বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

ব্যাংক থেকে আমানত উঠিয়ে নেয়ার হিড়িক ॥ আতঙ্কে এমডিরা

মুহাম্মাদ আখতারুজ্জামান: সুদের হার নির্ধারণ নিয়ে ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলার পরিবর্তে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। ৬ শতাংশ মুনাফায় আমানত পাচ্ছে না ব্যাংগুলো। উল্টো আমানত রাখার পরিবর্তে উঠিয়ে নেয়ার হিড়িক পড়েছে ব্যাংকগুলোতে। আবার সুদের হার কমালেও ব্যাংক মালিকরা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) লাভ করার তাগাদা দিয়ে যাচ্ছেন। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বেসরকারি ব্যাংকের এমডিরা। ফলে ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিকল্প নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন বেসরকারি ব্যাংকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)। তারাই ঠিক করে দিয়েছে ব্যাংকের ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ এবং আমানতের সুদহার ৬ শতাংশ। চলতি ১ জুলাই থেকে সব ব্যাংকে এ নিয়োগ চালু হওয়ার কথা থাকলেও অনেক ব্যাংক তা চালু করতে পারেনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সিদ্ধান্তের ফলে কয়েক হাজার ব্যবসায়ীকে সুবিধা পেলেও কয়েক কোটি আমানতকারী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে পুরা আর্থিক খাতে অস্থিরতা দেখা দেবে। 

জানা যায়, দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ১ জুলাই থেকে তিন মাস মেয়াদী আমানতের সর্বোচ্চ সুদের হার ৬ শতাংশ আর ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ হবে বলে জানিয়েছিল বিএবি। তারা জানায় এর চেয়ে কোনো ব্যাংক সুদ বেশি নিতে পারবে না। যেসব ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত মানবে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সংগঠনটির সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদার এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বলেন, 

জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকে বেসরকারি খাতের পাঁচটি ব্যাংক ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামানোর ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক, এসআইবিএল, ইউনিয়ন ব্যাংক, ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংক রয়েছে। এসব ব্যাংক প্রায় ৫০ শতাংশ ব্যাংক খাতের প্রতিনিধিত্ব করে। তারা যদি সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণ নেয়ার ঘোষণা দেয় তাহলে আমরা কেন পারব না? তিনি বলেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আমাদের সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণের সুদহার নামাতেই হবে। বিএবির সিদ্ধান্ত যদি কোনো ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি) না মানে তাদের বিরুদ্ধে পরিচালক ও চেয়ারম্যানরা ব্যবস্থা নেবে। এ ক্ষেত্রে যদি কোনো সমস্যা হয় তাহলে আমরা বিষয়টি (উদ্যোক্তারা) দেখবো। 

সেই সিদ্ধান্ত ১ জুলাই থেকেই বাস্তবায়ন হয়েছে বলে জানান বিএবি। আর গত ২ জুলাই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর এমডিদের সংগঠন এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) প্রেসিডেন্ট ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে নয়-ছয় সুদ কার্যকর শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংক তা কার্যকর করেছে এবং পর্যায়ক্রমে সব ব্যাংক কার্যকর করবে। তবে এজন্য নীতিগত বেশকিছু ছাড় চেয়েছেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি)। তারা বলেন, ঋণে ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ এবং আমানতের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ সুদ হার আমরা নির্ধারণ করেছি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটি কার্যকর করতে বলেছে।

ব্যাংকগুলোতে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেসরকারি ব্যাংকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সিদ্ধান্ত মানতে গিয়ে কোনো কোনো ব্যাংক আমানতের সুদহার আড়াই শতাংশেও নামিয়েছে। আবার কেউ কেউ উচ্চ সুদে আমানত নিচ্ছে। বিএবির সিদ্ধান্তের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে ৯১ দিন, ১৮২ দিনসহ বিভিন্ন মেয়াদী নতুন নতুন আমানত প্রকল্প ঘোষণা করেছে। দেখা যায়, ১ লাখ টাকা জমা রাখলে মাসে ৯০০ টাকা মুনাফা দিচ্ছে বেসরকারি প্রিমিয়ার ব্যাংক। শাখার সামনে এমন ব্যানার ঝুলিয়ে ব্যাংকটি বলছে, এটাই সর্বোচ্চ মুনাফা। আর প্রতি লাখে ইস্টার্ণ ব্যাংক ২৫০ টাকা, ঢাকা ব্যাংক ৫০০ টাকা এবং ওয়ান ব্যাংক দিচ্ছে ৬০০ টাকা।

আমানতের সুদহার ৬ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনায় বিপাকে পড়ছেন সুদের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিরা। বেশ কয়েকটি ব্যাকের কর্মকর্তারা জানান, আমানতকারীদের যেসব আমানতের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে তারা আগের মতো সুদ না পাওয়ায় তা তুলে নিচ্ছেন। এতো কম সুদে ব্যাংকগুলোও এখন আমানত পাচ্ছে না। এমনকি সরকারি ব্যাংকও বেসরকারি ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে। 

জানা যায়, চলতি মাসেও তিন মাস মেয়াদি আমানতে রাজধানী উন্নয়ন করপোরেশন, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ বিমান, পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল ১০ শতাংশের বেশি সুদে টাকা রাখছে বলে জানা গেছে। নতুন ব্যাংকগুলোর বেশি সুদ দিয়ে পুরোনো ব্যাংক থেকে এসব আমানত নিয়ে যাচ্ছে। এখন প্রশ্ন উঠছে, ১০ শতাংশের বেশি সুদে আমানত নিয়ে তারা কীভাবে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দেবে।

ব্যাংকগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রাহকদের মেয়াদী যেসব আমানত রয়েছে, তার বড় অংশই তিন মাস ও এক বছর মেয়াদী। মেয়াদ পূর্তির আগে এসব আমানতের সুদহার কমানোর সুযোগ নেই। এখন বেশির ভাগ ব্যাংকই সুদহার ৬ শতাংশের নিচে নামিয়ে এনেছে। সুদহার কমিয়ে দেয়ায় এখন আমানত উত্তোলন শুরু হয়ে গেছে। বেশি মুনাফা না পেয়ে বেসরকারি খাতের আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক থেকে ১৭০ কোটি টাকা আমানত তুলে নিয়েছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। মেয়াদ শেষ হওয়ায় নতুন করে ৬-৭ শতাংশ মুনাফা দিতে চায় আল-আরাফাহ্ ব্যাংক। আগে ব্যাংকটির মুনাফা ছিল ১০ শতাংশের কাছাকাছি। তবে অন্য কয়েকটি ব্যাংক এ আমানত প্রায় ১০ শতাংশ সুদ দিয়ে নিয়ে গেছে। সাউথইস্ট, স্টান্ডার্ডসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংকের এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। আমানতের নতুন সুদহার কার্যকর হওয়া ব্যাংকে আমানত আসা কমে যাচ্ছে। কারণ, ৬ শতাংশ সুদের বিপরীতে আমানতকারীদের ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে হবে। এ ছাড়া প্রতিটি ব্যাংক হিসাবে রয়েছে নানা ধরনের মাশুল ও সরকারি আবগারি শুল্ক। ফলে মেয়াদ শেষে গ্রাহকের টাকা প্রকৃত মূল্যে কমে যাবে। মতিঝিলের বেশ কয়েকটি ব্যাংকের শাখায় গিয়ে জানা যায়, নতুন সুদহার ঘোষণার পর আমানত আসা কমে গেছে। নতুন সুদ হার নির্ধারণের পর তেমন কেউ আমানত রাখতে আসেননি। 

এদিকে বিএবি সুদহার কমানোর কথা বলছে, অন্যদিকে বেশি মুনাফা করতে নিজ ব্যাংকের এমডিদের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিচ্ছেন। ফলে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকেদের (এমডি) মধ্যেও আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ নিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নাম না বলার শর্তে একাধিক ব্যাংক কর্মকর্তা তাদের এ আশঙ্কার কথা জানান। 

সব মিলে নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএবি এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিকল্প নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। আগে যেসব নীতিনির্ধারণী কলাকৌশলের মাধ্যমে মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রণ হতো, চাপ দিয়ে তা পরিবর্তন করে নিয়েছেন ব্যাংক পরিচালকদের সংগঠন বিএবি। ফলে মুদ্রা ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। হিসাবনিকাশ ছাড়াই ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর) সমন্বয়ের সীমা বাড়ানো ও নগদ জমার হার (সিআরআর) কমিয়ে দেওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাংক পরিচালকদের চাপে সরকারের মধ্যস্থতায় এমন নানা পরিবর্তন আনা হয়েছিল মূলত সুদহার কমানোর আশ্বাসে। বিপরীতে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে একক পরিবারের ক্ষমতা বাড়ানো, করপোরেট কর কমিয়ে মুনাফা বেশি নেয়ার সুযোগসহ আরও নানা সুযোগ পেয়েছেন ব্যাংক পরিচালকেরা। 

এ ব্যাপরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, সুদহার নির্ধারণে বিএবির আইনত কোনো অধিকার নেই। সরকার এভাবে তাদের ক্ষমতায়ন করলে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিকল্প হয়ে উঠবে। তাদের সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ক্ষতিতে পড়বে কয়েক কোটি আমানতকারী, আর সুবিধা পাবে কয়েক হাজার ব্যবসায়ী। বড় আমানতকারীরা অর্থও পাচার করতে পারেন। আর যাদের খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের বেশি, তারা নতুন এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে পারবে না। তারা আমানতের সুদহার আরও কমিয়ে ও মাশুল বৃদ্ধি করে মুনাফা করার চেষ্টা করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রণের একমাত্র এখতিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে শুধু পরামর্শ দিতে পারে সরকার। এসব পরামর্শ মানতেও বাধ্য নয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর এখন তো সরকার নয়, ব্যাংকমালিকেরাই সব করছেন। তিনি বলেন, ঋণের সুদ কমাতে গিয়ে যে জোর করে আমানতের সুদ কমানো হচ্ছে, তাতে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সানেম-এর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, বেসরকারি ব্যাংকগুলো এখন নিজেদের ইচ্ছে মতো চলছে। ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনও নিয়ম-নীতি মানছে না তারা। বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার কথা থাকলেও উল্টো বেসরকারি ব্যাংকের মালিকরাই কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এখন চাপে রাখছে। 

এ ব্যাপারে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংক ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা নানাভাবে সুযোগ সুবিধা নিতে চাইবে। কিন্তু আমানতকারীদের ক্ষতি যাতে না হয় সেজন্য ভূমিকা রাখবে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক যদি ক্ষমতা প্রয়োগ করতে না পারে, তাহলে সেটা হবে দুঃখজনক। 

বিশেষকজ্ঞরা বলছেন, আমানতের চেয়ে ঋণের প্রবৃদ্ধি দ্বিগুণ। আমানতের সুদ নিয়ে নতুন করে যে সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে, তাতে ব্যাংকে টাকা আসা কমে যাচ্ছে। ফলে আরও বেশি টাকা সঞ্চয়পত্রসহ অন্য খাতে চলে যাবে। আমানত না পেলে তো ঋণ দেয়া সম্ভব হবে না। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি করতে আমানতেও প্রবৃদ্ধি থাকতে হবে। তারা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক শক্ত ভূমিকা রাখতে না পারায় দেশের ব্যাংকিং খাতের ওপর ক্রমেই বিএবির কর্তৃত্ব বাড়ছে। মুদ্রানীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নীতিনির্ধারণী বিষয়গুলোও হোটেলে বসে পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। এতে ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা না এসে উল্টো খারাপের দিকে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, মার্চ শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ লাখ ৫৪ হাজার ১১৩ কোটি টাকা। এ পরিমাণ আমানত থেকে ব্যাংকগুলো ৯ লাখ ৬৪ হাজার ২০৫ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। ওই সময় পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর কাছে মোট উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল ২ লাখ ৪৯ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা। উদ্বৃত্ত তারল্যের মধ্যে ব্যাংকগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে সর্বনিম্ন ১ কোটি ৭৬ লাখ ৯৭৪ কোটি টাকা সিআরআর ও এসএলআর হিসেবে জমা রাখতে হয়। সে হিসাবে মার্চ শেষে সরকারি-বেসরকারি ও বিদেশী খাতের ৫৭টি ব্যাংকের হাতে বিনিয়োগ করার মতো উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। উদ্বৃত্ত এ তারল্যের সিংহভাগই ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর হাতে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ