মুরগির দাম কমেছে সবজির বেড়েছে
স্টাফ রিপোর্টার : ঈদের আগের তুলনায় রাজধানীর বাজারগুলোতে কমেছে মুরগির দাম। একই সঙ্গে আগের চেয়ে বেশি দামে পাওয়া যাচ্ছে শাকসবজি। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, পলাশীর বাজার, মালিবাগ, শান্তিনগরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। গত বৃহস্পতিবার কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য মতে ঢাকার বাজারে চালের দাম, মোটা চালের পাইকারী মূল্য প্রতি কেজি ৩৮ টাকা থেকে ৪০ টাকা, মোটা চালের খুচরা মূল্য প্রতি কেজি ৪০ টাকা থেকে ৪৩ টাকা, আটার (খোলা) খুচরা মূল্য প্রতি কেজি ২৫ টাকা থেকে ২৮ টাকা।
ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের পর গত কয়েকদিন রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম কম ছিল। গতকাল শুক্রবার ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয় বেড়েছে। ফলে অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে অধিকাংশ কাঁচাবাজার। তবে ক্রেতা-বিক্রেতার পাশাপাশি সবজির সরবরাহ বাড়লেও বিক্রি খুব একটা বাড়েনি। ফলে ঈদের আগের তুলনায় সব সবজিই কিছুটা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে জানা গেছে, সাদা বয়লার মুরগি ১২০-১৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, যা ঈদের আগে ১৫০-১৬০ কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। ঈদের আগে ২৫০ টাকার ওপরে বিক্রি হওয়া লাল লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকা কেজিতে। আর ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ৯০-৯৫ টাকা ডজন, যা ঈদের আগে ১০০ টাকার বেশি ছিল। মুরগির দাম কমার বিষয়ে পলাশীর বাজারের ব্যবসায়ী মো. করিম বলেন, ঈদের আগে সাদা বয়লার মুরগি বিক্রি করেছি ১৫০ টাকা কেজিতে। এখন সেই মুরগি ১২৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি। অধিকাংশ মানুষের বাসায় ফ্রিজে কোরবানির গোশত মজুদ রয়েছে। ফলে মুরগির চাহিদা অনেক কম। এ জন্যই দাম কিছুটা কমে গেছে। ডিমের দামের বিষয়ে মালিবাগ বাজারের ব্যবসায়ী মো. সাবু বলেন, ঈদের আগে ডিমের ডজন ছিল ১১০ টাকায়। এখন ৯০ টাকা। ঈদের পর ডিমের চাহিদা কিছুটা কমেছে। ফলে দামও কিছুটা কম।
বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ সবজি ৩০-৪০ টাকা কেজির মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। তবে ঈদের আগের মতো এখনো শিম, টমেটো, গাজর, ফুলকপি ও পাতাকপি চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে। বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে শীতের আগাম সবজি শিম। বাজার ও মানভেদে প্রতিকেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা কেজি, যা ঈদের আগে ছিল ১২০-১৪০ টাকা। বাজারে ১০০ টাকা বা তার থেকে বেশি দামে বিক্রি হওয়া আর একটি সবজি পাকা টমেটো। বাজার ও মানভেদে এ সবজিটি বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা কেজি। ঈদের আগেও একই দাম ছিল। চড়া দামে বিক্রি হওয়া আর এক সবজি গাজর, যা ৮০-১০০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে ছোট আকারের প্রতিপিস ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা। আর পাতাকপি বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা পিস। ঈদের আগে চড়া দামে বিক্রি হওয়া বেগুনের দাম সব থেকে বেশি কমেছে। মান ও বাজারভেদে বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা কেজি, যা ঈদের আগে ছিল ৬০-৮০ টাকা। এছাড়া দাম কমার তালিকায় রয়েছে- উচ্ছে, বরবটি, কাকরল, করলা, পটল, ঝিঙা, ধুন্দল, ঢেঁড়স, লাউ। বাজার ভেদে উচ্ছে কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা কেজি, যা ঈদের আগে ছিল ৬০-৭০ টাকা কেজি। ঈদের আগে ৫০-৬০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা কেজি। ঈদের আগে ৪০-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া চিচিংগা, পটল, ঝিঙা, ধুনদল, কাকরল বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা কেজি। পেপে আগের মতো ২০-৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ৪০-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া করলার দাম কমে নেমেছে ২৫-৩৫ টাকায়। ঢেড়স বাজর ভেদে বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকা কেজি। ঈদের আগে এ সবজিটির দাম ছিল ৪০ টাকার ওপরে। আর ঈদের আগে ৫০-৬০ টাকা পিস বিক্রি হওয়া লাউয়ের দাম কমে ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কাঁচামরিচের দামও কিছুটা কমেছে। ঈদের আগে ৩০-৩৫ টাকা পোয়া (২৫০ গ্রাম) বিক্রি হওয়া কাঁচামরিচের দাম কমে ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম কমেছে পেঁয়াজেরও। ৫৫-৬০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজের দাম কমে বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকা কেজি। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা কেজি, যা ঈদের আগে ছিল ৩৫-৪০ টাকা। কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী মো. খায়রুল বলেন, বাজারে বেশির ভাগ সবজির দাম কমলেও শিম, টমেটো, গাজর, ফুলকপির দাম চড়াই রয়েছে। কারণ, এসব সবজির আলাদা চাহিদা রয়েছে। আবার বাজারে তুলনামূলক সরবরাহও কম। শীতের সবজি পুরোপুরি বাজারে না আসা পর্যন্ত এসব সবজির দাম কমার খুব একটা সম্ভাবনা নেই।
কাচাঁবাজারের ব্যবসায়ী মো. জহিরুল বলেন, মানুষ যতই গোশত খাক টমেটো ও গাজরের চাহিদা কমেনি। এ দুটি সবজি রান্না করে খাওয়ার থেকে সালদ হিসেবেই বেশি খাওয়া হয়। তাছাড়া গোশতের সাদ বাড়াতে টমেটোর ব্যবহার করেন অনেকে। ফলে চাহিদা বেশি থাকার কারণে টমেটো ও গাজরের দাম কমেনি। এ ধরনের ক্রেতাদের বাজারে নতুন আসা সবজির প্রতিই চাহিদা বেশি থাকে। শিম ও কপির ক্ষেত্রেও এখন এটাই দেখা যাচ্ছে। ফলে এ সবজির দাম চড়া।