শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

খানাখন্দে ভরা রাস্তা ফিটনেসহীন বাস ফেরি সংকট ॥ মানুষের চরম দুর্ভোগ

মুহাম্মাদ আখতারুজ্জামান : গেল ঈদুল ফিতরে শতাধিক মানুষের ঈদ আনন্দ সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ফিকে হয়ে যায়। এবারও জীবনের মোহ ভুলে বেহাল সড়কে নাড়ির টানে রাজধানীবাসীর ঈদ যাত্রা শুরু হয়েছে। খানাখন্দে ভরা রাস্তা, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, দক্ষ চালকের অভাব, চালকদের মাদকাসক্তি, আগে যাওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা, কিশোর চালক এই প্রতিটি বিষয় সড়ক দুর্ঘটনায় নিয়ামক হিসেবে বিবেচ্য। বরাবরের মতো সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ঈদ যাত্রায় ভোগান্তি হবে না বললেও কিছুতেই আস্থার জায়গাটি খুঁজে পাচ্ছে না যাত্রীরা। ঈদ যাত্রায় তেমন কার্যকারী উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। উলটো প্রতিদিন গড়ে ১০ জন মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনায়। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও সড়কপথে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঈদ যাত্রায় রাজধানী থেকে ঘরমুখো মানুষকে পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগ। তারপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খানাখন্দে ভরা রাস্তা ফিটনেসহীন বাস আর ফেরি সমস্যায় চরম দুর্ভোগ নিয়ে গ্রামের পথে রওনা দিয়েছে শহরের মানুষ।
জানা গেছে, সড়কের বেহাল দশা, লক্করঝক্কর গাড়ির উপস্থিতি, ফেরিঘাটের দূরাবস্থাসহ নানা সমস্যার কারণে দেশের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলো এখনো নির্বিঘ্ন চলাচলের উপযোগী হয়নি। মহাসড়কগুলোতে কোথাও চলছে সংস্কারকাজ, কোথাও রয়েছে খানাখন্দ। আবার বৃষ্টির কারণে কোনো কোনো মহাসড়ক এরই মধ্যে বেহাল অবস্থায় রয়েছে। ফলে এবারও সড়কপথে চলাচলকারীদের দুর্ভোগ থেকে রক্ষা হবে না। অথচ  কর্তৃপক্ষ দাবি করছে সমস্যা চিহ্নিত করে সংস্কারকাজ চলছে, ঈদ যাত্রা ভালো হবে। কিন্তু ইতোমধ্যে রাজধানীবাসীর ঈদ যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। পথে পথে ভোগান্তির খবরও পাওয়া যাচ্ছে। ফলে কর্তৃপক্ষের দাবির প্রতিফলন ঘটছে না।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে রাজধানী থেকে উত্তরবঙ্গে ১৬টি জেলার যানবাহন চলাচল করে। এই মহাসড়কে এখনো চলছে চার লেনের কাজ। চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ফোর লেনে গাড়ি চলাচল করলেও সড়কের ওই অংশের দুই পাশে এখনো পিচ ঢালাই হয়নি। ফলে এই অংশে আসন্ন ঈদ যাত্রায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। আবার রাস্তার দুই পাশে বিভিন্ন স্থানে কাঁচা রয়েছে। বৃষ্টি হলে সড়কের ওই কাঁচা অংশে যান চলাচলে বিঘœ ঘটবে।  চার লেন উন্নীতকরণ প্রজেক্টের উপসহকারী ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. রুকনুজ্জামান বলেন, ‘চার লেনের কাজের ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ৫০ কিলোমিটার সড়কে কার্পেটিং করা হয়েছে। চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেনে গাড়ি চলাচল করছে। এর মধ্যে কিছু অংশে সড়কের দুই পাশে কর্পেটিং করা না হলেও গাড়ি চলাচলে কোনো সমস্যা হবে না।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার মেঘনা সেতু টোলপ্লাজার পশ্চিম পাশের সড়কটি খানাখন্দে ভরা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সেতুর নির্মাণকাজ চলার কারণে মহাসড়কের একাংশ কেটে ফেলায় ওই এলাকায় যানজট প্রতিনিয়িত লেগেই থাকে। এ ছাড়া মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় পিচ ঢালাই নষ্ট হয়ে রাস্তায় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে রাস্তাটি যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই গুরুত্বপূর্ণ মেঘনা সেতুর টোলপ্লাজার পশ্চিম পাশের সড়কটি হাঁটু পরিমাণ পানিতে তলিয়ে যায়। এতে বৃষ্টির সময় বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করায় রাস্তাটিতে বড় বড় গর্ত হয়েছে এবং গর্তে পানি জমে দুর্ভোগের মাত্রা আরো বেড়ে গেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনা থেকে দাউদকান্দির মেঘনা-গোমতী সেতু পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত আর কয়েকটি স্থানে সংযোগ সড়ক ভেঙে যাওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া বিগত সময়ে টানা বৃষ্টিপাতের কারণে রাস্তার বিভিন্ন অংশে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে প্রতিদিন যানজট লেগেই আছে। গতকাল শনিবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গোমতী সেতুর টোল প্লাজা থেকে গৌরিপুর পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজট থাকলেও দুপুরের দিকে যানজট কমে আসে। মহাসড়কে পণ্যবাহী গাড়ির চাপ বেশি থাকায় এ যানজট সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান হাইওয়ে পুলিশ। তারা জানায়, শুক্রবার-শনিবার ছুটির দিন হওয়ার কারণে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেশি। সেইসঙ্গে বেড়েছে পণ্যবাহী যানবাহন। এ কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের অনেকটা অংশ এবার খানাখন্দকে ভরে গেছে। কোথাও কোথাও সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। খানাখন্দকের কারণে এখন প্রায় প্রতিদিনই সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কটির প্রশস্তকরণ কাজ শেষ না হওয়ার কারণে ওই অংশে প্রায় প্রতিদিনই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। কোরবানির পশুবাহী ট্রাকগুলো পড়ছে আটকা। কখনো যানবাহনের সারি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ঈদে নাড়ির টানে ঘরে ফেরা যাত্রীদের ভোগান্তি আরও চরমে উঠবে।
অন্যদিকে ঢাকা থেকে বগুড়ার সড়ক পথে বড় বড় গর্ত, ঝুঁকিপূর্ণ মোড় ও যত্রতত্র হাটবাজার বসার কারণে পরিস্থিতি ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। আর বৃষ্টি হলে ভোগান্তি আরও বাড়বে। বগুড়ার ৭৪ কিলোমিটার অংশে মূলত খানাখন্দ, সেতু সংস্কার, চার লেনের চলমান কাজের পাশাপাশি দুর্বল সড়ক ব্যবস্থাপনার কারণে দুর্ভোগ হচ্ছে বেশি।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ভোগান্তির জায়গা গাজীপুর অংশে। চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গীর তুরাগ সেতু পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার অংশে পানি জমে দুই পাশে তৈরি হয়ে আছে বিশাল নালা। কোথাও খানাখন্দ, কোথাও বড় গর্ত। পানি জমে গর্ত হয়ে আছে ডোবার মতো। তা ছাড়া ড্রেনের কাজের জন্য স্থানে স্থানে খোঁড়াখুঁড়ির জন্য যানবাহন চলতে না পারায় যানজট লেগেই আছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গীর এরশাদনগর পর্যন্ত দুই পাশে পানি জমে বিশাল নালার মতো হয়ে আছে। মহাসড়কের দুই পাশের কলকারখানা ও আশপাশের বাড়িঘরের পানি মহাসড়কে জমে নালা তৈরি হয়ে সংকুচিত হয়ে আছে মহাসড়ক। আবার সংস্কারের অভাবে ভোগড়া, মালেকের বাড়ি, হারিকেন, সাইনবোর্ড, জাতীয় বিশ্ববিদালয়, বোর্ডবাজার, গাজীপুরা, সোসেন মার্কেট, এরশাদনগর, চেরাগ আলী মার্কেট, মিলগেইট, স্টেশন রোড ও টঙ্গী বাজারে ভেঙে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে মহাসড়কে।
গত শুক্রবার সকালে এ এলাকার কারখানায় কর্মরত কয়েক হাজার শ্রমিক ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে হোতাপাড়া এলাকায় বেতনের দাবিতে লাঠিসোঠা নিয়ে অবস্থান নেয়। অবরোধের কবলে সকাল থেকেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক স্থবির হয়ে পড়ে। এসময় গাজীপুরের সদর উপজেলার সালনা থেকে শ্রীপুরের গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী পর্যন্ত ২৩কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। সেই যানজটের রেশ গতকাল শনিবারেও কাটেনি। গাজীপুর ট্রাফিক বিভাগের সহকারী পুলিশ সুপার সালেহ উদ্দিন আহমেদ জানান, মহাসড়ক অবরোধে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক স্থবির হয়ে পড়ে। এ সময় সড়কের উভয় পাশের ২৩ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়ে কয়েক হাজার লোক।
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ভুরঘাটা, কাসেমাবাদ, বামরাইল, অশোকাঠি, বাটাজোর, বার্থী, কটকস্থল, টরকী, কসবা, গৌরনদী, দক্ষিণ বিজয়পুর, আশোকাঠি, মাহিলাড়া ও জয়শ্রী এলাকায় রয়েছে ছোট-বড় অনেক গর্ত। ওই গর্তগুলো দিয়ে গাড়ি চলাচল করতে হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে।
ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের রাজবাড়ী অংশে থাকা ঢাকা-খুলনা জাতীয় মহাসড়ক, রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের এখন বেহাল দশা। জেলা সদরের গোয়ালন্দ মোড় থেকে পাংশার শিয়ালডাঙ্গী পর্যন্ত সড়কের উন্নয়নকাজ চলছে মন্থরগতিতে। ফলে যানবাহন চলাচলে যেমন ব্যাঘাত ঘটছে, তেমনি ধুলায় নাকাল হচ্ছে যাত্রী, পথচারী ও সড়কের পাশে বসবাসকারীরা। ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া ও পাবনা জেলার ঘরমুখো যাত্রীদেরও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। রাজবাড়ী অংশে থাকা ঢাকা-খুলনা জাতীয় মহাসড়কের প্রায় ২০ কিলোমিটার অংশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খানাখন্দ থাকায় দুর্ভোগ নিয়েই চলতে হচ্ছে যাত্রীদের।
গাবতলী থেকে পাটুরিয়া ফেরিঘাট পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার পথ পার হতে সময় লাগার কথা বড়জোড় দুই ঘণ্টা। কিন্তু তিন ঘণ্টাতেও পৌঁছানো যায় না। কখনো কখনো সময় আরো বেশি লাগে। রাস্তায় ছোট খাটো খানাখন্দ রয়েছে। হাটবাজার আর অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে ঘরমুখো মানুষের দূর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। মানিকগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায় জানায়, ঢাকা-আরিচা সড়কের কোথাও বড় ধরনের ভাঙাচোরা নেই। গত ঈদুল ফিতরের আগে সড়ক মেরামত করা হয়েছে। গত কিছুদিনের বৃষ্টিতে ছোটখাটো যা হয়েছে, তা মেরামত করা হচ্ছে।
দুর্ভোগের আরেক না ফেরিঘাট: দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট। প্রতিদিন এ রুট দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের হাজার হাজার যানবাহন ও যাত্রী নদী পারাপার হয়ে থাকে। ঈদে এর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় কয়েকগুন। সম্প্রতি পদ্মায় পানি বৃদ্ধি ও তীব্র স্রোত দেখা দেয়ায় ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটের বাড়তি যানবাহন ও ঈদের অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে দৌলতদিয়ার ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে প্রতিনিয়তই সৃষ্টি হচ্ছে যানবাহনের সারি। গতকাল শনিবার সকাল সোয়া ৯টার দিকেও ঘাটে প্রায় ৬ শতাধিক যানবাহন নদী পারের সিরিয়ালে আটকে পড়ে। জানা গেছে, এই নৌ-রুটে চলাচলকারী প্রায় সবগুলো ফেরি অনেক পুরাতন। ফলে স্রোতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফেরিগুলো চলতে পারে না। এছাড়া মাঝে মধ্যেই বিকল হয়ে যাচ্ছে ফেরিগুলো এবং মেরামত শেষে আবার চলছে।
যাত্রীরা জানান, সারাবছরই এ রুটে যাত্রী ভোগান্তি হয়। বর্ষা মৌসুম আর ঈদে ভেগান্তি হবে এটা এখন তারা মেনে নিয়েই আসা-যাওয়া করেন। তবে বর্ষা শুরু আর ঈদের কয়েকদিন আগে কর্তৃপক্ষ তাদের দুর্ভোগ লাঘবে তোড়জোড় শুরু করেন। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। ভোগান্তি রয়েই গেছে।
বিআইডব্লিউটিসি ও বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, ঈদুল আজহা উপলক্ষে দৌলতদিয়া-পটুরিয়া নৌরুটে যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে থাকছে ২১টি ফেরি ও ৩৩টি লঞ্চ এবং ফেরি ভেড়ার জন্য রয়েছে ৬টি ঘাট। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করা হচ্ছে যাত্রীবাহী পরিবহন ও গরুবাহী ট্রাক। এছাড়া ঈদের আগের তিনদিন, ঈদের দিন ও ঈদের পরের তিনদিনসহ মোট ৭ দিন বন্ধ থাকবে পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার। কর্তৃপক্ষ জানান, অতিরিক্ত গাড়ির চাপে নদী পারের অপেক্ষা দীর্ঘ হচ্ছে। তবে ঘাট এলাকার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে ৩৩ পদক্ষেপ: আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহা নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক করতে ৩৩টি পদক্ষেপ নিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। এই সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ের অধীন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চলতি মাসের শুরুতে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে। আসন্ন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে গ্রহণ করা সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে অন্যতম হল- সড়ক মেরামত, টার্মিনালগুলোতে শৃঙ্খলা রক্ষা, দুর্ঘটনার পর সড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণ, সড়ক থেকে অবৈধ বাজার অপসারণ, বিকল্প সড়ক ব্যবহার কিংবা মহাসড়কের অপব্যবহার বন্ধ করা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা, মহসড়কে লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং বন্ধ করা, নসিমন-করিমন, ইজিবাইক, থ্রি-হুইলার বন্ধ করা, টোল প্লাজার সব বুথ খোলা রাখা, সিএনজি স্টেশন চালু রাখা, যাত্রীদের জন্য বিআরটিসির স্পেশাল সার্ভিস চালু করা, নৌরুটে ফেরি সংখ্যা বৃদ্ধি করা, নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বাস, ট্রাক, লরি ও কাভার্ড ভ্যান বন্ধ রাখা, ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন দিনে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বন্ধ দেওয়া ও খোলা রাখা, বড় ধরনের দুর্ঘটনা মোকাবিলায় হেলিকপ্টার ব্যবহার করা, অনভিজ্ঞ চালক দিয়ে মহাসড়কে মোটরযান না চালানো, টয়লেটগুলো ব্যবহার উপযোগী রাখা, সড়কের পাশে পশুর হাট না ইজারা দেওয়া, কোরবানি পশু পরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, কোরবানি পশুর বর্জ্য সড়কের পাশে না ফেলা, ট্রাকে যাত্রী পরিবহন না করা ও কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম চালু করা।
কর্তৃপক্ষ বলছে, ঈদযাত্রায় ভাঙাচোড়া সড়কের জন্য ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে। বিষয়টি মাথায় রেখেই ঈদের অন্তত ১০দিন আগেই সহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত করতে মন্ত্রণালয়ের সড়ক বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন সড়ক মেরামত করা চলছে। ঈদের আগে ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রায় সড়ক-মহাসড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়। বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা মানিকগঞ্জ-পটুয়াখালী-আরিচা, ঢাকা সিলেট, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক তীব্র যানজট দেখা দেয়। পাশাপাশি ফেরি ঘাটগুলোতেও যানবাহনের দীর্ঘ লাইন থাকে। ফেরি সংখ্যা বাড়িয়ে বিষয়টি নিরসনের জন্য পুলিশের বিভাগীয় কমিশনার, হাইওয়ে রেঞ্জ ডিআইজি, র‌্যাব, জেলা প্রশাসক, সড়ক ও জনপথ অধিদফতর এবং পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ৩৩টি পদক্ষেপের পরও ঈদ যাত্রার ভোগান্তি কমাতে পারেনি। সরকারের পদক্ষেপ বক্তব্য আর খাতা কলমে সীমাবদ্ধ থাকছে। তার সুফল পাচ্ছে না দেশের জনগণ এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। 
শুধু মহাসড়ক নয় প্রতিটি আঞ্চলিক সড়কেরও বেহাল দশা। এ সব সকড়কে লক্করঝক্কর গাড়ির উপস্থিতি যাত্রীদের ভাবিয়ে তুলছে প্রতিনিয়ত। চালকদের অদক্ষতা রাস্তাঘাটের বেহাল দশার কারণে বর্তমানে সড়ক দূর্ঘটায় প্রাণহানি মারত্মকহারে বেড়ে গেছে। বিভিন্ন সংস্থার সম্প্রতি হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ১০ জন মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনায়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ