শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

২১ বছর আগে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের ব্যবহার

শুনলে মানুষের চক্ষু চড়কগাছ হবার মতো ঘটনা। প্রায় ২১ বছর আগে মেয়াদ শেষ হয়েছে ওষুধের। কিন্তু সেই ওষুধ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্টোর থেকে এতো দিনেও ফেলে দেয়নি। বরং মেয়াদোত্তীর্ণ সেই ওষুধ দিয়ে এখনও দিব্যি চালানো হচ্ছে রোগীর অপারেশন। তাও কোনও গ্রামাঞ্চলের হাতুড়ে ডাক্তারখানা বা ক্লিনিকে নয়, খোদ রাজধানীর মধ্যভাগে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ স্থানের বেশ নামিদামি হাসপাতালে। এছাড়া হাসপাতালের পরিবেশ, অপারেশন থিয়েটার সবই নোংরা, অপরিচ্ছন্ন ও অস্বাস্থ্যকর বলে গত ১৭ আগস্ট ইত্তেফাকের রিপোর্টে প্রকাশ। রিপোর্টটি অবশ্য বক্স আইটেম হিসেবে ফার্স্ট প্যাজে ছাপানো উচিত ছিল। কিন্তু ছাপা হয়েছে ১৯ পৃষ্ঠার ৪ কলামের একদম বোটমে। যাতে পাঠকদের নজরে সহজে না পড়ে। নিউজটি ছাপার ব্যাপারে তাই কিছুটা অনীহাই লক্ষ্য করা যায় বৈকি। এরপরও পত্রিকার নিজস্ব রিপোর্টটি ছাপা হয়েছে বলে বিষয়টি জানাজানি হয়েছে। অন্যথায় এ গুরুত্বপূর্ণ নিউজ হয়তো ধামাচাপাই থেকে যেতো। 

উল্লেখ্য, গত ১৬ আগস্ট র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে র‌্যাব-২ ও ওষুধ প্রশাসনের কর্মকর্তারা পান্থপথে অবস্থিত বাংলাদেশ স্পাইন এ- অর্থোপেডিক জেনারেল হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করলে বিভিন্ন অনিয়মসহ প্রায় ২১ বছর আগে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ব্যবহারের এ ঘটনা ধরা পড়ে। এ অপরাধের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এমন অভিযান চালিয়ে আরও কয়েকটি নামিদামি হাসপাতালকে জরিমানা করে র‌্যাব ও ওষুধ প্রশাসনের টিম। কিন্তু হাসপাতালের অনিয়মসহ মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের ওষুধ ব্যবহারের দৌরাত্ম্য যেন থামতেই চাইছে না। হাসপাতাল কারা চালান? এসবের মালিক কারা? নিশ্চয়ই যারা হাসপাতালের মালিক এবং পরিচালক তাদের বেশিরভাগই ডাক্তার। এসব হাসপাতালে যারা চিকিৎসাকার্য দেখভাল করেন তারাও নিশ্চয়ই ডাক্তারই। কিন্তু তাদের অজ্ঞাতসারে কোনও হাসপাতালে অনিয়ম হওয়া বা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধে চিকিৎসাকার্য চালানো কারুর পক্ষে কি সম্ভব? মনে হয় না।

যারা মেয়াদোত্তীর্ণ ক্ষতিকর ওষুধ ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যবহার করেন তাদের সংখ্যা খুবই কম। এমন অভিযোগে যারা অভিযুক্ত হচ্ছেন তাদের ডাক্তার না বলে ‘ডাকাত’ বলাই বোধ হয় সমীচীন। যেসব ডাক্তার হাসপাতাল স্থাপন করে মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের ওষুধ ব্যবহার করে রোগীদের বারোটা বাজান তাদের ডাকাত নয়, ‘ভয়ঙ্কর ডাকাত’ বললেও অত্যুক্তি হয় না। মানুষের অসুখবিসুখ ও জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলবার অধিকার কারুর থাকতে পারে না। এদের শুধু অর্থদ- করে লাভ নেই। প্রয়োজনে এদের শাস্তি আরও কঠোর করা যেতে পারে। ভেজাল ওষুধ প্রস্তুতকারক ও চিকিৎসার নামে জেনে-শুনে মেয়াদোত্তীর্ণ এবং মানহীন ওষুধ ব্যবহারকারীদের অর্থদ-সহ জেল ও মৃত্যুদ-ের আইন করা হোক।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ