বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

তুরস্কে মুদ্রাসংকট ঘনীভূত বিশ্ব বাজারে ধাক্কা

 তুরস্কের একটি মানি এক্সচেঞ্জ কেন্দ্র

১৪ আগস্ট, এএফপি, আল জাজিরা : গত সোমবার আবার দরপতনে তুরস্কের মুদ্রাসংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। সারা বিশ্বের অর্থবাজারেই এর ধাক্কা লেগেছে। সিএনএন জানায়, ডলারের বিপরীতে তুরস্কের লিরার দর রেকর্ড ১১ শতাংশ নেমে যায়। পরে এর মূল্য কিছুটা পুনরুদ্ধার হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধের জেরে লিরা গত সপ্তাহে ইতিমধ্যেই ২০ শতাংশ নেমে গেছে। এই অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় যথেষ্ট পরিমাণে সরকারি উদ্যোগের অভাবে বিনিয়োগকারীরা অস্থির বোধ করছেন।

লিরার অস্থিরতা বিশ্ব বাজারকে অস্থিতিশীল করেছে, বিশেষ করে ঋণদানকারীদের তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার কারণে ইউরোপীয় ব্যাংকগুলো চাপের মধ্যে পড়ে। এই অস্থিরতা অন্যান্য উদীয়মান বাজারে প্রভাব ফেলে, যেমন দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত।

গতকাল টোকিওতে ২ শতাংশ এবং হংকংয়ে ১ শতাংশের বেশি স্টক পতন হয়। প্রধান প্রধান ইউরোপিয়ান বাজার শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ নেমে যায়। এর মধ্যে স্পেনের বিবিভিএ ও ইতালির ইউনিক্রেডিট (ইউএনসিএফএফ) ব্যাংকে গচ্ছিত শেয়ারের দর ৩ শতাংশে পতিত হয়।

এদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান সংকট দূর করতে সুদের হার বাড়ানোর আহ্বান অগ্রাহ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র তুর্কি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের পর দেশটির বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেন।

গতকাল এক ভাষণে রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেন, ‘আপনি একদিকে ন্যাটোর কৌশলগত মিত্র, আবার অন্যদিকে আপনার মিত্রের পিঠ ছুরি মারেন? এটি কি গ্রহণযোগ্য?’

ঋণসংকটের ভয় : অর্থনীতিবিদেরা সাবধান করছেন, দ্রুত আস্থা ফিরিয়ে আনা না গেলে তুরস্ক মন্দায় আক্রান্ত এবং ঋণসংকটের কারণে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে বেইল আউটের প্রয়োজন হতে পারে।

গবেষণা ফার্ম ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের প্রধান উদীয়মান বাজার অর্থনীতিবিদ উইলিয়াম জ্যাকসন গত শুক্রবার ক্লায়েন্টদের এক চিঠিতে বলেন, বিনিয়োগকারীরা স্পষ্টতই উদ্বিগ্ন যে তুরস্কের সরকার মুদ্রার দর স্বাভাবিক করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না (অথবা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ব্যবস্থা নিতে দেবে না)। এটা তুরস্কের ব্যাংকিং সেক্টরে সংকট তৈরির ভয় বাড়াচ্ছে।

দরপতনের ঢেউ ভারতীয় রুপিতে : গতকাল মঙ্গলবার সকালে ভারতে এক ডলারের বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ৭০.১ রুপি, যা ভারতীয় রুপির ইতিহাসে সর্বনিম্ন মান। ধারনা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তুরস্কের বাণিজ্যিক সম্পর্কে টানাপোড়েনের ফলে তুরস্কের মুদ্রা লিরার ব্যাপক দরপতন ঘটে। যার প্রভাব বিশ্বের অনেক মুদ্রা বাজারে পড়তে শুরুকরেছ। খবর এনডিটিভি। এটি বিশ্বের অনেক উঠতি মুদ্রাবাজারকে অস্থিতিশীল করে তোলে। সাম্প্রতিক সময়ে লিরার ৪৫ শতাংশ পতন হয়েছে। লিরার উদ্বেগজনক পতনের পর বিনিয়োগকারীরা ডলার ও ইয়েন ব্যবহারে আরো বেশি মনোযোগী হয়ে উঠেন।

ভারতের একটি রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ ফোরেক্স (বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়) ব্যবসায়ী বলেন, ‘রুপিকে রক্ষায় বহু ডলার ব্যয়ের কোনো যুক্তি নেই। কারণ উঠতি বাজারগুলোতে পতনের প্রবণতা এখন খুবই শক্তিশালী।’

তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘সামনের দিনগুলোতে ডলারের বিপরীতে রুপির মান আরো নেমে যেতে পারে।’

অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে নতুন উদ্যোগ তুরস্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

দেশে আর্থিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সকল প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তুরস্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় সেখানকার আর্থিক অবস্থা বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এমন অবস্থায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের ঘোষণা দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

ব্যাংক জানিয়েছে বাজারের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে ব্যাংকের যা যা সরবরাহ করা দরকার তার সবটাই দিবে তারা।

খবরে বলা হয়, এশিয়া প্যাসিফিক বাণিজ্যে ডলারের তুলনায় তুরস্কের মুদ্রা লিরা’র মূল্য রেকর্ড পরিমাণ নিম্নতায় পৌঁছেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষণার পর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও গতকাল সাত শতাংশ নিচে ছিল লিরা। এই বছরে মুদ্রাটি ৪৫ শতাংশেরও বেশি মূল্য হারিয়েছে।

দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে তুরস্কের অর্থনীতির ওপর প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যিপ এরদোয়ানের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে দেশের উচ্চ মুদ্রাস্ফীতিতে সুদের হার কমানোর আহবান সে উদ্বেগ আরো বৃদ্ধি করেছে। পাশাপাশি মুদ্রাস্ফীতির  এমন অবস্থার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কের সাম্প্রতিক অবনতিও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের ঘোষণায় বলেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারের গভীরতা, মূল্যের উঠানামা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে ও আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সকল প্রকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিবে। 

বিনিয়োগকারীরা ভয়ে আছেন যে,  ইউরোর সঙ্গে লিরার মানের ব্যবধান বেড়ে যাওয়ায় বৈশ্বিক বাজারে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। ইতিমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকান  ও মেক্সিকান মুদ্রায় এর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ