সিটি নির্বাচনে জনগণকে ভোট দিতে দেয়া হয়নি
রাজশাহী অফিস : গতকাল বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে বিএনপি’র সমাবেশে নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন, এবারের সিটি নির্বাচনে জনগণকে ভোট প্রদান করতে দেয়নি সরকারের বাহিনী। তারা জনগণকে কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমত নৌকায় সিল মেরেছে।
বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মালোপাড়াস্থ বিএনপি কার্যালয়ের সামনের প্রধান সড়কে এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সদ্য অনুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ব্যাপক জালিয়াতি, কারচুপি, ভোট ডাকাতি, জুলুম-নির্যাতন এবং নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতিত্বের প্রতিবাদ জানানো হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপি’র সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপি’র সভাপতি অ্যাড. তোফাজ্জল হোসেন তপু। অন্যদের মধ্যে ছিলেন জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন, মতিহার থানা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন, পুঠিয়া উপজেলা সভাপতি আমিনুল হক মিন্টু, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি ওয়ালিউল হক রানা, বর্তমান সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সুইট, জেলা যুবদলের সভাপতি মোজাদ্দেদ জামানী সুমন, মহানগর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হাসনাইন হিকোল, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি জাকির হোসেন রিমন, সাধারণ সম্পাদক আবেদুর রেজা রিপন, মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম প্রমুখ। সমাবেশে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, সিটি নির্বাচনের আইনশৃংখলা বাহিনী, প্রশাসন এবং দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং এবং পোলিং অফিসার ও নির্বাচন কমিশন এবং রাজশাহী রিটার্নিং অফিসারের নির্লজ্জ হস্তক্ষেপে রাজশাহী সিটি নির্বাচন মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও তাদের সমর্থকদের সাথে পাল্লা দিয়ে পুলিশ নৌকায় ভোট দিয়েছে। জনগণকে ভোট প্রদান করতে দেয়নি। কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। বিএনপি’র কোন এজেন্টকে কোন বুথে থাকতে দেয়া হয়নি। অনেক কেন্দ্রে প্রবেশও করতে দেয়া হয়নি। এছাড়াও প্রতিটি কেন্দ্রে সরকারদলীয় প্রার্থীর নিজস্ব লোক প্রিজাইডিং ও পোলিং এজেন্টের দায়িত্ব দেয়া হয়। এদের কোন গেজেট বিএনপিকে এখনো দেয়া হয়নি বলে জানান বুলবুল। তিনি আরো বলেন, ১ থেকে ৩০ নং ওয়ার্ড পর্যন্ত একই কায়দায় ভোট ডাকাতি করা হয়েছে। সকল কেন্দ্রেই আগে থেকেই মেয়রের ভোট দিয়ে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে রাখা হয়। বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে পুলিশ ও ছাত্রলীগের ছেলেরা ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে নিয়ে যায়। সময়ের পূর্বেই ভোট বন্ধ করে দেয়া হয়। ভোটারগণ ব্যালট পেপার না পেয়ে হতাশায় ফিরে যায় এবং সরকারকে তিরষ্কার করতে থাকে। বুলবুল আরো বলেন, বিনোদপুরের ইসলামিয়া কলেজে তিনি নিজে ভোট ডাকাতি ধরেন এবং প্রিজাইডিং অফিসারকে ব্যালট পেপার দেখাতে বললে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। সকাল সাড়ে ১০ টার সময় থেকে মেয়রের ব্যালট পেপার শূন্য হয়ে যায়। সেখানকার ভোটারগণ ইচ্ছানুযায়ী ভোট দিতে না পেরে রাগে ক্ষোভে কেন্দ্র ছেড়ে চলে যান বলে বক্তৃতায় তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরো বলেন, এই সরকার দর্নীতির, জালিয়াতি ও নির্যাতনের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। পায়ের তলায় মাটি নাই বুঝে ভোট ডাকাতি করে নিজেদের প্রার্থীদের বিজয়ী করছে। অন্য বক্তারা বলেন, এই জালিম সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন আর নয়। এই সরকার গণতন্ত্রকে হত্যা করে দেশকে একনায়কতন্ত্রে পরিণত করেছে। পুলিশ বিভাগ ও অন্যান্য আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা নিজেদের পেশাদারিত্ব ভুলে সরকারদলীয় প্রার্থীর হয়ে কাজ করে তাদের আসল চেহারা জনসমক্ষে উন্মোচন করেছে। এখন প্রশাসন ও আইনশৃংখলা বাহিনীসহ এই অবৈধ সরকারকে জনগণ আরো বেশী করে ঘৃণা করতে শুরু করে। তারা আগামী সংসদ নির্বাচনের পূর্বে নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি জানান। সেইসাথে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।