শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

কারাগারে খালেদা জিয়াকে হত্যার প্রচেষ্টা চলছে -মির্জা ফখরুল

গতকাল নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে খালেদা জিয়াকে মিথ্যা সাজানো মামলায় শাস্তি দিয়ে কারাগারে বেআইনিভাবে আটক রেখে হত্যা করার হীন প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। তিনি বলেন, কারাবন্দী খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারেন না। এ সময় বেগম জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।
গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এত ভয় কেনো? এত ভয়টা কেনো? কারণটা বুঝি না! উনারা তো সব সময় বলেন, উনারা গণতন্ত্রের পথেই চলছেন, সবচেয়ে বেশি উন্নতি হচ্ছে, মানুষ তাদের সঙ্গে আছে। মানুষ সঙ্গে থাকলে ভোট ঠিক ঠাক মতো দেন না? অবাধ ও নিরপেক্ষ করেন। দেশনেত্রীকে মুক্তি দেন। আপনি যেমন ভোট করছেন। দেশনেত্রীকেও জনগণের কাছে যেতে দেন। দেখেন কে কত ভোট পায়? ভয় পান কেনো? ভয় এজন্যই পাচ্ছেন, কারণ আপনারা জেনে গেছেন যে, জনগণ আপনাদের সাথে আর নেই।
তিনি বলেন, এই অবৈধ সরকার একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়ে বাংলাদেশকে একটি স্বৈরাচারী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। এক ব্যক্তির স্বেচ্ছাচারিতায় দেশ চলছে। বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। জনগণ এদের পরিবর্তন চায়।
খালেদা জিয়ার সাথে তার পরিবারের সদস্যরা সাক্ষাৎ করেছেন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, পরিবারের সদস্যবৃন্দ গত  বৃহস্পতিবার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করতে কারাগারে গিয়েছিলেন। তারা এসে যে বর্ণনা দিয়েছেন, তাতে আমরা কেবল উদ্বিগ্নই নই, আমরা হতবাক, বিস্মিত। বিএনপি চেয়ারপারসনের স্বজনেরা জানিয়েছেন যে, দেশনেত্রী অত্যন্ত অসুস্থ। তার বাঁ হাত ও বাম পা প্রায় অবশ হয়ে গেছে। অসহ্য ব্যথা অনুভব করছেন তিনি। একই কথা তিনি বলেছেন, ৫ তারিখে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তরিত বেআইনী আদালত কক্ষে। আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন তার স্বাস্থ্য নিয়ে। অবিলম্বে বিশেষায়িত হাসপাতালে স্থানান্তর করে বেগম জিয়াকে চিকিৎসা দেওয়া তার জীবন রক্ষার জন্য অতি প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
প্রসঙ্গত, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ বছরের কারাদ-প্রাপ্ত খালেদা জিয়া গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী। ওই মামলায় তিনি হাই কোর্ট থেকে জামিন পেলেও অন্য মামলায় গ্রেপ্তার থাকায় তার মুক্তি মিলছে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের সংবিধান এবং প্রচলিত আইন অনুযায়ী কোনো অসুস্থ নাগরিককে সুস্থ না হলে বিচার কাজ চালানো যায় না। এটা সম্পূর্ণ অমানবিক এবং সংবিধান পরিপন্থী। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে রাজনীতি এবং আসন্ন নির্বাচন থেকে দূরে রেখে একতরফা নির্বাচনে নিজেদের বিজয়ী ঘোষণা করার নীলনকশা নিয়েই এগোচ্ছে সরকার।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার এতটাই নিচে নেমে গেছে যে, একজন মারাত্মক অসুস্থ সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে চিকিৎসার কোনো সুযোগ দিচ্ছে না। অথচ চিকিৎসা পাওয়া তার সাংবিধানিক অধিকার।
মির্জা ফখরুল বলেন, গণবিরোধী সরকার নিশ্চিত হয়েছে যে, খালেদা জিয়া মুক্ত হলে তাদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব বিপন্ন হবে এবং আগামী নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি হতে বাধ্য। এটি এখন শুধু বিএনপির কথা নয়, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিনাক ভট্টাচার্য সম্প্রতি তার লেখায় এ কথা বলেছেন। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের লজ্জাজনক পরাজয় হবে দাবি করে ফখরুল ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়া যেন নির্বাচনে নেতৃত্ব দিতে না পারেন এবং জনগণ যেন তাদের পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দিতে না পারে, এ জন্যই সরকার তার চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বেআইনিভাবে সাজা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, সরকার তাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। আইন বহির্ভূতভাবে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আনা এই মামলায় উচ্চতর আদালত জামিন দেওয়ার পরও তাকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না। সম্পূর্ণ মিথ্যা, সন্ত্রাসী ও নাশকতার মামলায় তাকে জামিন দেওয়া হচ্ছে না। যদিও এসব মামলায় অন্যান্য অভিযুক্তদের সবাইকে জামিন দেয়া হয়েছে।
খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে সকল দায়দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। বিশেষ করে সংবিধান লঙ্ঘন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে সরকারকে অভিযুক্ত হতে হবে। কারা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব সুস্পষ্টভাবে আইন ও বিধান দ্বারা পরিচালিত। এ দায় তাদেরও বহন করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়াকে পরীক্ষা করে চিকিৎসকেরা বলেছেন তিনি মারাত্মকভাবে অসুস্থ। অবিলম্বে বিশেষায়িত হাসপাতালে স্থানান্তর করে তার জীবন রক্ষার জন্য তাকে চিকিৎসা দেওয়া অতি প্রয়োজন। সরকার কোনো কথার কর্ণপাত না করে শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য চিকিৎসা না দিয়ে পরিত্যক্ত নির্জন কারাগারে স্যাঁতসেঁতে অস্বাস্থ্যকর কক্ষে আবদ্ধ করে রেখেছে। একজন সাধারণ বন্দীর সঙ্গেও এ ধরনের আচরণ করা হয় না। বেগম জিয়ার অবদান যারা অস্বীকার করতে চান, তারা কেউই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না বলে বিএনপি মনে করে।
মির্জা ফখরুল আরো বলেন,  দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অবদান যারা অস্বীকার করতে চান তারা কেউই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে বলে আমরা মনে করি না।  আর সে জন্যই সারাদেশে হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে সরকার তাদের নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখার হীন প্রচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ