বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করলেন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল

সংগ্রাম ডেস্ক : সবুজের সমাহার রমনা পার্ক সংলগ্ন এলাকায় রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত পাঁচ তারকা হোটেল উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশের হোটেল আতিথেয়তার ক্ষেত্রে নতুন বৈশিষ্ট্য যোগ হলো গত বৃহস্পতিবার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকার উদ্বোধনকালে আশাবাদ ব্যক্ত করেন, ‘সম্পূর্ণ গ্রীন হোটেল হিসেবে এবং সর্বাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সমৃদ্ধ এই হোটেলটি বিশ্ব গ্রাহকদের কাছে নতুন এক চমক সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে।’
তিনি বলেন, ‘এই হোটেল বিদেশী পর্যটক ও অতিথিদের ব্যবসায়িক ও ব্যক্তিগত কাজের ক্ষেত্রে আরও আকৃষ্ট করবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের উন্নয়নের ফলে দেশে বিদেশী বিনিয়োগকারী, পর্যটক এবং দর্শনার্থীদের আগমন বেড়ে যাওয়ায় আমাদের আরো নতুন নতুন উন্নত মানের ও আধুনিক হোটেল দরকার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সাথে ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। এটিই ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম পাঁচ তারকা হোটেল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনার সাক্ষী এই হোটেল।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী একেএম শাজাহান কামাল, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মুহম্মদ ফারুক খান এবং ইন্টাকন্টিনেন্টাল গ্রপের রিজিওনাল ডিরেক্টর ডেভিড টড অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন।
বাংলাদেশ সার্র্ভিসেস লিমিটেডের (বিএসএল) চেয়ারম্যান এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো মহিবুল হক, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং বিএসএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো মুকাব্বির হোসেনও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী পরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ, বিদেশী কূটনতিক, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সদস্যবৃন্দ এবং আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭০-এর নির্বাচনে সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জনের পরও বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানীরা ক্ষমতা দেবে না। সে সময় এটিই ছিল একমাত্র ভাল হোটেল। তখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকরা এখানে উপস্থিত হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৎকালিন এই হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে যে বিদেশী সাংবাদিকরা ছিল পাকিস্তানী সেনাবাহিনী অ্যাকশনে যাওয়ার আগে তাঁদের হোটেলে আটক করে ফেলে। আর বের হতে দেয়নি।
তিনি বলেন, সায়মন ড্রিং তখন অল্প বয়সী ছিলেন এবং লুকিয়ে হোটেলের কিচেন দিয়ে কর্মচারীদের সহযোগিতায় বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন।
 শেখ হাসিনা বলেন, সেই ছিল প্রথম সাংবাদিক যিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনী যে গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ শুরু করেছিল, ঢাকার রাজপথে যে শুধু লাশ পড়ে ছিল, সেই ছবি তুলে বার্তাটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হন। কাজেই এই হোটেলের সঙ্গে আমাদের অনেক স্মৃতি জড়িত।
 সেই ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল, পরে শেরাটন এবং সেখান থেকে রূপসী বাংলা নাম ধারণ করে ৪ বছরের সংস্কার ও আধুনিকায়নের পর আজ আবার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৬০ বছরের পুরনো ভবন সংস্কারের মাধ্যমে নতুন রূপে সেজেছে পাঁচতারকা এই হোটেল।
তিনি বলেন, ভবনের মূল কাঠামো ঠিক রেখে যুক্ত করা হয়েছে স্থানীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও মোগল স্থাপত্যশৈলী। সঙ্গে আধুনিক সময়ের চাহিদা মেটাতে আনা হয়েছে অবকাঠামোগত পরিবর্তন। আন্তর্জাতিক মান রক্ষার জন্য হোটেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশে নিয়ে গিয়ে প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ বিশ্বব্যাপী ইন্টারকন্টিনেন্টালে যে ধরনের সেবা ও সুবিধা পাওয়ার কথা, এই হোটেলটিকেও সেভাবে অতিথিদের জন্য নতুন রূপে গড়ে তোলা হয়েছে।
২২৬ কক্ষ বিশিষ্ট এই হোটেলটিতে ২০১টি প্রিমিয়াম ডিলাক্স রুম, ১০টি ডিলাক্স সুইট, ৫টি সুপিরিয়র সুইট, ৫টি ডিপ্লোমেটিক সুইট এবং ৪টি প্রেসিডেন্সিয়াল সুইট এবং অনেকগুলো ক্যাফে ও রেস্তোরাঁ রয়েছে।
২০১৪ সালে হোটেলটির সংস্কার কাজের শুরু হয়। ব্রিটিশ গ্লোবাল হোটেল চেইন ইন্টারকন্টিনেন্টাল গ্রুপ (আইএইচজি) এবং বাংলাদেশ সার্র্ভিসেস লিমিটেডের (বিএসএল) মধ্যে এ নিয়ে একটি ৩০ বছরের চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী হোটেলটির বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ