শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

‘বাশার আল আসাদকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন ট্রাম্প’

৫ সেপ্টেম্বর, রয়টার্স : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বছর সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে হত্যা করতে চাইলেও মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস ওই অনুরোধে কান দেননি বলে নতুন এক বইয়ে দাবি করা হয়েছে।

 ‘ওয়াটারগেইট’ কেলেঙ্কারির প্রতিবেদনের জন্য খ্যাতি অর্জন করা সাংবাদিক বব উডওয়ার্ডের লেখা বইটিতে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের উপদেষ্টারা প্রেসিডেন্টের অনেক আচরণকে ‘ধ্বংসাত্মক ও বিপজ্জনক’ হিসেবে দেখেন, যে কারণে মাঝে মাঝেই তারা প্রেসিডেন্টের আদেশ অমান্য করতেও দ্বিধাবোধ করেন না।

১১ সেপ্টেম্বর প্রকাশের দিনক্ষণ নির্ধারিত থাকলেও মঙ্গলবার ওয়াশিংটন পোস্ট ‘ফিয়ার: ট্রাম্প ইন দ্য হোয়াইট হাউস’ বইটির কিছু অংশ প্রকাশ করে।

 সেখানেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে গত ২০ মাসে ট্রাম্পের অধীনে হোয়াইট হাউসের ভেতর যে ধরনের উত্তেজনা বিরাজ করছে উডওয়ার্ড নিজের ভাষ্যে তার বিস্তারিত তুলে ধরেছেন।

বইয়ে দেওয়া তথ্য ও উপদেষ্টাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক চিত্রায়নের তীব্র সমালোচনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ডেইলি কলারকে তিনি বলেছেন, “এটি আরেকটি বাজে বই।”

প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ম্যাটিস, হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ জন কেলি ও অন্যান্যদের উদ্ধৃতি যেভাবে বইটিতে ব্যবহার করা হয়েছে তা ‘প্রতারণাপূর্ণ, জনগণের সঙ্গে কৌতুক’ বলেও টুইটারে মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প।

বইটিতে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে হুটহাট ক্ষেপে যাওয়া ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে আবেগতাড়িত ব্যক্তি হিসেবে চিত্রায়িত করা হয়েছে। ট্রাম্পের এ আচরণের ফলে প্রশাসনের ভেতর নিয়মিত অস্থিরতা দেখা দেয় এবং নির্বাহী বিভাগ প্রায়ই ‘বিচলিত’ হয়ে পড়ে বলেও দাবি উডওয়ার্ডের।

২০১৭ সালে সিরিয়ায় বেসামরিক নাগরিকদের ওপর রাসায়নিক হামলার পর ট্রাম্প দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে হত্যা করতে প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে বলেছিলেন বলে বইটিতে দাবি করা হয়েছে।

ম্যাটিস তাৎক্ষণিকভাবে ট্রাম্পকে ‘এটাই ঠিক আছে’ বললেও পরে সিরিয়ায় স্বল্প আকারের বিমান হামলার পরিকল্পনা আঁটেন, যা ব্যক্তি আসাদের ওপর হুমকি ছিল না।

পৃথক এক ঘটনায় মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী সহকর্মীদের কাছে ট্রাম্পের আচরণকে ‘পঞ্চম-ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রদের মত’ অভিহিত করেছেন বলেও বইতে উল্লেখ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ম্যাটিস ‘ফিয়ার: ট্রাম্প ইন দ্য হোয়াইট হাউস’ বইয়ে লেখা তথ্য উড়িয়ে দিয়ে একে ‘সাহিত্যের ওয়াশিংটন ব্রান্ডের অনন্য নজির’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। ট্রাম্পকে নিয়ে যেসব অবজ্ঞাসূচক কথা বইটিতে আছে সেগুলো ‘কখনো উচ্চারণ করিনি, কিংবা আমার উপস্থিতিতে হয়ওনি’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

 হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র সারাহ স্যান্ডার্স বলেছেন, “মনগড়া গল্প ছাড়া বইটি আর কিছুই নয়। এসব গল্পের বেশিরভাগই এসেছে সাবেক অসন্তুষ্ট কর্মচারীদের কাছ থেকে, যারা প্রেসিডেন্টকে বাজে লোক হিসেবে দেখানে চান।”

আসাদকে হত্যায় প্রেসিডেন্টের আগ্রহ নিয়ে বইয়ে যা লেখা হয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহের কথা জানিয়েছেন জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালিও।

 “ওই আলোচনার সময় সেখানে থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার, প্রেসিডেন্ট যে আসাদকে হত্যা করতে চাইছেন, তা একবারের জন্যও শুনিনি আমি,” মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেছেন হ্যালি।

গত শতকের ৭০ এর দশকে ওয়াটারগেইট কেলেঙ্কারি নিয়ে প্রতিবেদন করে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন সাংবাদিক উডওয়ার্ড। বিভিন্ন প্রেসিডেন্টদের প্রশাসন ও ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভেতরকার খবর নিয়ে বইও বের করেছিলেন তিনি।

তিনি কিভাবে তথ্য পেয়েছেন তা প্রকাশ করবেন না, এই সমঝোতার ভিত্তিতে এই বইয়ের জন্য ট্রাম্পের শীর্ষ উপদেষ্টা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন বলে দাবি করেছেন উডওয়ার্ড, জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট।  

রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা গেরি কোহন ট্রাম্পের ডেস্ক থেকে একটি চিঠি চুরি করেছিলেন বলেও নিজের বইতে বলেছেন এ সাংবাদিক। ট্রাম্প চিঠিটিতে স্বাক্ষর করে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে দাবি উডওয়ার্ডের।

মেক্সিকো ও কানাডার সঙ্গে থাকা ‘নর্থ আমেরিকান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট’ থেকে সরে আসার পরিকল্পনা সম্বলিত ট্রাম্পের অন্য একটি নথিও কোহন সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে জানিয়েছেন উডওয়ার্ড।

 “আমি তার ডেস্ক থেকে কাগজটি নিয়ে নিবো,” হোয়াইট হাউসের অন্য এক উপদেষ্টাকে সাবেক এ অর্থনৈতিক উপদেষ্টা এমনটাই বলেছিলেন বলে বইতে দাবি করা হয়েছে।

তবে ডেস্ক থেকে চিঠি চুরির কোনো ঘটনা ‘ঘটেইনি’ বলে ডেইলি কলারের কাছে দাবি করেছেন ট্রাম্প।

 “এটা বানোয়াট,” বলেছেন তিনি।

নতুন কিছু শর্ত নিয়ে আলোচনা চললেও যুক্তরাষ্ট্র এখনো ওই দুটি বাণিজ্য চুক্তিতে আছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

অন্য উপদেষ্টারাও ট্রাম্পের পেছনে তাকে নিয়ে অপমানসূচক কথা বলেন বলেও দাবি উডওয়ার্ডের।

কেলি মার্কিন প্রেসিডেন্টতে ‘নির্বোধ’ বলেছিলেন বলে বইতে উল্লেখ করা হয়েছে।

 “আমরা পাগলের শহরে আছি, যতগুলো চাকরি করেছি, তার মধ্যে এটিই সবচেয়ে বাজে,” হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ এমনটাই বলেছিলেন বলেও ভাষ্য উডওয়ার্ডের।

ট্রাম্পও তার উপদেষ্টাদের ঘৃণার পাত্র হিসেবে দেখতেন বলে ‘ফিয়ার: ট্রাম্প ইন দ্য হোয়াইট হাউস’-এ উল্লেখ করা হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রস ‘সেরা সময় পার করে’ এসেছেন, অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনস ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’- উপদেষ্টাদের বিষয়ে ট্রাম্প এমন মনোভাবই প্রকাশ করেন বলেও বইতে দাবি করা হয়েছে।

সেশনসকে ‘বোকা দক্ষিণি’ বলেছেন, উডওয়ার্ডের বইতে লেখা এমন কথায় প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

মঙ্গলবার টুইটারে তিনি বলেছেন, “কখনোই না, জেফসহ কারও বেলাতেই এমন শব্দ ব্যবহার করিনা আমি। একজন দক্ষিণি হওয়া খুবই অসাধারণ ব্যাপার। সে (উডওয়ার্ড) আমাদের বিভক্ত করতে এগুলো বানিয়েছে।”

হোয়াইট হাউস থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে কেলি বলেছেন, তিনি কখনোই প্রেসিডেন্টকে ‘গর্দভ’ বলেননি। উডওয়ার্ডের গালগপ্পকে ‘পুরোপুরি বাজে’ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি।

পা-ুলিপি শেষ হওয়ার আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সাংবাদিক উডওয়ার্ডের সঙ্গে বইটি নিয়ে কথা বলেননি বলেও জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট।

 “তাহলে আমাকে নিয়ে আরও একটি বাজে বই আসছে। বিরাট ব্যাপার,” পরে লেখকের সঙ্গে কথোপকথনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এমনটাই বলেছেন বলেও দুজনের ফোনালাপের প্রতিলিপির বরাত দিয়ে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ