ভোটাধিকার ফেরাতে ১৬ কোটি মানুষকেই রাজপথে নামতে হবে
# পাড়ায় মহল্লায় ঘরে ঘরে ঐক্য গড়ে তুলুন -ড.কামাল
# হাতুড়ি আর হেমলেট মার্কা গণতন্ত্র চলতে পারে না -রব
স্টাফ রিপোর্টার : সংবিধান অনুযায়ী দেশের মালিক জনগণ। কিন্তু মালিকেরই ভোটাধিকার নেই। ভোটাধিকার এবং গণতন্ত্র ফেরাতে দেশের ১৬ কোটি মানুষকেই রাজপথে নামতে হবে। এজন্য নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও সংসদ ভেঙে দেয়াসহ ৫ দাবি জানিয়েছেন যুক্তফ্রন্টের নেতারা। একই সাথে তারা ৯ দফা লক্ষ্যও ঘোষণা করেছেন।
গতকাল শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে এই ঘোষণা দেয়া হয়। ঘোষণাপত্র পড়ে শোনান নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। এসময় উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহবায়ক সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন,ঐক্য প্রক্রিয়ার অন্যতম উদ্যোক্তা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডির) সভাপতি আসম রব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা, জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ।
উল্লেখ্য, অসুস্থ হয়ে পড়ায় অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি, যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। এসময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন,নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, এই সরকার আইন বিচার বিভাগ কিছুই মানে না। তারা ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে গুম হত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। কাউকে কথা বলতে দিচ্ছে না। কোন দাবি নিয়ে রাজপথে দাড়ানো যাচ্ছে না। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন,আমাদের আজকের (শনিবার) কর্মসূচি ছিল, কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে। কিন্তু তারা আমাদের অনুমতি না দিয়ে শহিদ মিনার দখল করে রেখেছে।
লিখিত পাঁচ দফা দাবি হলো- জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। ওই সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।
অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাক্, ব্যক্তি, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সব রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে।
কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রছাত্রীসহ সব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আনা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে এবং গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের মুক্তি দিতে হবে। এখন থেকে নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা যাবে না।
নির্বাচনের এক মাস আগে থেকে নির্বাচনের পর ১০ দিন পর্যন্ত মোট ৪০ দিন প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে দিতে হবে।
নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের চিন্তা ও পরিকল্পনা বাদ দিতে হবে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর যুগোপযোগী সংশোধন করতে হবে। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে।
৯টি লক্ষ্য বাস্তবায়নে জাতীয় ঐক্যের ঘোষণা দিয়েছেন ড. কামাল হোসেন। ঘোষিত নয় দফা তুলে ধরা হলো। এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক নির্বাহী ক্ষমতা অবসানের জন্য সংসদে, সরকারে, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা এবং প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ, ন্যায়পাল নিয়োগ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কার্যকর করা। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ ও সৎ যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগের জন্য সাংবিধানিক কমিশন গঠন করা।
দুর্নীতি দমন কমিশনকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার নিশ্চিত করা হবে। দুর্নীতিমুক্ত, দক্ষ ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গড়ে তুলে সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি- বেসরকারি পর্যায়ে দুর্নীতি কঠোর হাতে দমন ও দুর্নীতির দায়ে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা।
বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিবেশ সৃষ্টি, বেকারত্বের অবসান ও শিক্ষিত যুবসমাজের সৃজনশীলতা ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাকে একমাত্র যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা। কৃষক-শ্রমিক ও দরিদ্র মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সরকারি অর্থায়নে সুনিশ্চিত করা। জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, স্থানীয় সরকারসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতি ও দলীয়করণ থেকে মুক্ত করা।
বাংলাদেশ ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা আনা, সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার, সুষম বণ্টন ও জনকল্যাণমুখী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জাতীয় ঐকমত্য গঠন এবং প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা ও নেতিবাচক রাজনীতির বিপরীতে ইতিবাচক সৃজনশীল এবং কার্যকর ভারসাম্যের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা।
সকল দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’এই নীতির আলোকে পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা। প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আধুনিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও সমরসম্ভারে সুসজ্জিত, সুসংগঠিত ও যুগোপযোগী করা।
এসময় ড. কামাল হোসেন বলেন, দেশের প্রকৃত মালিক দেশে জনগণ। কিন্তু মালিকের কোন ভোটাধিকার নেই। কারণ হলো মালিক এখনও সৈরাচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি। আমরা সেই ঐক্য প্রক্রিয়াই চালাচ্ছি। এ জন্য সবার সহায়তা লাগবে।
তিনি বলেন স্বাধীনতার ৪৭ বছরে প্রতি দিনই গুম খুনের ঘটনা ঘটছে। দেশের আইনের শাসন নেই। কেউ কোন অন্যায়ের প্রতিবাদও করতে পারছে না। মালিকের ভোটাধিকার ফেরাতে ১৬ কোটি মানুষকে রাজপথে নামতে হবে। এজন্য পাড়ায় মহল্লায় ঘরে ঘরে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
তিনি আরও বলেন আমি আশাবাদি দেশের ১৬ কোটি মানুষ তাদের অধিকার ফিরে পেতে মাঠে নামবে। আমাদের এক্য প্রক্রিয়া চলছে। যে কেউ আমাদের সাথে এক মত হলে ঐক্য করতে পারে। দেশের আজ কার্যকর কোন গনতন্ত্র নেই। ভোটাধিকার এবং গনতন্ত্র ফেরাতে রাজপথে আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই।
আসম রব বলেন, দেশের আর হাতুড়ি আর হেমলেট মার্কা গণতন্ত্র চলতে পারে না। আমরা আর বসে থাকতে পানি না। দেশে সংসদ আছে, সংসদ নির্বাচন নেই। ভোটার আছে, ভোটাধিকার নেই। আইন আছে আইনের শাসন নেই। এসব অধিকার নিশ্চিত করতে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া চলছে। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর মহানগর নাট্য মঞ্চে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশ হবে। এতে গুরুত্বপূর্ণ অনেক ঘোষণা আসতে পারে।