বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

ভোটাধিকার খর্ব করাই স্বৈরশাসকের ক্ষমতায় থাকার পুঁজি

ডাঃ মোঃ মুহিব্বুল্লাহ : গণতান্ত্রিক পরিবেশে ভোটাধিকার একটি নাগরিক অধিকার। দেশের নাগরিক হলে সে সেদেশের প্রতিটি নির্বাচনে যেমন পারে নিজে প্রার্থী হতে তেমনি পারে স্বাধীনভাবে যাকে ইচ্ছা তাকে ভোট দিয়ে তার সমর্থনপুষ্ট প্রতিনিধির দ্বারা সমাজের নেতৃত্ব পরিচালনা করাতে। অবশ্য নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভোটারের যোগ্যতার উপরে তার নেতার গুণাগুণ নির্ভর করে। নাগরিক নিজে নিজের রুচি মাফিক নেতাকেই সমর্থন দিয়ে থাকে এটাই স্বাভাবিক। এজন্য যুগে যুগে নবী রাসূলগণ আজীবন মানুষের রুচির সংস্কার সাধনে শ্রম দিয়ে গেছেন। কেনো না জনতার চিন্তার পরিশুদ্ধি ও বিকাশ সাধন হলে এবং তাদের রুচির পরিবর্তন করাতে পারলেই সে সমাজের সকল জনতাকে আল্লাহর মনোনীত একই জীবনব্যবস্থার পতাকা তলে একই নিয়মনীতি ও আইন শৃঙ্খলায় পরিচালনা করাতে আর কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকেনা। যে দায়িত্ব অর্পণ করেই আল্লাহ তার পক্ষ থেকে বিশ্ববাসীর কাছে নিজের বার্তাবাহক পাঠিয়েছেন। পক্ষান্তরে কোনো স্বৈরাচারী অপশক্তি তাদের নিজেদের মতাদর্শের স্বপক্ষে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে বা সমর্থনে দল ভারি করতে ব্যর্থ হলে তখন তারা আর নিজেদের পক্ষে মানুষের চিন্তার পরিবর্তন সাধনের পিছে ধৈর্য্যের সাথে অপেক্ষার নীতি গ্রহণ করেনা। শংকা দেখা গেলেই সাথে সাথে পেশী শক্তি প্রয়োগ করে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করে বসে। যেকোনো মূল্যে তখন তারা তাদের ঐ অপছন্দকারী জনতার ঘাড়ে চেপে বসে। দমনে রাখতে যতই নির্যাতন, নিপীড়ন  করার প্রয়োজন হক না কেনো তা তারা করে থাকে।
যুগযুগান্তরের ইতিহাস এমনই সাক্ষ্য বহন করে। আসলে যাদের রাজনীতিটা মুলত নীতির দিক থেকে রাজা নয়, বরং ক্ষীণ; নিঃশ্ব বা দুর্নীতিগ্রস্ত। তারা আজীবন তার দেশের জনগণের মধ্যে সদাসর্বদাই অনৈক্য ও ভাঙ্গন সৃষ্টি করে রাখার কাজে ব্যতিব্যস্ত থাকে।
সর্বশক্তি ব্যয় করে জনগণকে সুস্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হতে না দেয়ার চক্রান্ত ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে। কল্যাণকর সচেতনতার গুণ ও জাগরণ তাদের মধ্যে যেন জন্ম নিতে না পারে সেদিকে থাকে তাদের গভীর পরিকল্পনা প্রসূত পদক্ষেপ। কেনো না তারা জানে যে জনগণ যদি নির্ভুল সিদ্ধান্ত  নেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে তাহলে সে সচেতন গুণে গুণান্বিত জনগণ ভোটাধিকারের মাধ্যমে তাদের হাতে আর ক্ষমতা তুলে দেবেনা। তারা দেশ ও জাতিকে শান্তিময় পরিবেশে পরিণত করতে ধার্মিক, দেশপ্রেমিক, চরিত্রবান, সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বের সন্ধান করে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবে। একারনে এমন ধরনের মানুষেরা জনগণের মধ্যে সচেতনতা ও সঠিক সিদ্ধান্তের ব্যাপারে নির্ভুল পদক্ষেপ গ্রহণের সম্ভাবনাময় গুণের উপস্থিতি দেখতে পেলেই তখন আর তাদের ভোটের আসা করে না। যথেচ্ছাচারিতার সাথে যেকোনো বিনিময়ে ক্ষমতাকে আর হাত ছাড়া হতে দেয়না। স্বাধীনতার পরে কয়েক যুগ মানুষ এমন কথা শুধু পরদেশের ব্যাপারে প্রবীণদের মুখে আর ইতিহাসের পাতা থেকে জানলেও বর্তমানে আমাদের এই প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশেই আবল-বৃদ্ধ-বণিতা সবাই-ই তা প্রত্যক্ষ করছে। সংসদ নির্বাচন তো দুরের কথা ইউনিয়ন কাউন্সিল নির্বাচনে মেম্বারি ভোট পর্যন্ত ভোটাররা স্বাধীন পরিবেশে মনপুতভাবে ভোট প্রদান করে নিজের প্রার্থীর জনপ্রিয়তা যাচায়ের সুযোগও পাচ্ছে না। সাম্প্রতিক খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচন দুটি থেকে আমরা এর চেয়ে অনেক বেশী কিছুও দেখতে পেয়েছি। নির্বিঘেœ ভোট দেয়া তো দুরের কথা কিছু ভোটার ঘরে ঘুমাতেও পারিনি। পক্ষান্তরে স্বৈরাচারীভাবে ক্ষমতার দখলদার চলমান সরকারি দলের মনোনীত প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণা দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়িতে চড়েও হয়েছে। কোনো ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত ভোটারের চেয়ে কাস্ট হওয়া ভোটের সংখা পাঁচগুণ ছাড়িয়ে যেতেও দেখা গেছে। "তোমার ভোট হয়ে গেছে" বলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে অসংখ্য ভোটারকে। গণমাধ্যম কর্মীদের মাধ্যমে দেখাগেছে পুরা নতুন ব্যালট বইটা ধরেই সরকার দলীয়  নৌকা প্রতীকে ভোটের সিল মারা। যে বই ব্যালট বক্সের মধ্যেই এখনো ঢুকান হয়নি। যা প্রমাণ করে এ ব্যালট বইতে প্রকৃত ভোটার ভোট দেয়নি। মুল ভোটারে ভোট দিলে তার ব্যালট টা সে নিজে ভাজ করে বক্সে সংরক্ষণ করে রেখে যেত। আরো তিনটি সিটি বরিশাল, সিলেট ও রাজশাহীতে নির্বাচন আসছে। তবে সে নির্বাচনেও ভোটারকে কেমন প্রস্তুতি নিতে হবে তা সবারই বুঝা হয়ে গেছে। ক্ষমতাসীন দলের কর্মী বাহিনী আর নির্বাচন পরিচালনা সংস্থার সদস্যবৃন্দ থাকতে এ ভোটারদের কৃষাণ কামাই করাটাই বৃথা। কি দরকার আর ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার। গেলেইতো হয় শুনতে হবে "ফিরে যা, তোর ভোট হয়ে গেছে।"  না হয় "নৌকায় ভোট দিলে ভিতরে যা, নতুবা মাইর খাওয়ার আগে কেটে পড়।" নির্বাচনের মতো আনন্দ উৎসবপূর্ণ অনুষ্ঠানের পরিবেশ যদি হয় এমন। তাহলে সে অনুষ্ঠান কপালে না আসাটাই সৌভাগ্য। স্বাধীন দেশের নাগরিকের নাগরিক অধিকার যদি কোনো ব্যক্তি বা দলের হাতে পণবন্দী হয়ে যায় তাহলে কী স্বাধীনতা থাকে? বরং তাকে পরাধীনতার হস্ত বদল ধরে নেয়া ছাড়া উপায়ান্ত থাকেনা। ভোট নৈরাজ্যের এহেন নীল দৃশ্য ১৯৭০ এর নির্বাচনের চেয়ে নিকৃষ্ট। সেদিন তো আমরা আমাদের নেতাকে ভোট দিয়ে তার ফল কমপক্ষে দেখেছিলাম। অবশ্য স্বৈরনীতিক পাক সরকার আমাদের বিজয় সত্ত্বেও দখল দেয়নি। যা না দিলেও বিশ্ব সেদিন আমাদের বিজয় প্রতক্ষ করেছিল। অথচ আজ সেটুকুও পাচ্ছিনা। ভোটার হয়েও ভোটকেন্দ্রের ধারে কাছেও যেতে পারছি না। তবে জেতদ্বীপ্ত এই বাঙ্গালী জাতির ইতিহাস সদাই বিজয়গাঁথা।
স্বৈরাচারী পাকবাহিনী ও জাগ্রত বাঙ্গালীর হাত থেকে তাদের বিজয়কে কেড়ে নিতে পারিনি। এ ভূখন্ডে কস্মীনকালেও কোনো স্বৈরশক্তির উত্থান ঘটলে তাদেরও সে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়া দরকার। এদেশের বীর বাঙ্গালী কোনোদিন কোনো স্বৈরাচারের জন্য এই বাংলার মাটিকে উর্বর পেতে দিবেনা। বড়জোর সংশোধন হওয়ার জন্য প্রদত্ত সুযোগ দানে বাধিত করতে পারে। আর সে সময় ফুরিয়ে আসা অবধি পরিবর্তনের দেখা না পেলে তারা অবশ্যই নিজেদের পদক্ষেপ গ্রহণ করবেই করবে। যে পরিবেশ আজ জাতির সামনে মাত্র সময়ের দাবি নিয়ে অপেক্ষমান।
ভোটাধিকার বঞ্চিত জাতি তাদের এই অধিকার হন্তাদের বিরুদ্ধে দারুণভাবে ফুসে উঠা। ঠিক যেন অগ্নীগিরির জ্বালামুখ বা বিস্ফোরণমুখী বর্ম বিশেষ।  কখন যেন ফেটে পড়ে। তবে জাতি হাতের কর্মসূচি বেশ উত্তপ্ত। বিশ্ববাজারে এদেশের ভাবমর্যাদা আর বেশী দিন নষ্ট হতে দিয়ে দেশকে গ্লানি জর্জরিত বা ইমেজ সংকটের মধ্যে ফেলে রাখতে চায়না। তাই সাম্প্রতিক সমগ্র দেশবাসীর মধ্যে ভোটাধিকার হরণকারী স্বৈরনীতিক ফ্যসিস্টদেরকে রুখে দিয়ে দেশকে কল্যাণ অভিমুখে এগিয়ে নিয়ে চলার প্রবণতার প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি বিশ্বসমাজও এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব ভুমিকায় নেমে পড়েছে। তাই আসুন আমরা দেশ বিদেশের সকল গণতন্ত্রচর্চাকারীরা গণতন্ত্র হত্যাকারীদের নাগরিক অধিকার বিরোধী সকল কর্মকা-ের বিরুদ্ধে একযোগে নিয়মতান্ত্রিক পদক্ষেপ গ্রহণে সক্রিয় ভুমিকা রেখে দেশকে সকল বদনামীর তিলক থেকে রক্ষা করি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ