ঢাকা, বৃহস্পতিবার 18 April 2024, ০৫ বৈশাখ ১৪৩০, ৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী
Online Edition

বাগেরহাটে মধুমতী নদীভাঙনে তলিযে যাচ্ছে বাড়িঘর-দোকানপাট, ফসলি জমি

সংগ্রাম অনলাইন ডেস্ক:

বাগেরহাটের চিতলমারীতে মধুমতী নদীর ভাঙন গত কয়েকদিনে তীব্র আকার ধারণ করেছে। একের পর এক ভাঙনের কবলে পড়ে বাড়িঘর, স্থানীয় বাজারের দোকানপাট এবং ফসলি জমিসহ গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

সরেজমিনে ইউএনবির প্রতিবেদক দেখতে পান, শৈলদাহ গ্রামে ঢাকা-পিরোজপুর সড়কের একাংশ ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নদী ভাঙনের কবলে পড়ে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

মধুমতী নদীতে প্রবল স্রোতে বয়ে যাচ্ছে। জোয়ারে পানিতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ নদী। পানির চাপে নদী পাড়ের বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়ছে। কেউ কেউ ভাঙনের কবল থেকে সহায় সম্পদ রক্ষা করার চেষ্টা করছেন।

স্থানীয় গ্রামবাসী জানায়, গত কয়েক বছর ধরে মধুমতী নদী কলাতলা ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের বেশকিছু এলাকা গ্রাস করেছে। মধুমতী নদীতে তাদের বাড়িঘর, দোকানপাট, ফসলি জমি এবং গাছপালা ভেঙে গেছে। প্রতিবছর নদী ভেঙে জনবসতি বিলীন হচ্ছে। দ্রুত ভাঙন রোধ করা না গেলে একের পর এক গ্রাম নদীগর্ভে বিলিন হবে। এক সময় মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে মধুমতী পাড়ের বেশ কয়েকটি গ্রাম।

ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, গত সপ্তাহে হঠাৎ করে নদীতে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে। ভাঙনের কবলে পড়ে তিনটি বসত বাড়ি, পাঁচটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ফসলি জমি ও গাছপালা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করায় মধুমতী নদী সংলগ্ন কয়েকশ বাড়িঘর, একটি বাজার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বেশ কিছু ফসলি জমি নদীগর্ভে হারিয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কা স্থানীয়দের।

ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পেতে স্থায়ীভাবে টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছে গ্রামবাসী।

চিতলমারী উপজেলার কলাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিকদার মতিয়ার রহমান জানান, মধুমতী নদীর ভাঙন এখন তীব্র আকার ধারণ করেছে। একের পর এক ভাঙনের কবলে পড়ে তার ইউনিয়নের শৈলদাহ, চরকুলিয়া, মচন্দপুর, বাকপুর এবং পরাণপুর গ্রামের সহশ্রাধিক বাড়িঘর এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। প্রায় ৫০ বিঘা ফসলি জমি হারিয়ে গেছে নদীতে। ওই সব গ্রামের মানুষের হাজার হাজার গাছপালা নদী গ্রাস করেছে। দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা তার বাড়ির সামনে সড়কের বেশকিছু অংশ নদীতে ভেঙে গেছে।

নদী পাড়ের বাসিন্দা এবং তাদের সম্পদ রক্ষার জন্য জরুরি ভিত্তিতে টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান চেয়ারম্যান।

শৈলদাহ বাজারের ব্যবসায়ী আলামিন শেখ জানান, গত কয়েকদিনে ভাঙনের কবলে পড়ে তার একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এখন নদীগর্ভে। এছাড়া ওই বাজারের মুদি দোকান, ওষুধ, হার্ডওয়ার, সেনেটারিসহ বিভিন্ন ধরনের পাঁচটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং তিনটি বসত বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, ১৯৯৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত মধুমতী নদী ভাঙনের কবলে পড়ে কলাতলা ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের কয়েক হাজার ঘরবাড়ি নদীতে হারিয়ে গেছে। ওই সব এলাকার পরিবারের সদস্যরা সহায় সম্পদ হারিয়ে এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

শৈলদাহ বাজারের গ্রাম্য চিকিৎসক আব্দুস সোবাহান জানান, গত বছর তার বসত বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এরপর তিনি নদী থেকে অনেক দূরে নতুন করে বাড়িঘর তৈরি করে পরিবার নিয়ে বসবাস শুরু করেন। কিন্তু ভাঙতে ভাঙতে তার বসত বাড়ির কাছে চলে আসে মধুমতী নদী। মঙ্গলবার দুপুরে তার বসত বাড়ির একাংশ এবং চেম্বার নদীতে হারিয়ে গেছে।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম রেফাত জামিল জানান, এক সপ্তাহ আগেই তারা দেখেছিল মধুমতী নদীর শৈলদাহ এলাকায় বেশকিছু এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ফ্যাক্স বার্তার মাধ্যমে জানানো হয়। শৈলদাহ এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ৯০ মিটার সড়কের প্রায় ১৭ মিটার ভেঙে নদীতে বিলিন হয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া বেশ কয়েকটি বাড়িঘর এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নদীতে ভেঙে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন প্রকৌশলী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

তিনি আরো জানান, মধুমতী নদীর ভাঙন রোধ করতে টেকসই বাঁধ নির্মাণের একটি প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। ওই প্রকল্প অনুমোদন পেলে টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা গেলে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাবে এলাকাবাসী।

এদিকে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস জানান, মধুমতী নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরির্দশন করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ভাঙন ঠেকানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানানো হয়েছে। নদী ভাঙন রোধ করতে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জানা গেছে, বাগেরহাট ও গোপালগঞ্জ জেলার সীমান্ত দিয়ে বয়ে গেছে প্রমত্ত মধুমতী। মধুমতীর দক্ষিণ পাড়ে বাগেরহাটের চিতলমারী এবং উত্তর পাড়ে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলা। চিতলমারীর ওপর দিয়ে মধুমতী প্রবাহিত হয়েছে। চিতলমারী উপজেলার অংশে মধুমতীর দৈর্ঘ্য  প্রায় ২২ কিলোমিটার। প্রতিবছর এই সময় অশান্ত হয়ে উঠে মধুমতী। জোয়ারে পানির চাপ বাড়লে নদীর ভাঙনও বাড়তে থাকে। গত তিন যুগ ধরে ভাঙন চলছে মধুমতী নদে। এরইমধ্যে চিতলমারী উপজেলার কলাতলা ইউনিয়নের শৈলদাহ, চরকুলিয়া, মচন্দপুর, বাকপুর এবং পরাণপুর গ্রামের কয়েকশ বাড়িঘর, দোকানপাট, গাছপালা এবং ফসলি জামি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। কয়েকশ পবিবার তাদের সহায় সম্বল হারিয়েছে মধুমতী নদে।
-ইউএনবি

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ