শেওলায় সৌন্দর্য হারাচ্ছে কপোতাক্ষ নদ হুমকির মুখে দেশী প্রজাতির মাছ
মোল্যা আব্দুস সাত্তার, কেশবপুর (যশোর) : এক সময় নদ দিয়ে প্রবাহিত হতো স্বচ্ছ পানি। প্রাণ জুড়িয়ে যেত নদের নির্মল বাতাসে। এ নদ দেখলে এখন আর কেউ এ কথা বিশ্বাস করবেন না। যশোরের কেশবপুরের ঐতিহ্য মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্বপ্নের সেই কপোতাক্ষ নদ এখন শেওলায় পরিপূর্ণসহ ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়ে এর সৌন্দর্য হারাচ্ছে। সরসকাটি থেকে কোমরপোল পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার এ নদের শেওলা পচে পানি মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। এরপরও নদ অববাহিকার কৃষকরা শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে নদে পাট জাগ (পচন) দেবেন। নদ দূষণের জন্য পরিবেশও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে দেশী প্রজাতির মাছ আজ অস্তিত্ব সংকটে। জোয়ার ভাটা না থাকায় এ নদের বর্তমান বেহাল দশা।
বছর দশেক আগেও কপোতাক্ষ নদ দিয়ে প্রবাহিত হতো স্বচ্ছ পানি। এখন নদের পানি দেখে আতঙ্কিত হওয়াই স্বাভাবিক। ২৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে এ নদ খনন করার ফলে অববাহিকা এলাকায় এখন আর বন্যা দেখা না গেলেও জোয়ার ভাটা না থাকায় এ নদ বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন উৎস থেকে প্রতিদিন বর্জ্য এ নদে ফেলা হচ্ছে। এ নদের সরসকাটি থেকে কোমরপোল পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার শেওলায় পরিপূর্ণ। গত এক মাস আগে এ নদে হঠাৎ লোনা পানি ঢোকায় নদীর শেওলা মরে পচে দূর্গন্ধের সৃষ্টি করে। এখন বর্ষার নতুন পানি পেয়ে এসব কচুরিপনা আবার নবযৌবনে বাড়তে শুরু করেছে। ফলে শেওলা পচা পানিতে এ নদে যেন জীবের বসবাস অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে এ নদে দেশী প্রজাতীর মাছ প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। নদের কুল ঘেষে গড়ে উঠেছে জনবসতি। এসব বসতির পয়ঃনিষ্কাশন রাতের আধারে এ নদে ফেলা হচ্ছে। এ অবস্থায় কপোতাক্ষ নদ তার সৌন্দর্য হারিয়ে এখন পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। নদের তীরবর্তী এলাকায় বসবাসরত লোকেরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন এ শেওলার কারণে। এ নদকে কেন্দ্র করে কয়েক হাজার পরিবার মাছ ধরে তাদের জীবিকা নির্বাহ করত। কালের আবর্তে তারা জীবিকা নির্বাহের জন্য বিকল্প পথ বেছে নিয়েছেন বাধ্য হয়ে। এ অবস্থায় নদের শেওলা অপসারণ এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
জানা গেছে, ১৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ কপোতাক্ষ নদের মাত্র ৯০ কিলোমিটার সচল রাখার জন্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে। ঝিকরগাছার পাজাখোলা থেকে খুলনার পাইকগাছার শিবসা পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটার কপোতাক্ষ নদে জোয়ার ভাটা বন্ধ হয়ে ভরাট শুরু হয়েছে। এরপরও নদ শেওলায় পরিপূর্ণ হওয়ায় ভরাটের আরও একটি কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। নদের এ শেওলা অপসারণ করে জোয়ার ভাটা সৃষ্টি করতে না পারলে নদ খনন করে এর সুফল পাওয়া যাবে না। এছাড়া কপোতাক্ষ নদের বুকে রয়েছে অসংখ্য যাতায়াতের বাঁশের সাকো। এ বাঁশের সাঁকোয় কচুরিপনা আটকে রয়েছে।
সাগরদাঁড়ি গ্রামের রাজ্জাক আহমেদ রাজু জানান, শেওলা জমে থাকায় নদের সৌন্দর্য নষ্টের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা নদের এ অবস্থা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। শেওলার কারণে নদের বিদায় ঘাট এলাকায় নৌকা ভ্রমণ বন্ধ রয়েছে।
কেশবপুরের পানি সরাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের নেতা অ্যাডভোকেট আবুবকর সিদ্দিক বলেন, প্রকৃতপক্ষে নদী না বাঁচলে মানুষ বাঁচবে না। বর্তমানে শুধু কপোতাক্ষই নয়, বুড়িভদ্রা, ভদ্রা, হরিহরসহ প্রধান নদ-নদীগুলোর অবস্থা খুবই করুণ। যেভাবে নদী দখল চলছে, এক সময় এর অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যাবে না। এছাড়া কেশবপুর শহরের বর্জ্য যেভাবে হরিহর ও বুড়িভদ্রায় ফেলা হচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে এ দু‘নদী এক সময় নর্দামায় পরিণত হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয প্রকৌশলী সায়েদুর রহমান জানান, বৃষ্টির কারণে নদের সংযোগ ছোট ছোট খাল, বিল থেকে কচুরিপনা ভেসে এসে কপোতাক্ষ নদের প্রায় ৩‘শ মিটার এলাকায় জমে রয়েছে। এ অবস্থায় জনসচেতনতা এবং কর্তৃপক্ষের যথাযথ পদক্ষেপই বাঁচাতে পারে এক সময়ের কেশবপুরের গর্ব কপোতাক্ষ নদকে।