খুলনা ওয়াসা’র বোতল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নির্মাণে বিলম্ব
খুলনা অফিস : খুলনা মহানগরীর পানি সঙ্কট নিরসনে খুলনা ওয়াসার নেয়া পানি বিক্রির উদ্যোগ বিলম্ব হচ্ছে। ৩০ জুন প্লান্টটি চালু হওয়ার কথা থাকলেও আজও শেষ হয়নি মূল ভবনের কাজ। ফলে ওয়াসার দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পানি সঙ্কট নিরসনে নগরবাসীর আশা আশাই থেকে যাচ্ছে- এমনটি মনে করছেন খুলনার সুধীজনরা।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, খুলনা ওয়াসার পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় ২০১৬ সালের গোড়ার দিকে মুজগুন্নি রায়েরমহল (কেডিএ জলিল সরণি, বয়রা) এলাকায় বোতল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। যেখানে জমির পরিমাণ ১৫ দশমিক ৩৭ কাঠা। উদ্যোগটি বাস্তবায়নে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ মেশিন ট্যুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) লিমিটেড এর সাথে ওয়াসা কর্তৃপক্ষের চুক্তি হয়। চুক্তিপত্র সম্পন্নের পর ১৯ কোটি ৭৫ লাখ ৬৩ হাজার ৩৬২ টাকা বরাদ্দে ২০১৬ সালের নবেম্বর মাসে প্লান্টটির আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু হয়। চুক্তি অনুযায়ী আগামী ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে প্লান্টটি চালু করার কথা ছিল। কিন্তু জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহেও এ প্লান্টের দ্বিতল বিশিষ্ট মূল ভবনের কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি। প্রকল্পের নির্দিষ্ট মেয়াদের কাজ সম্পন্ন হতে আরও প্রয়োজন দু’মাস। ওয়াসার এ প্রকল্পের কাজ নিয়ে অনেকটা হতাশা প্রকাশ করছেন খুলনার সুধীজনেরা।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা খুলনার কো-অর্ডিনেটর এডভোকেট মো. মোমিনুল ইসলাম জানান, নির্দিষ্ট সময়ে কাজ সম্পন্ন হওয়ার প্রত্যাশা খুলনাবাসীর ছিল। কিন্তু সে প্রত্যাশা পূরণ হলো না। ওয়াসার অধিকাংশ কাজে এমনটি হচ্ছে। ফলে ওয়াসায় অভিজ্ঞ ম্যানেজমেন্টের অভাববোধ করছি।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব শেখ আশরাফ উজ জামান জানান, নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না করে বিলম্ব করার মানে হলো বাজেট বৃদ্ধি করা। এভাবে সময়সীমা বৃদ্ধি করা এবং সাথে সাথে নতুন করে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া আর সে অর্থ তসরূপ করাই হচ্ছে। কাজের কাজ হচ্ছে না। নগরবাসীর আশা আশাই থেকে যাচ্ছে আর সরকারের অর্থ বৃদ্ধির নামে খরচ হচ্ছে।
প্রকল্প ব্যবস্থাপক খান সেলিম আহম্মদ জানান, ২০১৬ সালের নবেম্বর মাসে প্লান্ট নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। কাজটি গত মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল কিন্তু বিভিন্ন কারণে কাজটি শেষ হতে বিলম্ব হচ্ছে। তবে আশা করছি চলতি বছরের আগস্ট মাসের মধ্যে কাজ শেষ করে পরীক্ষামূলক প্রকল্প চালু করা সম্ভব হবে। মহানগরীতে প্রতিদিন ২৪ কোটি লিটার পানির প্রয়োজন। সেখানে ওয়াসা সরবরাহ করছে ১১ কোটি ১৭ লাখ লিটার পানি। বাকী পানির সঙ্কট নিরসনের জন্য ওয়াসা এমন উদ্যোগ নিয়েছে।
খুলনা ওয়াসা’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল্লাহ পিইঞ্জ জানান, সময়মতো সকল পণ্যের সরবরাহ না থাকায় কাজে বিলম্ব হচ্ছে। আশা করছি জুলাই মাসের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে এ প্লান্টের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে। এ প্রকল্পটি চালু হলে এ অঞ্চলের মানুষ অনেকাংশে উপকৃত হবে।
মহানগরীর পানির সঙ্কট নিরসনে খুলনা ওয়াসা রায়েরমহলে নির্মাণ করছে বোতল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট। সরকারি অর্থে ‘খুলনা ওয়াসা পানি সরবরাহ’ প্রকল্পের আওতায় এটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। এটি চালু হলে ঘন্টায় ১৭ হাজার ৩৫০ লিটার বিশুদ্ধ খাবার পানি উৎপাদন করা সম্ভব হবে। প্রতিদিন (৮ ঘন্টায়) পানি উৎপাদন হবে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮শ’ লিটার। যার মাধ্যমে নগরীর পানির চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে মোট চাহিদার ০.০৫৮ শতাংশ। পাশাপাশি খুলনা ওয়াসার আয়ও বৃদ্ধি পাবে। প্লান্টটিতে ৩শ’, ৫শ’ মিলিলিটার এবং ১, ২, ৩ এবং ৫ লিটারের বোতল তৈরি ও বোতলজাতকরণ পানি উৎপাদন করা হবে। পাশাপাশি ২০ লিটারের বোতলজাতকরণ পানি সরবরাহ করা হবে। যা বাণিজ্যিকভাবে বাজারে বিক্রি হবে। মানুষ ওই বোতলজাতকৃত পানি নিত্য-নৈমিত্তিকভাবে পান করাসহ বিভিন্ন সামাজিক আচার অনুষ্ঠান ও সভা-সেমিনারে ব্যবহার করতে পারবে।