বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

জাতীয় ঐক্যে আওয়ামী লীগের মাথা নষ্ট হয়ে গেছে -খন্দকার মোশাররফ

গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরাম আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, বিরোধী দলগুলোর জাতীয় ঐক্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও দলটির শীর্ষ নেতাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। যে কারণে তারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জাতীয় ঐক্য-বিরোধী কথাবার্তা বলছেন। তিনি বলেন, আমাদের সংবিধান ও সিআরপিসিতে আছে, একজন আসামীর বিচার করতে হলে সুস্থ অবস্থায় তার বিচার করতে হবে। তাই খালেদা জিয়াকে সুস্থ করাই এখন প্রধান ও প্রথম দায়িত্ব। আগে সুস্থ করুন তারপর বিচার করুন।
গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরাম আয়োজিত ‘ষড়যন্ত্রের রাজনীতির অবসান এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন। সংগঠনের উপদেষ্টা সাঈদ আহমেদ আসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এম জাহাঙ্গীরের পরিচালনায় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির ভাইস চেয়াম্যান সেলিনা রহমান, বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মো. রহমাতুল্লাহ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সহ সভাপতি ফরিদ উদ্দিন প্রমুখ।
আওয়ামী লীগ ছাড়া জাতীয় ঐক্য হাস্যকর, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, যারা গণতন্ত্র বাক্স বন্দী করেছে, তাদের নিয়ে কী গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ঐক্য সম্ভব? এ কারণেই জাতীয় ঐক্যে আওয়ামী লীগের থাকার কোনও সুযোগ নেই। বরং এই ঐক্য তাদের বিরুদ্ধেই। যারা অতীতে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল, গণতন্ত্র হত্যা করেছিল, যাদের হাতে বন্দী গণতন্ত্র, তাদের কাছ থেকে গণতন্ত্র উদ্ধারের কথা বলছি, আর তাদের নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ হবো, এরচেয়ে হাস্যকর কথা আর কিছু হয় না।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদের সংবিধান ও সিআরপিসিতে আছে, একজন আসামীর বিচার করতে হলে সুস্থ অবস্থায় তার বিচার করতে হবে। আদালতে কেন নেয়া হয়, শুনানির জন্য। এটার জন্য তো তার সুস্থ থাকা প্রয়োজন। একজন ব্যক্তি সুস্থ না হলে তাকে আদালতে নিয়ে বিচার করার উপায় নেই। তাই খালেদা জিয়াকে সুস্থ করাই এখন প্রধান ও প্রথম দায়িত্ব। আজকে সরকার সেই দায়িত্ব পালন করছে না। ষড়যন্ত্র করে দিনের পর দিন চিকিৎসা না করায় তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হচ্ছে। তাই সরকারের প্রতি আহ্বান জানাবো, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। আমরা আগেও বলেছি, তাকে বিশেষায়িত হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করা হোক।
তিনি বলেন, সরকার আইন সংবিধান উপেক্ষা করে হিংসার রাজনীতি চরিতার্থ করতেই খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠিয়েছে। তাকে চিকিৎসা না দিয়ে খারাপ অবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন বিচারের নামে তাকে আরও সাজা দিতে কারাগারে আদালত বসিয়েছে। খালেদা জিয়ার মানসিক শক্তি খর্ব করতে না পেরে তাকে শারীরিকভাবে দুর্বল করার চক্রান্ত চলছে। দলীয় নের্তৃবৃন্দ ও পরিবারের সঙ্গেও তাকে দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না। যা ইচ্ছে, যতোদিন ইচ্ছে সাজা দিন। কিন্তু তিনি মানসিকভাবে দুর্বল হবেন না।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতা আরও গুরুতর করতেই ষড়যন্ত্র চলছে। খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে জাতীয় নির্বাচনের বাইরে রাখতেই সব ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে। ভোটবিহীন সরকারের হাত থেকে জনগণ মুক্তি চায়। একটি অংশগ্রহণমূলক ও অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে এ বাকশালী সরকারের অবসান চায় দেশের জনগণ। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির এ সদস্য আরও বলেন, জনগণ এই সরকারকে আর দেখতে চায় না। কোমলমতি শিশুরা রাস্তায় নেমে রায় দিয়েছে যে, তারা রাষ্ট্রের মেরামত চায়। গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হলে গণতন্ত্রের নেত্রীকে মুক্ত করতে হবে। সরকারকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকার গঠন করতে হবে।
বর্তমান সংসদ জনগণের সংসদ নয় দাবি করে তিনি বলেন, আজকে জনগণ একটি বিষয়ে একমত, এই নির্বাচন কমিশন বিগত নির্বাচনগুলো, বিশেষ করে সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব মত বলে কিছু নেই। তাদের বক্তব্য আজকে সরকারের কর্তারা রাখেন। সেজন্য জনগণের দাবি এই নির্বাচন কমিশনেরও মেরামত দরকার। জনগণ নির্বাচনের সময় সামরিক বাহিনী মোতায়েন চায়। এসব বিষয়ে আজকে সারাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ। জনগণের পাশাপাশি আজকে ২০ দল, যুক্তফ্রন্টের বি চৌধুরী, ঐক্য প্রক্রিয়ার ড. কামাল হোসেন, আ স ম রব, মান্না, কাদের সিদ্দিকী, এমনকি চরমোনাইর পীর সাহেবও বলেছেন আগামী নির্বাচন সংসদ ভেঙে করতে হবে। আগামী নির্বাচনের তফসিলের আগে দেশে নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। তাছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।
কারাগারে আদালত বসিয়ে বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে খন্দকার মোশাররফ বলেন, আমরা বলেছি কারাগারে বিচারিক আদালত এটা সাংবিধানিক না। আমাদের সংবিধানে ৩৫(৩) অনুচ্ছেদে পরিষ্কার করে লেখা আছে, এ ধরনের বিচার প্রকাশ্যে হতে হবে। কারাগারের ভেতরে কীভাবে প্রকাশ্যে বিচার হবে? যে কারাগারে একটি বিরাট দেয়াল আছে এবং একটা গেট আছে, যে গেটের ভেতরে শুধু বন্দী ঢোকানো হয়, আর যদি কেউ বিশেষভাবে যায় তাকে অনুমতি নিয়ে ঢুকতে হয়। তাহলে এটা কীভাবে প্রকাশ্যে বিচার হলো? আমাদের সিআরপিসি’র ৩৫২ ধারায় লেখা আছে, এটাকে ওপেন কোর্ট হতে হবে। কারাগারের গেট বন্ধ থাকলে এটা ওপেন কোর্ট কীভাবে হয়? এটা সংবিধান বিরোধী। এটা প্রকাশ্য বিচার নয়। সিআরপিসির বিধান অনুযায়ী বিচার হতে হবে, উন্মুক্ত। তারা আইনের বাধ্যবাধকতা নিয়ে কথা বলেন না। প্রধানমন্ত্রী বললেন, কারাগারের গেট নাকি খোলা ছিল। আবার জিয়াউর রহমান নাকি কারাগারেই আদালত বসিয়ে বিচার করেছিলেন। যে সময় ওই বিচারটি হয়েছিল কর্নেল তাহেরের বিরুদ্ধে, সেটা রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা এবং সেনাবাহিনীতে বিদ্রোহ করার জন্য। সেই বিচার করেছিল সেনাবাহিনী। আর সেই বিচার ছিল মার্শাল ল‘ সরকারের অধীনে। দেশে সামরিক সরকার থাকলে সংবিধান থাকে না। সেই সময় মামলাটি পরিচালনা হয়েছে কারাগারের গেটের বাইরে সামরিক আদালত এবং সামরিক আইনের অধীনে। কিন্তু বর্তমানে দেশে সাংবিধানিক শাসন আছে। তাই মার্শাল ল’র সময়ের সঙ্গে এটাকে এক করে যৌক্তিক করা যাবে না। জনগণকে বিভ্রান্ত করতে এটা তারা করছে। আর কত মিথ্যাচার করবেন আপনারা।
আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলে আওয়ামী লীগ ৩০ আসনের বেশি পাবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, গোয়েন্দাদের রিপোর্ট পাবার পর ক্ষমতাসীনদের মাথা খারাপ হয়েছে। সরকার এখন আতঙ্কে। যে কারণে বিরোধীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে বাঁচার চেষ্টা চলেছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ