শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

বিশেষ আইনের বিলুপ্ত ধারায় মামলা না করতে হাইকোর্টের নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার : দীর্ঘ ২৭ বছর আগে বিলুপ্ত হওয়া ধারায় থানায় মামলা করছে পুলিশ। আর এ মামলায় গ্রেফতার হয়ে অনেকে কারাগারেও রয়েছে। বিশেষ ক্ষমতা আইনের বিলুপ্ত এই ১৬ ধারায় দেশের থানাগুলোতে মামলা না করতে পুলিশ প্রধানকে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
দেশের বিভিন্ন থানায় ওই ধারার মামলার কয়েকজন আসামীর আগাম জামিন আবেদনের শুনানিতে গতকাল  সোমবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
এ আদালতের সংশ্লিষ্ট সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. ইউসুফ মাহমুদ মোরসেদ বলেন, বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৬ ধারা ২৭ বছর আগেই বাতিল হয়েছে। কিন্তু ‘ভুলবশত’ দেশের বিভিন্ন থানায় এখনও ওই ধারায় মামলা করা হচ্ছে।  যেহেতু আইনের ওই ধারার কোনো অস্তিত্বই নেই, তাই ওই ধারায় মামলা করাটা বেআইনি। তাই আদালত ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৬ ধারায় মামলা না করতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পুলিশ প্রধানকে নির্দেশ দিয়েছে।
এ আইন কর্মকর্তা বলেন, বিলুপ্ত ১৬ ধারায় ‘প্রিজুডিস’, অর্থাৎ অপরাধ সংগঠনের আগে গোপন সলাপরামর্শ, ষড়যন্ত্রের মত বিষয়ের কথা বলা ছিল। বিলুপ্ত ওই ধারায় মামলা হলে অপরাধ করেও অনেক অপরাধী পার পেয়ে যাচ্ছে। আবার অপরাধ না করেও অনেককে কারাগারে কাটাতে হচ্ছে।
বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৬(১) বলা ছিল, কোনো ব্যক্তি ক্ষতিকর কোনো কাজ করতে পারবে না। আর ১৬(২) ধারায় বলা ছিল, কোনো ব্যক্তি ক্ষতিকর কোনো কাজ করলে ৫ বছর পর্যন্ত কারাদ- বা অর্থদ- অথবা উভয় দ-ে দ-িত হবে।
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে আশুলিয়ায় পোশাক শ্রমিকদের একটি অংশ ১৫ হাজার টাকার ন্যূনতম বেতন নির্ধারণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করলে বিজিএমইএ ৫৫টি কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেয়। পরে ১৯ ডিসেম্বর ‘ষড়যন্ত্র’ বা ‘অপরাধ সংঘটনের চক্রান্তের’ অভিযোগ এনে আশুলিয়ার পুলিশ ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের বিলুপ্ত ১৬(২) ধারায় বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ১৫ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে।
ওই ঘটনায় সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের তৎকালীন দপ্তর সম্পাদক খালেকুজ্জামান লিপন তাদের অঙ্গসংগঠন গার্মেন্ট শ্রমিক ফ্রন্টের সাভার-আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল থানার সাধারণ সম্পাদক আহমেদ জীবনকে গ্রেপ্তারের বৈধতা চালেঞ্জ করে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন।
ওই রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ১৭ জানুয়ারি বিচারপতি সৈয়দ রিফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. সেলিমের হাই কোর্ট বেঞ্চ একটি রুল জারি করে। পুলিশের গ্রেপ্তারের আদেশকে কেন আইনি এখতিয়ার বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় ওই রুলে।
ইউসুফ মাহমুদ মোরসেদ বলেন, ১৯৯০ সালে এইচ এম এরশাদের পতনের পর তখনকার সরকারপ্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ একটি অধ্যাদেশ দিয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৬, ১৭ ও ১৮ ধারা বাতিল করে। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠনের পর সংসদে আইনের ওই সংশোধনী পাস করা হয়।
এরপর ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার মধ্যে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ‘ক্ষতিকর ও ধ্বংসাত্মক’ কাজ থেকে বিরত রাখার যুক্তি দেখিয়ে ওই আইনের ১৬ ধারাটি পুনরুজ্জীবিত করা হয়।
২০০৮ সালের নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে ওই অধ্যাদেশসহ ১২২টি অধ্যাদেশ সংসদের প্রথম অধিবেশনে পাসের জন্য উপস্থাপন করা হলেও ১৬ ধারা পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়টি সংসদের অনুমোদন পায়নি। ফলে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৬, ১৭ ও ১৮ ধারা বাতিল অবস্থাতেই থেকে যায়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ