শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

দারুণ জয়ে সিরিজে সমতায় ফিরল বাংলাদেশ

স্পোর্টস রিপোর্টার : ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচেই জয়ে ফিরল বাংলাদেশ। নতুন ভেন্যু আমেরিকার ফ্লোরিডার লডারহিলের সেন্ট্রাল ব্রোওয়ার্ড রিজিওনাল পার্ক স্টেডিয়ামে খেলতে নেমে অসাধারন এক জয় পেয়েছে টাইগাররা। তুমুল উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১২ রানে হারিয়েছে সাকিব আল হাসানের দল। আর এই জয়ে সিরিজে ১-১ সমতায় ফিরল বাংলাদেশ। ফলে ওয়ানডে সিরিজের পর এখন টি-টোয়েন্টি সিরিজে সিরিজ জয়ের সুযোগ থাকছে বাংলাদেশের সামনে। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৭১ রান করে বাংলাদেশ। দলের এই বিশাল স্কোরের পিছনে বড় অবদান তামিম আর সাকিবের। জয়ের জন্য ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৫৯ রান তুলতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ফলে বাংলাদেশ জয় পায় ১২ রানে। টাইগারদের পক্ষে দারুন বোলিং করেন মোস্তাফিজ আর নাজমুল ইসলাম অপু। আর সর্বোচ্চ ৭৪ রান করে ম্যাচসেরা হয়েছেন ওপেনার তামিম ইকবাল।

টস হেরে প্রথমে ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৭১ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। অবশ্য ব্যাট করতে নেমে শুরুটা কিন্তু ভালো হয়নি বাংলাদেশের। কারন শুরুতেই ওপেনার লিটন দাসকে হারায় বাংলাদেশ। অ্যাসলি নার্সের করা ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারের চতুর্থ বলে লিটন দাসকে এক্সট্রা কাভারে কার্লোস ব্র্যাথহোয়াইটের তালুবন্দি করেন নার্স। ফলে ৫ বল খেলে ১ রান নিয়ে সাজঘরে ফিরে যেতে হয় লিটন দাসকে। ৩ নম্বরে নামা মুশফিকুর রহীমও মাত্র ২ রানে ফিরে যান সেই নার্সের শিকার হয়ে। চতুর্থ ওভারের তৃতীয় বলে রিভার্স সুইং করতে গিয়ে আন্দ্রে রাসেলের তালুবন্দি হন মুশফিক। এরপর সৌম্য সরকার এসে কিছুটা আলোর ঝলকানি দিলেও বেশি দূর এগুতে পারেননি। কিমো পলের একটি স্লো ডেলিভারিতে লং অফে রভম্যান পাওয়েলের তালুবন্দি হয়ে ১৪ রানেই ফিরে যান সাজঘরে। এরপর তামিমের সাথে এসে জুটি গড়েন সাকিব। এ জুটির ঝড়ো ব্যাটিংয়েই বড় রানের ভিত্তি পায় বাংলাদেশ। তামিম এদিন তুলে নিলেন টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ হাফ  সেঞ্চুরি। ৩৫ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। তবে দলীয় ১৩৮ রানের মাথায় তামিমের তা-ব থামে আন্দ্রে রাসেলের বলে। তার আগেই অবশ্য ৪৪ বলে ৭৪ রানের এক দুর্দান্ত ইনিংস খেলে ফেলেন তামিম। মেরেছেন ৬টি চার ও ৪টি ছক্কা। যার মধ্যে রাসেলের করা ১৬তম ওভারে নিয়েছেন ২২ রান, ৩টি ছক্কা ও ১টি চারের ঝড় তুলে। অন্যদিকে ৩০ বলে সাকিব এ সংস্করণে নিজের সপ্তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন। ২০তম ওভারে কেমো পলের বলে আউট হওয়ার আগে ৩৭ বলে ৬০ রানের বিধংসী ইনিংস  খেলেন টাইগার অধিনায়ক। একটি ছক্কা ও ৯টি চারে সাজিয়েছেন তার এই অসামান্য ইনিংসটি। আর মাহমুদউল্লাহ ১৩ ও আরিফুল হক ১ রানে অপরাজিত থাকেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে দুইটি করে উইকেট নিয়েছেন নার্স ও পল। জয়ের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে টার্গেট ছিল ১৭২ রান। টার্গেটটা কঠিনই ছিল দলটির সামনে। তবে টি-টোয়েন্টির সেরা দলের জন্য টার্গেটটা অসম্ভব ছিলনা। তাইতো শেষ পর্যন্ত জয়ের জন্য কঠিন লড়াই করেছে স্বাগতিকরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত টাইগার বোলারদেও কাছে হার মানতে হয়েছে দলটিকে। ম্যাচের  শেষ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৪ রান। দলটির জন্য শেষ ওভারে এই রান করাটা অসম্ভব ছিলনা। তবে শেষ ওভারটাতে নাজমুল ইসলাম অপুর উপর ভরসা করেছিলেন অধিনায়ক সাকিব। আর তাতেই কাজ হয়েছে। যেখানে আগের করা ৩ ওভারে ১ উইকেট নিয়ে রান দিয়েছিলেন ২৬,  শেষ ওভারে মাত্র ২ রান দিয়ে ২টি উইকেট তুলে নিয়ে অধিনায়কের ভারসার প্রতিদান দিলেন এই এই স্পিনার। ফলে বাংলাদেশ জয় পেল ১২ রানের। এর আগে ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারে বল করতে এসে প্রথম ৩টি ডেলিভারি ওয়াইড দিলেও দ্বিতীয় বলেই এভিন লুইসকে ১ রানে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলে দলকে প্রথম উইকেট এনে দেন মোস্তাফিজ। তারপর পরবর্তী ওভারে বল করতে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা এসে আন্দ্রে রাসেলকেও ফেরান তিনি। আউট হওয়ার আগে রাসেল করেন ১৭ রান। অধিনায়ক সাকিবও কম যাননি। নিজের করা প্রথম ওভারেই মারলন স্যামুয়েলসকে ১০ রানে ফিরিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিংয়ে চাপ সৃষ্টি করেছেন। এরপরের আঘাত রুবেলের। অষ্টম ওভারের প্রথম বলেই দিনেশ রামদিনকে ৫ রানে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলে সাজঘরে ফেরান তিনি। তবে আন্দ্রে ফ্লেচার ও রভম্যান পাওয়েল টাইগারদের হতাশা বাড়িয়ে দারুণ এক জুটি গড়ে  তোলেন। এ জুটিতে ৪৩ বলে ৫৮ রান করে। এই জুটির দারুণ ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের জয়ের আশা যখন ক্রমশ ম্লান হয়ে যাচ্ছিল তখনই আঘাত হানেন অপু। ম্যাচের ১৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ফ্লেচারকে আউট করে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান এই স্পিনার। তবে এর আগেই ৩৮ বলে ৪৩ রানের একটি ঝড়ো ইনিংস খেলে  ফেলেন এই ওপেনার। তারপর এরপর ক্যারিবিয় অধিনায়ক কার্লোস ব্র্যাথহোয়াইটকে ১১ রানে ফিরিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি বাংলাদেশের দিকে নিয়ে নেন সাকিব। ১৭তম ওভারে দ্বিতীয় বলে সাকিবকে তুলে মারতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে লিটন দাসের তালুবন্দী হন ক্যারিবিয় অধিনায়ক। এরপর বাংলাদেশের জয় ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু এই জয় প্রায় হাতছাড়া হতে বসেছিল পাওয়েলের ব্যাটিংয়ে। ৩৪ বলে তিনি করেন ৩৪ রান। কিন্তু তাকে মুশফিকুর রহীমের অসাধারণ এক ক্যাচে পরিণত করেন মোস্তাফিজ। অপু ও মোস্তাফিজ নিয়েছেন ৩টি করে উইকেট। এছাড়া সাকিব ২টি ও রুবলে একটি উইকেট নিয়েছেন।

সংক্ষিপ্ত  স্কোর:

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৭১/৫ (লিটন ১, তামিম ৭৪, মুশফিক ৪,  সৌম্য ১৪, সাকিব ৬০, মাহমুদউল্লাহ ১৩*, আরিফুল ১*; বদ্রি ০/১৪, নার্স ২/২৫, রাসেল ১/৩৩, পল ২/৩৯, উইলিয়ামস ০/২৯, ব্র্যাথওয়েট ০/২৯)।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ১৫৯/৯ (ফ্লেচার ৪৩, লুইস ১, রাসেল ১৭, স্যামুয়েলস ১০, রামদিন ৫, পাওয়েল ৪৩, ব্র্যাথওয়েট ১১, নার্স ১৬, পল ২, উইলিয়ামস ০*, বদ্রি ১*; আবু হায়দার ০/২৬, মুস্তাফিজ ৩/৫০, রুবেল ১/৩৫, সাকিব ২/১৯)।

ফল: বাংলাদেশ ১২ রানে জয়ী

সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে ১-১ সমতা

ম্যান অব দা ম্যাচ: তামিম ইকবাল।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ