খুব শীঘ্রই ক্ষমতাসীন আ’লীগের পতন ঘটবে
স্টাফ রিপোর্টার : খুব শীঘ্রই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পতন ঘটবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, এই সরকারকে চলে যেতে হবে। তাদের দিন শেষ হয়ে এসেছে। জনগণ তাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আওয়ামী লীগ এখন একটা দেউলিয়া রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। খুব শীঘ্রই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পতন ঘটবে। দলের চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে পূর্বঘোষিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন। কথিত জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলার রায়ে পাঁচ বছরের সাজায় খালেদা জিয়া গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পুরনো ঢাকার পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী রয়েছেন। তার মুক্তির দাবিতে বিএনপি ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে আসছে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে গতকাল সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্য্ন্ত এক ঘন্টার এই মানবন্ধন হয়। ঢাকার এই কেন্দ্রীয় কর্মসূচির পাশাপাশি সারাদেশে মহানগর ও জেলা সদরে একযোগে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। জাতীয় প্রেস ক্লাবের ফুটপাতসহ সড়কের দুই প্রান্তে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে মানববন্ধন একটা সমাবেশে রূপ দেয়। নানা বয়সের নেতা-কর্মীরা ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’, ‘জেলের তালা ভাঙবো খালেদা জিয়াকে আনবো’, ‘খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচন মানি না, মানবো না’ ইত্যাদি শ্লোগান দেয়। ঢাকার মানববন্ধন ঘিরে সকাল থেকে বিএনপি, এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হন। তাদের অবস্থান একদিকে প্রেসক্লাব থেকে সুপ্রিম কোর্টের সামনের কদম ফোয়ারা, অন্যদিকে পল্টন মোড় পর্যন্ত গিয়ে ঠেকে।
দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদের পরিচালনায় মানববন্ধনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, বেগম সেলিমা রহমান, বরকতউল্লাহ বুলু, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, শওকত মাহমুদ, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবিব প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
বিএনপির এই মানববন্ধন কর্মসূচিকে ঘিরে সকাল ১০টা থেকেই জাতীয় প্রেস ক্লাব এলাকার আশ-পাশে অতিরিক্ত পুলিশ ও সাদা পোষাকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। কাছাকাছিতে অবস্থান ছিল পুলিশের সাঁজোয়া যান ও পানি কামানের গাড়ি। কর্মসূচি শুরুর আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু না করলেও মানববন্ধন শেষে ফেরার পথে কেন্দ্রীয় নেতাসহ শতাধিক নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। বিএনপি বলেছে, রাজধানীসহ সারাদেশে মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিলেই বুঝা যাবে সরকার নির্বাচন চায় এরকম মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, এদেশের কোনো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না জনগণের কাছে, যদি দেশনেত্রী কারাগারে থাকেন। সুতরাং সবার আগে যে কাজটি করতে হবে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিলে তাহলে বুঝা যাবে যে, এই সরকার দেশে নির্বাচন চায়।
সকল রাজনৈতিক দলকে সরকারবিরোধী বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যে সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, এখন দরকার আমাদের ঐক্য, ইস্পাত কঠিন ঐক্য। দলের মধ্যে সেই ঐক্য তৈরি করে, জনগনের মধ্যে সেই ঐক্য তৈরি করে, সকল রাজনৈতিক দল ও সকলের মিলে সেই ঐক্য তৈরি করে এই যে ভয়াবহ দানবকে সরিয়ে জনগনের সরকার, জনগনের গণতন্ত্র, জনগনের রাষ্ট্র তৈরি করতে হবে।
তিনি বলেন, সমগ্র জাতিকে আহবান জানাচ্ছি, কারাগারে যাওয়ার আগে দেশনেত্রী যে আহবান দিয়ে গেছেন- সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই অচলায়তনকে ভাঙতে হবে। এই সরকার যারা বুকের ওপর পাথরের মতো বসে আছে তাদেরকে সরাতে হবে। তিনি বলেন, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে আজকে জনগনের একটা সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে তফসিল ঘোষণার আগেই, সংসদ ভেঙে দিতে হবে তফসিল ঘোষনার আগেই। আমরা বলেছি একটা নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে নির্বাচন পরিচালনার জন্য, নির্বাচন কমিশন পূনর্গঠন করতে হবে, নির্বাচনের সময় সেনা বাহিনীকে মোতায়েন করতে হবে।
সরকারের দমনপীড়নের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার এখন একটা সন্ত্রাসী সরকারে পরিণত হয়েছে। তারা সন্ত্রাসী করছে। একদিকে হুমকি-ধুমকি দিচ্ছে অন্যদিকে বিনা কারণে গ্রেফতার মামলা করে গোটা জাতিকে একটা জিম্মিতে পরিণত করেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সারাদেশে পরিকল্পিতভাবে ভৌতিক মামলা তৈরি করে তারা বিরোধী নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করছে। আমাদের কাছে খবর এসেছে ইতিমধ্যে এক লাখের ওপর মানুষকে আসামী করেছে, ১২ হাজার মানুষকে গ্রেফতার করেছে। পরিষ্কার করে বলতে চাই, এভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে, গুম করে, খুন করে, নির্যাতন করে কোনোদিন ক্ষমতায় টিকে থাকা যাবে না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া আট মাস কারারুদ্ধ। সরকার অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় তাকে আটকে রেখেছে। উচ্চ আদালত তাকে জামিন দিলেও সরকার একটার পর একটা মিথ্যা মামলা দিয়ে আটকে রাখছে। তারা চায়, বিএনপি ও দেশনেত্রীকে বাইরে রেখে নির্বাচন করতে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। এটি তার প্রাপ্য, আমরা সরকারের কাছে বা কারো কাছে কোনো দয়াভিক্ষা চাইছি না। দেশের একজন সম্মানিত নাগরিক হিসেবে তার সাংবিধানিক অধিকার অবশ্যই দিতে হবে।
ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, সরকার গত ১০ বছরে বাংলাদেশকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে, সংসদকে ধ্বংস করে দিয়েছে, এখন সংসদে একটা গৃহপালিত বিরোধী দল বসিয়েছে। যারা সরকারেও আছে, বিরোধী দলেও আছে। নিজেদের স্বার্থে প্রশাসন দলীয়করণ করেছে, এখন বিচার বিভাগ পুরোপুরি ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছে।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকারের একটাই উদ্দেশ্য দেশনেত্রীকে ছাড়া, বিএনপিকে ছাড়া ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির তো নির্বাচন করতে চায়। দেশের মানুষ আজকে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে এই দেশে আগামী নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। সারাদেশের মানুষ যেমন এই দাবিতে একমত, সারা বিশ্বও বাংলাদেশে একটা সুষ্ঠ সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়।
খন্দকার মোশাররফ আরো বলেন, সরকার খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা দিচ্ছে না। তিনি গুরুতর অসুস্থ। তাকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় যেকোনো পরিস্থিতির দায় সরকারকেই নিতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে একটি জাতীয় ঐক্য গঠন করে ক্ষমতাসীনদের পতন নিশ্চিত করা হবে। সে জন্য সবাইকে প্রস্তুতি নিতে হবে। আন্দোলন ছাড়া সরকারের অপশাসন থেকে মুক্তির কোনো বিকল্প নেই।
কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে জেলের ভিতরে ক্রমান্বয়ে নিঃশেষ করার ষড়যন্ত্র সম্পূর্ণ সংবিধানের বরখেলাপ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড.আব্দুল মঈন খান। তিনি বলেন, বিএনপির চেয়ারপার্সন শুধু এদেশের নাগরিক নন, তিনি এদেশের তিন তিন বারের প্রধানমন্ত্রী, অথচ দুঃখের বিষয় তাকে জেলের ভিতর ক্রমান্বয়ে নিঃশেষ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে যা সম্পূর্ণ সংবিধানের বরখেলাপ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে ৫টি মৌলিক অধিকার রক্ষার দায়িত্ব হচ্ছে সরকারের। খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, আবাসনের অধিকার প্রতিটি নাগরিকের উপর প্রযোজ্য কিন্তু সরকার তা না করে ২০১৪ সালের মতো নির্বাচনের প্রহসন করছে। বিএনপির এই নেতা বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসা নিয়ে সরকার ছলচাতুরী এবং ধোঁকাবাজি নির্বাচন করতে দেব না। আমরা বেগম জিয়াকে মুক্ত করেই গণতন্ত্রের লড়ায়ে নামবো। এবং ৪র্থ বারের মতো প্রধানমন্ত্রী করবো।
মানববন্ধনে সরকারকে হুশিয়ার করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামছুজ্জামান দুদ বলেন, এখন শুধু দাবি করছি। যখন কারাগারের প্রতিটি ইট দেশের জনগণ খুলে নিবে সেটি আপনি এখনো বুঝতে পারেন নাই! দুদু বলেন,বেগম জিয়াকে মুক্তি দিলে দেশের রাজনীতির পরিস্থিতি ভালো হবে । তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করলে জনগণ খুশি হবে। তাকে মুক্তি না দিলে দেশে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে তার দ্বায় ভার শেখ হাসিনা আপনাকে নিতে হবে । এখন দাবি একটাই বেগম জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
শোকবার্তা: রাজশাহী জেলাধীন তানোর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ও তানোর উপজেলার নির্বাচিত চেয়ারম্যান এমরান মোল্লা, সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমেদ এর মাতা চম্পা খানম এর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি মরহুম ও মরহুমার রুহের মাগফিরাত কামনা এবং শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।