানগরীতে জন্ডিস প্রতিরোধে টানাপোড়েন

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম মহানগরীর হালিশহর এলাকায় জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির খবর  পাওয়া গেছে। এ ছাড়া আগ্রাবাদ এলাকায় জন্ডিস রোগী বাড়ছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। সম্প্রতি এইসব  এলাকায় জন্ডিসে ৩ জনের মৃত্যুুবরণ করার খবরে জন্ডিস প্রতিরোধে করণীয় পদক্ষেপ নিয়ে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে নানা টানাপোড়েন চলছে। পরস্পর দোষারোপ অব্যাহত রয়েছে সংস্থার কর্মকর্তাদের মধ্যে। 

অভিযোগ রয়েছে জন্ডিস প্রতিরোধে পদক্ষেপ গ্রহণের চেয়ে মিডিয়ায় বক্তব্য দিতে বেশী সময় ব্যয় করছে  সংস্থার কর্মকর্তারা । ডাক্তার সহ সিভিল সার্জন জন্ডিসের জন্য ওয়াসার পানিকে দায়ী করলেও চট্টগ্রাম ওয়াসা তা মানতে নারাজ। তারা ল্যাবেরটরীর রির্পোট দিয়ে প্রমাণ করতে চাইছে পানি জন্ডিসের জন্য দায়ী নয়। মোটকথা চলছে কাদাঁ ছোড়াছুড়ি।

 হালিশহর এলাকার বাসিন্দাদের কেউ কেউ অভিযোগ করে বলছে, চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি পরিশোধনের জন্য ব্যবহৃত চুন, ফিটকিরি নিম্নমানের বলে পানি ভালো ভাবে পরিশোধিত হচ্ছেু না।

এ দিকে স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার  পর্যন্ত ২১৮ জন জন্ডিস আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৩৯৬ জনে। সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান গনমাধ্যমকে বলেন, কিছুদিন আগে সরকারি হিসাব মতে ১৭৮ জন জন্ডিস আক্রান্ত রোগীর তথ্য পাই। বুধবার প্রতিটি হাসপাতালে জন্ডিস আক্রান্ত রোগীর তথ্য চাই। বৃহস্পতিবার দুপুুর পর্যন্ত ২১৮ জন রোগীর তথ্য বিভিন্ন হাসপাতাল দিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর তাদের আলাদাভাবে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে। বৃহত্তর হালিশহরে পানির সমস্যা সমাধানে জরুরি ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করা দরকার। শুধু হালিশহর নয়, আগ্রাবাদেও ১২ জন জন্ডিসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তারা পপুলার হাসপাতাল, সিএসিসিআর ও ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সিভিল সার্জন ডা: আজিজুর রহমান বলেন, পুরো চট্টগ্রামে এ রোগের প্রার্দুভাব দেখা দিয়েছে। যেখানে আক্রান্তের খবর পাচ্ছি সেখানে আমাদের টিম যাচ্ছে। আগ্রাবাদের আক্রান্ত এলাকায়ও যাবে। হালিশহরের মতো সেখানেও বিনামূল্যে চিকিৎসা ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দেওয়া হবে।

এদিকে গত বুধবার  সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম জেলা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান   বলেছেন,  হালিশহরে তিন ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনা  পানিবাহিত রোগে হয়েছে।   এতোদিন চুপ ছিলাম। সাধারণ জনগণের কথা ভেবে আর চুপ থাকতে পারছি না। ওয়াসার পানিতে সমস্যা আছে। পানির সমস্যা সমাধান না করলে জন্ডিস (হেপাটাইটিস ই ভাইরাস) ও পানিবাহিত রোগের সমাধান করা সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, হালিশহরে পানিবাহিত রোগ জন্ডিসে (হেপাটাইটিস-ই ভাইরাস) আক্রান্ত হয়ে তিনজনের মৃত্যুর অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করতে বুধবার চট্টগ্রামে এসেছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) দুই সদস্যের দল। হালিশহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ করবেন তারা। চট্টগ্রামে তিনদিন অবস্থান করার পর শনিবার ঢাকায় ফিরে যাবেন।

তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালের রিপোর্ট অনুযায়ী হালিশহরে জন্ডিসে গত দুই মাসে ১৭৮ জন আক্রান্ত হয়েছে। তবে বেসরকারি হাসপাতালের কোনো তথ্য পাইনি। বর্তমানে হালিশহরে জন্ডিসে আক্রান্তদের চিকিৎসা প্রদান, বিনামূল্যে পানি বিশুদ্ধকরণ ওষুধ সরবরাহ ও অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। সম্মেলনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী, আইইডিসিআর-এর তদন্ত টিমসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে চট্টগ্রাম ওয়াসার  ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফজলুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলছেন, সিভিল সার্জনের বক্তব্যের কোন ভিত্তি নেই। বিশেষজ্ঞ প্রতিবেদনের উদ্বৃতি ছাড়া এ ধরণের বক্তব্য খুবই  ‍দু:খজনক। তিনি বলেন, শুনেছি সিভিল সার্জন সাংবাদিক সম্মেলন করে হালিশহর এলাকায় ওয়াসার পানিতে জীবাণু রয়েছে এমন দাবি করেছেন। তিনি কীভাবে জানলেন ওয়াসার পানিতে জীবাণু রয়েছে? আমরা নিজেরাই ওয়াসার পানির স্যাম্পল বিশেষজ্ঞ দল দিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করিয়েছি। তারা সেখানে কোন সমস্যা পাননি। এরপরেও সিভিল সার্জনের এরকম মন্তব্য আমরা বিস্মিত।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ