শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

নাগরিকদের কি এভাবে তুলে নেয়া যায়?

‘তুলে নেয়ার চার দিন পরও খোঁজ মিলছে না আরও পাঁচ তরুণের’- এই শিরোনামে একটি প্রতিবেদন মুদ্রিত হয়েছে বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায়। ১৬ সেপ্টেম্বর তারিখে মুদ্রিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, হজ্ব পালন শেষে দেশে ফিরে আসা মাকে আনতে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন সহোদর শিক্ষানবিশ আইনজীবী শফিউল আলম ও বেসরকারি কোম্পানীর চাকরিজীবী মনিরুল আলম। বিমানবন্দরে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে মায়ের লাগেজ গাড়িতে তুলছেন দুই ভাই। হঠাৎ করেই একদল লোক এসে শফিউল আলমের নাম-পরিচয় জানতে চান। তাদের প্রশ্নের জবাবে নিজের নাম-পরিচয় দেয়ার পরই শফিউল আলম, তার ভাই মনিরুল আলম এবং তাদের এক বন্ধু আবুল হায়াতসহ তিনজনকে জাপটে ধরে অন্য একটি গাড়িতে তুলে নেয়ার চেষ্টা করেন ডিবি পরিচয় দেয়া ওই ব্যক্তিরা। এ সময় তাদের বৃদ্ধা মা পরিচয়ধারী পুলিশদের কাছে অনুনয়-বিনয় করতে থাকেন। নিজের ছেলেদের জাপটে ধরে রাখার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু ওই ব্যক্তিরা মায়ের হাত থেকে তার সন্তানদের টেনে-হিঁচড়ে তাদের গাড়িতে তুলে নেন। এর পরই গাড়ি লাপাত্তা। খোঁজ নেই ওই তিন যুবকের। শুধু ওই তিন যুবকই নয়, তাদের সঙ্গে নিয়ে ডিবি পরিচয় দেয়া লোকেরা যাত্রাবাড়ীর মিরহাজারীবাগ এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী শফিউল্লাহ এবং ডগাইয়ের একটি মাদয়াসার নবম শ্রেণীর ছাত্র মোশারফ হোসেন মায়াজকেও তুলে নিয়ে যায়। ঘটনার পর চার দিন পার হলেও এখন পর্যন্ত তাদের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
নিখোঁজ এই পাঁচজনের পরিবারের স্বজনরা ১৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে (ক্র্যাব) এক সংবাদ সম্মেলনে আরো বলেন, তাদের সন্তানরা বেঁচে আছেন, নাকি তাঁদের গুম করে মেরে ফেলা হয়েছে- কিছুই জানতে পারছেন না তারা। সংবাদ সম্মেলনে শফিউল আলমের মা রামিছা খানম বলেন, তিনি গাড়ি থেকে চিৎকার করে বলেন, কেন তার ছেলেদের ধরা হয়েছে, তাদের কী অপরাধ? এ সময় পাশে থাকা আইন-শৃংখলা বাহিনীর লোকজন এগিয়ে এলে ওই ব্যক্তিরা নিজেদের ডিবির লোক পরিচয় দিয়ে আইডি কার্ড দেখান এরপর পুলিশ চলে যায়। ডিবি পরিচয় দিয়ে ওদের তুলে নেয়ার পর ওই পাঁচজনের খোঁজে অভিভাবকরা ডিবি কার্যালয় ও থানা-পুলিশের কাছে গেছেন। কিন্তু কেউ কিছু স্বীকার করছেন না।
তুলে নেয়া, গুম করা এবং হত্যার ঘটনা এখন নাগরিকদের জন্য বড় আতংকের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে রাজধানীর পূর্বাচল উপশহরের পথের ধারে গুলীবিদ্ধ তিন যুবকের লাশ নিয়ে এখনো রহস্য ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা মতে, পুলিশ পরিচয়ে তাদের যাত্রীবাহী বাস থেকে নামিয়ে অন্য গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। স্বজনদের অভিযোগ, পুলিশ তাদের নিয়ে যাওয়ার পর থেকে নিখোঁজ ছিল। এভাবে নাগরিকদের তুলে নিয়ে যাওয়া, লাশ হওয়ার ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। মানুষের জীবনতো এতো সস্তা হতে পারে না। এ ব্যাপারে সরকার ও প্রশাসনের দায়িত্ব রয়েছে। অভিভাবকদের অধিকার রয়েছে সন্তানদের খোঁজ পাওয়ার। এসব বিষয়ে আমরা সরকার ও পুলিশ প্রশাসনের বক্তব্য আশা করছি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ