শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

খুলনায় আবাসিক হোটেলগুলো অপরাধীদের নিরাপদ আস্তানা

খুলনা অফিস : খুলনায় আবাসিক হোটেলে খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। হোটেলগুলোর একটি বড় অংশ অপরাধীদের নিরাপদ আস্তানায় পরিণত হয়েছে। ব্যবসায়ী, কলেজছাত্র, নারীদের ধর্ষণের পর অপরাধীরা নির্বিঘ্নে খুন করে পালিয়ে যাচ্ছেন। খুন ছাড়াও অসামাজিক কার্যকলাপ রয়েছে হোটেলগুলোতে। প্রশাসন কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন অধিকাংশ হোটেল মালিক।
জানা গেছে, আবাসিক হোটেলের বোর্ডারদের ছবি, নাম-ঠিকানা, ভোটার আইডি কার্ড, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও মোবাইলফোন একটি নির্দিষ্ট ফরমে লিপিবদ্ধ করার নিয়ম রয়েছে। মোবাইলফোন নম্বর সঠিক কি না, তা তাৎক্ষণিক যাচাই করে নিতে হবে। পূরণ করা তথ্য ফরমের ফটোকপি প্রতিদিন স্থানীয় থানায় পাঠানোর নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন অধিকাংশ হোটেল মালিক। ফলে একের পর এক অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।
গত ২৫ জুন নগরীর প্রাণকেন্দ্র হোটেল আজমল হোসেন থেকে ইনসান হোসেন মোল্লা (২৬) নামের এক মোবাইল শো-রুমের মালিকের লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই হোটেলের ৫০২নং রুম থেকে এ লাশের মুখ ও নিম্নাঙ্গ গ্যাস লাইটের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার চিহ্ন পাওয়া যায়। অবশ্য এ ঘটনায় পুলিশ তার প্রেমিকা মোসা. মরিয়ম খাতুন ওরফে তানিয়াকে নড়াইল থেকে আটক করে। পরে আদালতে সে খুনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে।
খুলনা সদর থানার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. আশরাফুল আলম বলেন, ওই হোটেলে ওঠার সময় শুধু নাম ঠিকানা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। নিয়মানুযায়ী বোর্ডারদের ছবি হোটেল কর্তৃপক্ষ সংগ্রহ করেননি। নিয়মানুযায়ী ছবিসহ নানা তথ্য সংগ্রহ করার নিয়ম রয়েছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) সোনালী সেন বলেন, নগরীতে ইতোমধ্যেই সব থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া যেসব হোটেল বোর্ডাদের ভোটার আইডি কার্ড ও ছবি সংগ্রহ না করে রুম দিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জানা যায়, ২০১৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর এলাকায় একটি আবাসিক হোটেল থেকে অচেনা এক নারীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। চুকনগরের গাজী আবাসিক হোটেলে সাকিব ও শিখা নামের দুইজন নিজেদের স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে একটি কক্ষ ভাড়া নেন। দ্বিতীয় তলার ৪ নম্বর কক্ষের এই অতিথিদের মধ্যে পুরুষটি সকালে নাস্তা আনার কথা বলে বাইরে যান। এরপর তাকে আর দেখা যায়নি। কক্ষেও তাদের কোনো সাড়া-শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল না। একপর্যায়ে হোটেল ব্যবস্থাপক ৪ নম্বর কক্ষের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে ওই নারীকে মৃত দেখতে পান।
ডুমুরিয়া থানার তৎকালীন ওসি সুভাষ বিশ্বাস ওই সময় সাংবাদিককে জানান, ওই নারীকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বড় বাজারের হোটেল ইমান থেকে ইসতিয়াক আহমেদ (২৩) নামে এক কলেজছাত্রের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ইসতিয়াক খুলনা সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার বিভাগের অষ্টম সেমিস্টারের ছাত্র ছিলেন। তিনি বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার ঢুলিগাতী গ্রামের কবির হোসেনের ছেলে। একই বছরের এপ্রিল মাসে নগরীর ডাকবাংলো মোড়ে রাজমুকুট নামে আবাসিক হোটেল থেকে মোখলেছুর রহমান (২৬) নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। মোখলেছুর রহমান ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে ওই হোটেলের ৪০৭নং কক্ষে ওঠেন। ওই হোটেল পরনের লুঙ্গি দিয়ে ফাঁস দেয়া অবস্থায় সিলিং ফ্যানের সাথে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। এটা হত্যা না আত্মহত্যা তা এখনও অজানাই রয়ে গেছে।
সূত্র মতে, আবাসিক হোটেলগুলোতে একটি অংশ শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য মিথ্যা তথ্য দিয়ে হোটেলের কক্ষ ভাড়া করে। অনেক ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বোর্ডার পরিচিত হওয়ায় হোটেল কর্তৃপক্ষ কোনো তথ্যই লিপিবদ্ধ করে না। চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা ও জুয়ার আসরসহ আবাসিক হোটেলগুলোয় বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। আবাসিক হোটেল থেকে পুলিশের নিয়মিত চাঁদা নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
একাধিক হোটেল মালিক জানান, নিয়মিত চাঁদা দিয়েই হোটেল চালাতে হয়। এ কারণে বাড়তি ঝামেলা না করে টাকা দিয়েই সব ম্যানেজ করেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ