শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

হস্তশিল্পে আত্মনির্ভরশীল হয়েছেন গাইবান্ধার মাহমুদা আক্তার লিপি

গাইবান্ধা থেকে জোবায়ের আলী: হস্তশিল্পে গাইবান্ধার দরিদ্র মধ্যবিত্ত পরিবারের নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিবেদিত রয়েছেন মাহমুদা আক্তার লিপি।
এর পাশাপাশি নিজের ডিজাইনে তৈরী করা হস্তশিল্পগুলো বাজারজাত করে তিনি নিজেও আত্মনির্ভর হয়ে উঠেছেন। এর মাধ্যমে তিনি এক অনুকরণীয় নারীতে পরিণত হয়েছেন।
গাইবান্ধা শহরের মাস্টারপাড়াস্থ ভাড়া বাসায় বসসাস করেন গৃহবধূ মাহমুদা আক্তার লিপি। স্বামী সমবায়ী এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শাহ মুশফিকুর রহমান মন্ডা।
স্বামী-স্ত্রী ও তিন ছেলে নিয়ে তাদের সংসার। ছেলেরা লেখাপড়া শিখছে। বড় ছেলে ঢাকার জগ্ননাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্ট ও গ্রাফিক্সে লেখাপড়া করছে। এই ছেলে মাকে হস্তশিল্পে নকশা আঁকতে সহযোগিতা করে।
মধ্যবিত্ত পরিবারের অত্যন্ত পরিশ্রমী এই মাহমুদা আক্তার সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে হস্তশিল্পের কাজ করে পরিবারের স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে আনতে স্বাবলম্বী হওয়ার কাজে নিয়োজিত হন। সেইসাথে তিনি দরিদ্র মেয়েদের এ কাজে প্রশিক্ষণ দিয়ে আত্মনির্ভর করার কাজেও মনোনিবেশ করেন।
তিনি গাইবান্ধার যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় এবং রংপুর মহিলা সংস্থায় ব্লক, বুটিক, অ্যাপলিক এবং নানা উন্নতমানের হস্ত শিল্প বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন।
এখন নিজেই মেয়েদের এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন। এছাড়া প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মেয়েদের নির্ধারিত মজুরী দিয়ে তার নকশা করা অত্যন্ত সুন্দর, দৃষ্টিনন্দন এবং আকর্ষণীয় সব হস্তশিল্প তৈরী করে তা বাজারজাত করেন। বর্তমানে তার উৎপাদিত সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে শাড়ী, মেয়েদের জামা, ব্লাউজ, পাঞ্জাবী ও বাচ্চাদের জামা কাপড়ে নকশা, অ্যাপলিক এবং ব্রকের কাজ করা সামগ্রী।
এছাড়াও সুদৃশ্য কারুকাজময় নকশা করা বিছানার চাদর, বালিশের কভার, ওয়ালম্যাট, জায়নামাজ, মশারীর কভারও উৎপাদিত হচ্ছে। অর্থাভাবে এখনও কোনো শো-রুম করা সম্ভব না হলেও মাহমুদা আক্তারের মাস্টারপাড়াস্থ বাড়ী থেকেই ক্রেতারা তা সংগ্রহ করে থাকেন। তদুপরি ক্রেতার পছন্দের চাহিদা মাফিক পণ্যও তিনি সরবরাহ করে থাকেন।
ইতোমধ্যে তার জানাশোনা লোকের মাধ্যমে তিনি তার উৎপাদিত পণ্য দেশের রংপুর, নীলফামারী, কুষ্টিয়া, ঢাকাসহ বিদেশের আমেরিকার ক্রেতাদের কাছেও বিক্রয় করতে সক্ষম হয়েছেন।
 জেলা শহর ও শহরতলীর দশানী, পশ্চিম কোমরনই, বাদিয়াখালী এবং শহরের খানকাশরীফ ও পশ্চিমপাড়ার ১১ জন প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হস্ত শিল্পীরা হলো- সালমা, নাসরিন, সাথী, বৃষ্টি, কোহিনুর, ফারজানা, নিরমা, নিপা, মনিষা, রোজী ও মিম।
এদের মধ্যে অনেকেই কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী, যারা পড়ার ফাঁকে ফাঁকে মাহমুদা আক্তারের কাছ থেকে অর্ডার নিয়ে বাড়িতে কাজটি শেষ করে প্রাপ্য মজুরী নিয়ে তাদের লেখাপড়ার ব্যয় নির্বাহ করছে।
এইসব হস্তশিল্প অভিজ্ঞতালব্ধ মেয়েরা সবাই মধ্যবিত্ত ও শ্রমজীবী পরিবারের।
মাহমুদা আক্তারের লক্ষ্যে আরো এমন মেয়েদের প্রশিক্ষিত করে আতœনির্ভর করে গড়ে তোলা। এজন্য একটা শোরুম ও হস্ত শিল্পের প্রসার ঘটাতে প্রয়োজনীয় কক্ষসহ বাড়ী প্রয়োজন।
তার একান্ত প্রত্যাশা নারীদের এই হস্তশিল্পের উন্নয়ন ঘটাতে কোন ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে প্রয়োজনীয় ঋণ প্রদান এবং সরকারি সহায়তা প্রাপ্তি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ