গাজীপুরে দুইবাসের প্রতিযোগিতায় প্রাণ গেল মেডিকেল শিক্ষার্থীর
গাজীপুর সংবাদদাতা: গাজীপুরে আবারো বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে তায়েরুন্নেছা মেমোরিয়াল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক শিক্ষার্থী মঙ্গলবার রাতে নিহত হয়েছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে ও দায়ীদের গ্রেফতার এবং শাস্তির দাবিতে বুধবার ওই মেডিক্যালের চিকিৎসক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা মানব বন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে। এসময় তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক প্রায় দেড় ঘন্টা অবরোধ করে রাখে। অবরোধকালে বিক্ষুব্ধরা কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করেছে। এতে সড়কের উভয়দিকে যানবাহন আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে আটকে থাকা যানবাহনের যাত্রীদের দীর্ঘ সময় দূর্ভোগ পোহাতে হয়।
নিহত শিক্ষার্থীর নাম ইউসুফ আলী যুবরাজ (২০)। তিনি নরসিংদী জেলার মনোহরদী থানার বড়চাপা ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের মৃত ইদ্রিস মন্ডলের ছেলে। ইউসুফ আলী ওই মেডিকেল কলেজের ডিপ্লোমা নার্সিং বিভাগে ১ম বর্ষের ছাত্র। এ ঘটনার প্রায় দু’সপ্তাহ আগে একই মহাসড়কে প্রতিযোগিতা করে যাওয়ার সময় অপর এক বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে একই হাসপাতালের চিকিৎসক সাম্মীর শাকির প্রকাশ নিহত হন।
গাজীপুরের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) সালেহ উদ্দিন আহমেদ ও বিক্ষোভকারীরাসহ স্থানীয়রা জানান গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কুনিয়া তারগাছ এলাকাস্থিত তায়েরুন্নেছা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ইউসুফ আলী যুবরাজ মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে তার মেস থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশ দিয়ে পায়ে হেটে ওই হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। তিনি হাসপাতালের গেইটের সামনে পৌছলে এনা পরিবহনের দুটি বাস প্রতিযোগিতা করে যাওয়ার সময় ওভারটেকিং করতে গিয়ে একটি বাস ইউসুফকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ওই হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু তার অবস্থার অবনতি দেখে সেখান থেকে আশংকা জনক অবস্থায় তাকে রাজধানীর উত্তরাস্থিত বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। এ ঘটনায় রাতেই তায়েরুন্নেছা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা বিক্ষোভ শুরু করে কলেজের সামনে মহাসড়কের উপর অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে। এসময় বিক্ষুব্ধরা কয়েকটি গাড়ির কাঁচ ভাংচুর করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়ে সড়কের উপর থেকে সরিয়ে দিলে রাত ৩টার দিকে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।
পরদিন বুধবার সকালে তায়েরুন্নেছা মেমোরিয়াল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন শুরু করে। এসময় তারা ঘাতক বাসের চালককে দ্রুত গ্রেফতার ও শাস্তি প্রদান, কলেজের সামনে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ ও নিহতের পরিবারকে সরকারিভাবে সহায়তা প্রদানের দাবি জানায়। একপর্যায়ে বেলা সাড়ে ১০টার দিকে তারা কলেজের সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর অবস্থান নিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে। এসময় বিক্ষুব্ধরা কয়েকটি গাড়ির কাঁচ ভাংচুর করে। এতে ওই সড়কের উভয়দিকে যানবাহন আটকা পড়ে চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে। পরে পুলিশ দায়ীদের গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে প্রায় একঘন্টা পর অবরোধকারীরা তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে এবং সড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। বিক্ষোভকারীদের অবরোধের কারণে মহাসড়কের উভয় পশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে আটকে থাকা যানবাহনের যাত্রীদের অবর্ণনীয় দূর্ভোগ পোহাতে হয়।
প্রসঙ্গতঃ গত ১২ জুলাই বিকেলে একই মহাসড়কে প্রতিযোগিতা করে যাওয়ার সময় এক বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে একই হাসপাতালের চিকিৎসক সাম্মীর শাকির প্রকাশ নিহত হন।