বগুড়ায় পুলিশের এএসআই ও সোর্সকে গণধোলাই
বগুড়া অফিস: ডিবি পুলিশ পরিচয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষকে মাদক দিয়ে চালান দেয়ার ভয় দেখিয়ে হয়রানি এবং টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে বগুড়া সদর থানার এএসআই কামরুল ও তার সোর্স নাইমকে গণ ধোলাই দিয়েছে গ্রামবাসী। শুক্রবার সন্ধ্যায় বগুড়া সদরের এরুলিয়া ইউনিয়নের ঘোলাগাড়ি গ্রামে পুলিশকে গণধোলাইয়ের ঘটনা ঘটে। পরে রাত ১০টায় অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে গণধোলাই এর শিকার দু’জনকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এঘটনায় শুক্রবার রাতে এএসআই কামরুলকে থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয় এবং সোর্স নাইমকে পুলিশ হেফাজতে আটক রাখা হয়েছে।
গতকাল শনিবার এলাকায় সরেজমিনে গেলে গ্রামবাসী জানায়, গত ৪ দিন আগে থেকে বিকেলে দুইজন মোটরসাইকেল যোগে এলাকায় আসেন। তারা নিজেদেরকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে মোটরসাইকেল আটক করে, আবার কাউকে ইয়াবা দিয়ে চালান দেয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় শুরু করেন। ঘোলাগাড়ি গ্রামের রহিমা বেগম জানান, বুধবার সন্ধ্যার পর স্থানীয় একটি হোটেল থেকে তার ছেলে আইনুরসহ ৫ জনকে আটক করে একটি ফাঁকা মাঠে নিয়ে যায়। এরপর ইয়াবা দিয়ে চালান দেয়ার ভয় দেখিয়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১ হাজার করে ৫ হাজার টাকা নেয়। ওমর ফারুক নামের একজন জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি ছোট বোনকে মোটরসাইকেলে করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। রাস্তায় তাকে আটক করে তাদের ভাই বোন সম্পর্ক কি-না জানতে চায়। সম্পর্ক নিশ্চিত হওয়ার পর ইয়াবা দিয়ে চালান দেয়ার ভয় দেখিয়ে ৫ হাজার টাকা আদায় করে। মুদি দোকানী রফিকুল জানান, তার দোকান থেকে সিগারেট নিয়ে টাকা চাইলে দোকানে মেয়াদ উত্তীর্ন পাউরুটি থাকায় ৫শ’ টাকা জরিমানা আদায় করে। তালেব মহুরীর মোটরসাইকেল আটক করে নেয়া হয় ২৬০০ টাকা। কম্পিউটারের দোকানদার এখলাসের দোকানে আইপিএল এর জুয়া খেলা হয় মর্মে অভিযোগ আছে বলে ৪ হাজার টাকা নেয়। দর্জ্জি দোকানি লুৎফরের বিরুদ্ধে গাঁজা সেবনের অভিযোগ আছে মর্মে আটক করে বেদম মারপিট করে আদায় করা হয় ৫ হাজার টাকা। শুক্রবার বিকেলে ওই দুইজন আবারো এলাকায় গেলে গ্রামের লোকজন ডিবি অফিসে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হয় যে ডিবি পুলিশের কোন সদস্য ঘোলাগাড়ি গ্রামে যায়নি। এসময় গ্রামের লোকজন তাদের নাম জানতে চাইলে তারা নিজেদের নাম হাসান ও মিজান বলে জানায়। পরে ডিবি অফিসে আবারো যোগাযোগ করে গ্রামের লোকজন জানতে পারে হাসান ও মিজান নামে ডিবিতে কেউ নাই। পরে তাদের পরিচয়পত্র দেখতে চায় গ্রামের লোকজন। পরিচয় পত্র দেখাতে না পারলে শুরু হয় গণধোলাই।
এদিকে, ডিবি পুলিশ পরিচয়ে গ্রামের লোকজনের কাছ থেকে টাকা আদায়ের খবর পেয়ে ডিবির এসআই নুরুজ্জামানের নেতৃত্বে ডিবি পুলিশের একটি টীম ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পায় দুইজনকে স্থানীয় স্কুল ঘরে নিয়ে আটকে রাখা হয়েছে।
রাত ৮টার দিকে সদর থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ তাদেরকে উদ্ধার করতে গেলে স্কুল মাঠে হাজার-হাজার মানুষ সমবেত হয় এবং তাদের শাস্তি নিশ্চিত এবং গত কয়েকদিনে হাতিয়ে নেয়া টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করে দুইজনকে থানায় নিয়ে যাওয়ার দাবী জানায়। এসময় সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো: কামরুজ্জামান জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন- যাদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়েছে তাদের তালিকা তৈরী করে থানায় জমা দেন, টাকা ফেরতের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পরে এলাকাবাসীর পক্ষে তালেব মুহুরী তালিকা তৈরী করেন। তালেব মুহুরী জানান, এপর্যন্ত ২২জনের নাম ঠিাকা পাওয়া গেছে, যাদের কাছ থেকে গত কয়েকদিনে প্রায় ৮০ হাজার টাকা আদায় করেছে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে।
বগুড়া সদর থানার ওসি বদিউজ্জামান জানান, কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই বাইরে যাওয়ার অভিযোগে শুক্রবার রাতেই এএসআই কামরুলকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে পাঠানো হয়েছে। তার সোর্স নাইম পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। তার ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি আরো জানান, এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।