শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

বাংলাদেশে অবৈধ দেশী অস্ত্রের ক্রেতা কারা?

বিবিসি বাংলা : বাংলাদেশে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকায দুটি অস্ত্র তৈরির কারখানার খোঁজ পেয়েছে র‌্যাব।
র‌্যাবের কর্মকর্তা মেজর মেহেদী হাসান বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, কালারমারছড়া ইউনিয়নে শনিবার মধ্যরাতে অভিযান চালিয়ে ২০টি বন্দুক, গুলী ও অস্ত্র তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামসহ দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি জানিয়েছেন, মহেশখালীর বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় বেশ কয়েকটি অস্ত্র তৈরির কারখানা থাকার তথ্য রয়েছে তাদের কাছে। এর ভিত্তিতেই তারা তাদের অভিযান চালিয়েছে।
এসব কারখানায় লম্বা বন্দুক, কাটা বন্দুক এবং শুটারগান তৈরি হতো বলে তিনি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অস্ত্র তৈরির কারখানা খুঁজে পাবার কথা শোনা যায়। ২০১৭ সালেও মহেশখালীর পাহাড়তলিতে আরেকটি অস্ত্র  তৈরির কারখানার সন্ধান পেয়েছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এর আগে ২০১৬ সালে কক্সবাজারের চকরিয়ায় পাওয়া গিয়েছিল একটি অস্ত্র কারখানা।
এছাড়া মুন্সীগঞ্জ, ময়মনসিংহ এবং নাইক্ষংছড়িসহ বিভিন্ন জেলায় অস্ত্র তৈরির কারখানা ও সরঞ্জামাদি তৈরির কারখানা পাবার কথা জানিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
কিন্তু দেশে তৈরি এসব অবৈধ অস্ত্রের গন্তব্য কোথায়?
চট্টগ্রামের স্থানীয় সাংবাদিক মীর মোঃ আকরাম হোসেন, যিনি দেশীয় অস্ত্র ব্যবসা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন, তিনি জানিয়েছেন, মূলত তিন শ্রেণীর ক্রেতা রয়েছে দেশীয় অস্ত্রের।
তিনি বলেন, অস্ত্রের কারিগররা জানিয়েছেন, মূলত তিন ক্যাটাগরির মানুষ তাদের কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্র কেনে। এর মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক নেতা, জলদস্যু এবং রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ। নির্বাচনকে সামনে রেখে তাদের অস্ত্রের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও তারা জানিয়েছে।
সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার টাকা থেকে দাম শুরু হয এসব অস্ত্রের, আর সর্বোচ্চ আশি হাজার টাকা পর্যন্ত অস্ত্র রয়েছে তাদের কাছে। আর তারা যদি সরঞ্জাম হাতে পায়, তাহলে একে-ফরটিসেভেন পর্যন্ত বানাতে পারে, বলেন তিনি।
মিঃ হোসেন জানিয়েছেন, দেশীয অস্ত্রের মধ্যে একনলা বন্দুক, দোনলা বন্দুক, কাটা বন্দুক, শটগান, পাইপগান এবং ছোট সাইজের পিস্তল বেশি সহজলভ্য।
আর এ ধরনের কারখানা স্থাপনের জন্য সাধারণত গহীন জঙ্গল এবং প্রত্যন্ত কিছু চর অঞ্চলকে বেছে নেয়া হয।
কিন্তু নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা এসব অবৈধ দেশীয় অস্ত্রের চাহিদা কেবল এই তিনটি শ্রেণীর মধ্যে সীমিত বলে মনে করেন না।
দেশীয় বাজারের বাইরে অনেক সময় প্রতিবেশী দেশগুলোর বিচ্ছিন্নতাবাদী বিভিন্ন সংগঠনের কাছেও এসব অস্ত্র বিক্রি হয বলে মনে করেন অনেকে।
বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব পিস এন্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ এর প্রেসিডেন্ট, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মেজর জেনারেল (অব.) এএনএম মুনীরুজ্জামান বলছেন, ক্ষুদ্রাস্ত্র এবং হালকা অস্ত্র চালান করার জন্য বাংলাদেশের ভূমি ক্রমশ অনেক বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। দেশের ভেতরকার বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আছে এসব ক্ষুদ্রাস্ত্র এবং হালকা অস্ত্র জোগাড করার চেষ্টা করে।
ইদানীং একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের জঙ্গী গোষ্ঠীগুলো বিস্ফোরক দ্রব্য ছাড়াও ক্ষুদ্র অস্ত্র এবং হালকা অস্ত্র সংগ্রহের দিকে তারা নজর দিচ্ছে। এছাড়াও ক্রিমিনাল অর্গানাইজেশন এবং ক্রিমিনাল গ্যাং আছে, যারা চোরাচালানি বা ছিনতাই এর সাথে জড়িত, তারাও এ ধরনের ক্ষুদ্রাস্ত্র কেনে, বলেন তিনি।
কিন্তু স্থানীয় অস্ত্র তৈরির এসব অবৈধ কারখানা যেহেতু অত্যন্ত গোপনে এবং লোকচক্ষুর অন্তরালে কাজ করে, সে কারণে এ ধরণের অপরাধ প্রতিহত করার জন্য কেবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
মি মুনীরুজ্জামান বলছেন, এজন্য বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় আরো বাড়াতে হবে, যাতে এক বাহিনীর সংগৃহীত তথ্য অন্য বাহিনীগুলো ব্যবহার করতে পারে।
তিনি বলছেন, সেই সঙ্গে সমাজের ভেতর থেকেই এর বিরুদ্ধে সমন্বিত নজরদারি এবং এক ধরনের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ