শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

কুরবানীর জন্য প্রস্তুত হচ্ছে খামারীরা

# গ্রামে গ্রামে ঘুরে পশু কেনা শুরু করেছে ব্যবসায়ীরা
# রাজধানীর আশেপাশে গড়ে উঠেছে শতাধিক খামার
কামাল উদ্দিন সুমন : রাজধানীর নিকটবর্তী রূপগঞ্জের তারাব পৌরসভার যাত্রামুড়া এলাকায় ‘নাবিল এগ্রো ফার্ম’। খামারটি আশেপাশের এলাকায় দুধ এবং গরু বাজারজাত করে আসছে দীর্ঘ দিন থেকে। কিন্তু আসন্ন ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করে কোরবানীর জন্য এখন থেকেই গরু কিনে মজুদ  শুরু করেছে। সামনের কোরবানীতে গরু বাজারজাত করে যাতে ভালো আয় করতে পারে এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করেছে  খামারীর মালিক  নাঈম ভুইয়া। বর্তমানে ৪ বিঘা জমিতে গড়ে উঠখামারটিতে গরুর সংখ্যা ৩’শ ৫০ টি। এর মধ্যে ২’ শ ৫০ টি ষাড় ও ১’শ টি গাভী রয়েছে।
খামারটির মালিক নাঈম ভুইয়া জানান, কোরবানীর সময় সাধারণত পাইকাররা বেশী লাভের আশায় ভারত থেকে গরু এনে বিশেষ ধরনের ইনজেকশন দিয়ে গরুকে মোটাজাতকরণ করে বিক্রি করে থাকে। এতে করে ক্রেতারা প্রতারিত হয়। কিন্তু ‘নাবিলা  এগ্রো’ কোরবানীর ঈদে যাতে করে ক্রেতাদের প্রতারিত না হতে হয় এ কারণেই তারা সুষম খাদ্য দিয়ে গরু পালন করছে। গো খাবারে তৃণলতার ব্যবহার বাড়ানো হয়েছে। ফলে এ খামারের গরুর মাংসের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ তুলনামূলক ভালো।
শুধু নাঈম ভুইয়াই নয় তার মতো রাজধানী আশ্বে পাশ্বে  বিপুল সংখ্যক খামারী এখন থেকেই কোরবানীর জন্য পশু সরবরাহ করতে প্রস্তত হচ্ছে। রুগগঞ্জ, আড়াইহাজার সোনারগাঁ, মীরকাদিম, কেরানীগঞ্জের রুহিতপুর, আইন্তা, আবদুল্লাহপুর, ইকোরিয়া, সাভারের আশুলিয়া, মোহাম্মদপুরের বছিলা, গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে খামারীরা কোরবানীর প্রস্তুতি শুরু করেছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় স্থানীয়ভাবে অনেক ব্যবসায়ী  গ্রাম থেকে এখনই পশু কেনা শুরু করেছে। তাদের প্রত্যাশা ঈদুল আযহার বাকী যে সময় রয়েছে তাতে  পশু লালন করে ভালো আয় করতে পারবে।
সূত্র জানায়, কোরবানী ঈদের বাকি আছে প্রায় ৬ সপ্তাহ। তবে এরই মধ্যে গ্রাম থেকে গরু কেনা শুরু করেছে  অনেকে ব্যবসায়ীর। তাদের টার্গেট কোরবানীর ঈদ। এখন কম দামে পশু কিনে তা ভালো দামে বিক্রি করার টার্গেট নিয়ে তারা এগুচ্ছে।  অল্প পুজির অনেক ব্যবসায়ী কেউ ৫টা কেউ ১০টা পশু কিনে কোরবানীর টার্গেট নিয়ে লালন পালন শুরু করেছে।
সূত্র জানায়, দেশে এখন কোরবানির উপযোগী গরু আছে ৫০ লাখÑ মহিষ ২০ লাখ, আর ছাগল-ভেড়া আছে প্রায় ৭৬ লাখ, যা দেশের মোট চাহিদা সম্পূর্ণভাবে পূরণ করতে সক্ষম বলে মনে করছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, খামারি ও ব্যবসায়ীরা।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, কোরবানি ঈদ ঘিরে প্রতিবছরই বাড়ছে ভারতীয় গরুর ওপর নির্ভরশীলতা। এত দিন অবৈধ পথে ভারতীয় গরু এলেও প্রতিবছরেই বৈধ পথে গরু আনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বছরের পর বছর ভারতীয় গরুর ওপর এই নির্ভরশীলতা বিপাকে  পড়তে হয় দেশীয় ব্যবসায়িদের । একদিকে দেশের অভ্যন্তরে গোখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি, অন্যদিকে ভারতীয় গরু আমদানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয় দেশের ব্যবসায়ীরা।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, কোরবানি ঈদ সামনে রেখে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বেপারিরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পশুর দরদাম শুরু করছেন। কিনছেনও অনেকে। তবে গোখাদ্যের দাম বাড়ায় পশু লালন-পালনে এবার খরচ আগের তুলনায় বেড়ে গেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, এত বছর দেশে মোট গরুর চাহিদার ৭০ শতাংশ জোগান দিতেন দেশীয় খামারিরা, বাকি ৩০ শতাংশ আসত ভারত থেকে। বর্তমানে দেশে গরুর খামারির সংখ্যা বাড়ছে। তা ছাড়া অনেকে কোরবানী ঈদ টার্গেট করে সীমিত পুঁজি খাটিয়ে লাভের আশায় দুই-একটি করে গরু কিনে লালন-পালন করেন। সব মিলিয়ে দেশে এখন যে পরিমাণ পশু আছে, তা কোরবানির চাহিদা পূরণে সক্ষম বলে মনে করেন তারা। অন্যদিকে ভারতীয় গরুর মূল্য কম ও দেশে লালন-পালনের খরচ বৃদ্ধিতে দুই দেশের গরুর মধ্যে দামের তফাত তৈরি করবে বলেও মনে করেন তারা।
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছের রমজান আলী ও আফজাল, লালমনিরহাটের ফজলুল হক, নীলফামারীর জলঢাকার মাইদুলসহ বেশ কজন খামারি জানান, আসন্ন ঈদ সামনে রেখে গরু মোটাতাজা করছেন তারা। পশুখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং বর্ষা মৌসুমে পানিতে মাঠ ডুবে যাওয়ায় গোখাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। এ জন্য ব্যয়ও বেড়েছে। তার পরও তারা লাভের আশায় কষ্ট করে পশু পালন করছেন। কিন্তু তাদের শঙ্কা- ঈদ উপলক্ষে ভারত থেকে গরু আমদানি হলে লাভ তো দূরের কথা, লোকসানের মুখে পড়বেন তারা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, দেশে গবাদিপশুর সংখ্যা প্রতিবছর ৫.৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। আগামী ২০২১ সাল নাগাদ জাতীয় উৎপাদন থেকে দেশের পুরো চাহিদা মেটাতে হলে উৎপাদন নুন্যপক্ষে বছরে গড়ে শতকরা ৬ থেকে ৯ ভাগ হারে বাড়াতে হবে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানিয়েছে, বর্তমানে দেশে খামারের সংখ্যা প্রায় সোয়া পাঁচ লাখ। দেশে এখন গরু আছে ২ কোটি ৩০ লাখ। এর একটি বড় অংশ গাভী ও কম বয়সী। জবাই উপযোগী গরু আছে প্রায় ৫০ লাখ, ছাগল আছে ২ কোটি ৬০ লাখ, ভেড়া আছে ৩৪ লাখ ও মহিষ আছে ১৫ লাখ।
প্রণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (সম্প্রসারণ) ড. মো. মেহেদী হাসান দাবী করেন,দেশের আভ্যন্তরীণ উৎপাদিত পশু দিয়েই কোরবানির পশুর চাহিদা মেটানো সম্ভব। তবে অন্যান্য দেশ থেকে অবৈধভাবে পশু আমদানি বন্ধ করলে দেশীয় খামারিরা লাভবান হবেন। তিনি বলেন, কোরবানির জন্য গরুর চাহিদা তুলনামূলক বেশি থাকে। চাহিদা অনুযায়ী দেশের খামারগুলোয় পর্যাপ্ত সংখ্যক গরু আছে।
আড়াইহাজরের খাককান্দা এলাকার খামারী মোতালেব জানান, এখন থেকেই কোরবানীর পশু কেনা শুরু হয়েছে। কোরাবানীকে সামনে রেখে খামারীরা বিভিন্ন জাতের গরু যেমন দেশী, ওল বাড়ির বলদ, শিবভী, রাজস্থানী, কংকরাজ, ঘির, ফ্রিজিয়ান, নেপালী, হরিয়ানা, দেশাল, পারনা ষাড়সহ বিভিন্ন প্রজাতির গরু কোরবানীকে টার্গেট করে লালন পালন করছে। ঈদ-উল আযহায় দেশীয় গরু দিয়ে গরুর চাহিদা মেটানো সম্ভব  বলে তিনি মনে করেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ