শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি এবং পুলিশ

গত সোমবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনের কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। সে অনুযায়ী রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সকাল থেকে দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা জমায়েত হতে শুরু করেছিলেন।
কিন্তু শান্তিপূর্ণ ওই কর্মসূচিতেও বাধা দিয়েছে পুলিশ। প্রথমে কিছু না বললেও দলের নেতারা সমাবেশে বক্তৃতা দিতে শুরু করার পর হঠাৎ করে পুলিশ ধরপাকড় আরম্ভ করেছে। দু’চারজনকে নয়, পুলিশ গ্রেফতার করেছে শতাধিক নেতা-কর্মীকে। বিএনপির পক্ষ থেকে পরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, গ্রেফতারকৃতদের সংখ্যা ১৩৬। রাজধানীর পাশাপাশি গাজীপুর, যশোর, ফরিদপুর ও বাগেরহাটসহ দেশের অন্য কিছু স্থানেও অনেক নেতা-কর্মিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের সংখ্যা দুইশ’র বেশি। তাছাড়া গাজীপুরের মতো কোনো কোনো এলাকায় লাঠিচার্জ তো করেছেই, পুলিশের বিরুদ্ধে গুলীবর্ষণের অভিযোগও উঠেছে। এরকম এক ঘটনায় গাজীপুরে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। সেখানে বিএনপি নেতা মরহুম হাননান শাহর ছেলেসহ নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারও করা হয়েছে।
উদ্বেগের কারণ হলো, পুুলিশের পক্ষ থেকে গ্রেফতারকৃতদের সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানানো হয়নি। বিএনপি যেখানে ১৩৬ জনকে গ্রেফতারের কথা বলেছে পুলিশ সেখানে জানিয়েছে, তারা নাকি পুরনো বিভিন্ন মামলার ৫৩ জন আসামীকে গ্রেফতার করেছে! দেশের অন্য সব স্থানে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের সম্পর্কেও সঠিক তথ্য জানতে পারছেন না স্বজনেরা। ফলে বিএনপির পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যেও গুমের আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। বলা হচ্ছে, পুলিশ যাদের নাম ও সংখ্যার ব্যাপারে লুকোচুরি করছে তারা গুমও হয়ে যেতে পারেন। অর্থাৎ তাদের হয়তো আর খোঁজই পাওয়া যাবে না! 
আমরা বিএনপির পূর্বঘোষিত ও শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে সরকারের এই গ্রেফতারের অভিযান এবং দমননীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাই। কারণ, বিএনপি শুধু ব্যাপকভাবে জনসমর্থিত দল নয়, নিয়মতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক এবং আইনানুগভাবে নিবন্ধিত প্রধান একটি রাজনৈতিক দলও। বিভিন্ন সময়ে তিনবার ক্ষমতাসীন দলটির সকল কার্যক্রমও গণতন্ত্রসম্মত ও শান্তিপূর্ণ পন্থায় পরিচালিত হয়। সোমবারের মানববন্ধন কর্মসূচিও শান্তিপূর্ণই ছিল। এজন্যই এর নেতা-কর্মিদের গ্রেফতার এবং তাদের বিরুদ্ধে নাশকতার পুরনো মামলা ও নাশকতার পরিকল্পনা করার মতো অভিযোগ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। জনগণও তেমন কোনো প্রচারণায় বিশ্বাস করবে না। একই কারণে সরকারের উচিত অবিলম্বে সকল নেতা-কর্মিকে মুক্তি দেয়া।
আমরা মনে করি, বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার পাশাপাশি শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার স্বার্থেই দেশে গণতন্ত্রসম্মত সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা দরকার। বিষয়টি অন্য কিছু বিশেষ কারণেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সে কারণটি সরকারের দমননীতির বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা বিশ্ব জনমত। মাত্র দিন কয়েক আগেই নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিভিন্ন সংগঠন এবং নোবেল বিজয়ীরা বিবৃতি দিয়েছেন। সর্বশেষ ঘটনায় সরকারের নিন্দা জানিয়ে বক্তব্য রেখেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল বাশেলেত। জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের ৩৯তম অধিনেবশনে ১০ সেপ্টেম্বর তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে আরো অনেক পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে  মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অপরিহার্য। সরকারের উদ্দেশে একই ধরনের বক্তব্য এসেছে আরো অনেক ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষ থেকেও।
অন্যদিকে দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতায় আসার পর সরকার যে দমননীতি অবলম্বন করতে শুরু করেছিল তা থেকে পিছিয়ে আসার কোনো লক্ষণই এখনো দেখা যাচ্ছে না। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর পাশাপাশি অন্য সব দলও বরং অভিযোগ তুলেছে, সরকার আরো একবার নীলনকশার নির্বাচন করে ক্ষমতায় ফিরে আসার চেষ্টা চালাচ্ছে। সে চেষ্টার অংশ হিসেবেই পুলিশ বিরোধী দলকে এমনকি শান্তিপূর্ণ কোনো কর্মসূচিও পালন করতে দিচ্ছে না। আমরা মনে করি, সরকারের অনুধাবন করা উচিত, জনগণের প্রতিরোধের মুখে এ ধরনের কোনো চেষ্টাই সাফল্য অর্জন করতে পারবে না। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো একতরফা ও একদলীয় নির্বাচন করাও আর সম্ভব হবে না। এজন্যই সরকারের উচিত অবিলম্বে নির্যাতন ও গ্রেফতারের অভিযান বন্ধ করা এবং দেশকে গণতন্ত্রের সুষ্ঠু পথে ফিরিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে সততার সঙ্গে উদ্যোগী হওয়া। এ উদ্দেশ্যে সরকারের উচিত অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দায়ের করা সকল সাজানো মামলা প্রত্যাহার করে নেয়া। আমরা চাই, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ সকল দলকেই তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে দেয়া হোক।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ