শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

রাস্তায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ১৬ লাখের বেশি লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালক

ইবরাহীম খলিল : লাইসেন্স না থাকলেও রাস্তায় গাড়ি নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ১৬ লাখের বেশি অদক্ষ চালক। অদক্ষ হাতে তাদের বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইন শৃঙ্খলাবাহিনী এবং মনিটরিং সংস্থাগুলোর চোখের সামনে দিয়েই এসব চালক দিব্যি গাড়ি চালাচ্ছেন। কার্যকর প্রতিকার না থাকায় সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে সড়কে বাড়ছে লাশের মিছিল। বিশেষ করে ঈদের সময় আসলে রাস্তায় বেড়ে যায় অদক্ষ চালকের সংখ্যা। এ সময় বেড়ে যায় দুর্ঘটনাও।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়কে এসব মৃত্যুর ঘটনার অধিকাংশই আসলে বেপরোয়া পরিবহন চালকদের দায়হীন হত্যাকাণ্ড। পরিবহন শ্রমিকদের শক্তিশালী ট্রেড ইউনিয়ন ও মালিকদের তৎপরতার কারণে সড়কে নিহতদের পরিবার বিচার পায় না। চালকরাও দৃষ্টান্তমূলক কোনো শাস্তি ছাড়াই আইনের আওতা থেকে বেরিয়ে যান। জবাবদিহিতার অভাবে তারা আবারও গাড়ি চালানায় প্রতিযোগিতায় পাল্লায় মেতে ওঠেন।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত যানবাহনের সংখ্যা ছিল ৩৪ লাখ ৯৮ হাজার ৬২০টি। এর মধ্যে ২২ লাখ ৬ হাজার ১৫৫টিই মোটরসাইকেল। এসব যানবাহনের বিপরীতে ড্রাইভিং লাইসেন্সপ্রাপ্ত চালকের সংখ্যা ১৮ লাখ ৬৯ হাজার ৮১৬ জন। বাকী যারা রাস্তায় গাড়ি চালাচ্ছেন তাদের কোন লাইসেন্স নেই। দক্ষতাও নেই। ফলে অদক্ষ ও অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকরাই সড়কে বিশৃঙ্খলার মূল হোতা হিসেবে কাজ করছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১৬ লাখের বেশি যানবাহন চালকের কোনো বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। কিন্তু তারাই রাজধানীসহ দেশের সড়ক-মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। দেশে পর্যাপ্ত ড্রাইভিং স্কুল এবং ইন্সট্রাকটর না থাকার কারণে লাইসেন্স বিহীন অদক্ষ চালকেরা গাড়ি চালান বলে দায় এড়ান দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা। তবে সড়ক দুর্ঘটনায় বিপুল সংখ্যক প্রাণহানির জন্য সেসব কারণকে দায়ী করা হয় এরমধ্যে অন্যতম চালকদের অদক্ষতা।
বেসরকারি সংগঠন নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির নিয়মিত মাসিক জরিপ ও পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনের তথ্যে বলা হয়েছে, চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে সারাদেশে ২৩৫৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩১৭ নারী ও ৩২৬ শিশুসহ ২,৪৭১ জন নিহত হয়েছেন। একই সময়ে ৩৬৮ নারী ও ১৬৮ শিশুসহ আহত হয়েছেন ৫৯৭৫ জন।
পর্যবেক্ষণে বলা হয়, বছরের প্রথম ৬ মাসে প্রাণঘাতি সড়ক দুর্ঘটনাগুলোর অধিকাংশই ঘটেছে বাস ও ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের ভারী যানবাহনের চালকদের অসতর্কতা ও খাম খেয়ালিপনার কারণে।
জাতীয় কমিটির পর্যবেক্ষণে আরো বলা হয়, গত ৬ মাসে নিহতের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে সাধারণ যাত্রী ৭৭৩ জন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে পথচারী ৭০১ ও মোটরসাইকেল আরোহী ৫৪৮ জন। নিহত পথচারীদের মধ্যে ২১৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে অসতর্কভাবে সড়ক পার হতে গিয়ে। এছাড়া এই ৬ মাসে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনাকবলিত হয়েছে পণ্যবাহী ট্রাক ৭৫৬টি। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে যাত্রীবাহী বাস ৬০৬টি এবং তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে মোটরসাইকেল ৫৯৬টি। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর যথাযথ নজরদারির অভাব রয়েছে। এছাড়া সড়ক ও মহাসড়কে যান্ত্রিক-অযান্ত্রিক মিলিয়ে ক্ষুদ্র যানবাহনের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি, মহাসড়কসহ দূরপাল্লার সড়কে মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন, পথচারীদের অসতর্কতা এবং সব ধরনের চালকদের মধ্যে প্রতিযোগীতামূলক মনোভাব সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়।
যাত্রী কল্যান সমিতির হিসেব অনুযায়ী গত ঈদ যাত্রায় ১১ জুন থেকে ঈদ শেষে বাড়ি থেকে কর্মস্থলে ফেরা ২৩ জুন পর্যন্ত ১৩ দিনে ২৭৭ টি সড়ক দূর্ঘটনায় ৩৩৯ জন নিহত ১২৬৫ জন আহত হয়।
সংস্থাটিরপর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী বহন, বিরতিহীনভাবে যানবাহন চালানো, অদক্ষ চালক ও হেলপার দ্বারা যানবাহন চালানো, মহাসড়কে অটোরিক্সা, ব্যাটারি চালিত রিক্সা, নসিমন-করিমন ও মোটর সাইকেল অবাধে চলাচল, মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকা, বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানো, সড়ক-মহাসড়কে ফুটপাত না থাকা এবং সড়ক-মহাসড়কে বেহাল দশা এসব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। সংস্থাটি প্রশিক্ষিত চালক গড়ে তোলার জন্য জাতীয় পর্যায়ে সরকারী ভাবে চালক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার ওপর জোর দেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউটের পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন মনে করেন, সড়ক দুর্ঘটনায় অতিরিক্ত প্রাণহানির মূল কারণ হচ্ছে, বাসের চালকদের যে ধরনের প্রশিক্ষণ দরকার তা নেই। এছাড়া চালক আর যাত্রীদের সচেতনতার মাত্রাও খুবই করুণ।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ