বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

পরিবেশ দূষণে প্রতিবছর দেশের ক্ষতি হচ্ছে ৫২ হাজার কোটি টাকা

# বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন
স্টাফ রিপোর্টার: পরিবেশ দূষণে প্রতিবছর দেশের ক্ষতি হচ্ছে ৬.৫ বিলিয়ন ডলার যা দেশীয় মুদ্রায় প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া বছরে বাংলাদেশে যত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, তাদের ২৮ শতাংশই মারা যাচ্ছেন পরিবেশ দূষণজনিত নানা রোগের কারণে।
বাংলাদেশের দূষণ নিয়ে বিশ্বব্যাংক আয়োজিত বার্ষিক মূল্যায়ন ‘ইনহ্যান্সিং অপারচুনিটিজ ফর ক্লিন অ্যান্ড রেসিলেন্ট গ্রোথ ইন আরবান বাংলাদেশ, কান্ট্রি এনভায়রমেন্ট অ্যানালাইসিস ২০১৮’ শিরোনামে করা প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল রোববার রাজধানীর সোনারগাঁ হোটেলে প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর রাজশ্রী পারালকার। অনুষ্ঠানে বন ও পরিবেশ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহামুদসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, গত ৪০ বছরে নগরায়ন এবং শিল্পায়নের কারণে রাজধানী ঢাকা ৭৫ শতাংশ জলাভূমি হারিয়েছে। বিপরীতে নানা ধরনের দূষণের শিকার ঢাকা, যার বেশিরভাগই হচ্ছে আশপাশের এলাকার ইট ভাটার কারণে। দেশের বিভিন্ন শহর এলাকার বাসিন্দারা, সবচেয়ে বেশি বায়ু দূষণের শিকার হচ্ছে। এমনকি ২০১৫ সালে পরিবেশ দূষণজনিত রোগের কারণে বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে তথ্য দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর রাজশ্রী পারালকর বলেন, ‘শহরাঞ্চলে পরিবেশ দূষণের কড়া মাশুল গুনতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। যা দেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে ঝুঁকি তৈরি করছে। এ অবস্থায় পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের জন্য সঠিক নীতিমালা গ্রহণ জরুরি।’
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিল্পায়ন ও নগরায়নের কারণে শহরাঞ্চলে নানা দূষণে- বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকারও বেশি পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে বাংলাদেশের।
পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, ‘ভালো নীতি গ্রহণের মাধ্যমে দূষণ কমাতে চায় সরকার।’
‘অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে আমরা নানা দূষণের শিকার। ইটভাটাসহ বেশ কিছু বিষয়ে বাস্তবসম্মত নীতি গ্রহণ করছি আমরা। যা পরিবেশকে দূষণের হাত থেকে বাঁচাবে বলে আমরা আশা করছি।
রাজশ্রী পারালকার বলেন, পরিবেশ দূষণের কারণে শহরগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিতে রয়েছে। এই জন্য চরম মূল্য দিতে হচ্ছে। এই দূষণ থেকে মুক্তি পেতে সঠিক নীতিমালা প্রণয়নের পাশাপাশি সচেতনতা বাড়াতে হবে।
বন মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, আমরা পরিবেশ দূষণ নিয়ে সচেতন। এ বিষয়ের ২১০০ সালের ডেল্টা প্লান হাতে নিয়েছি। আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য পরিবেশ সৃষ্টির কথা মনে রাখতে হবে।
তিনি বলেন, লাইসেন্স না নিয়েই অনেকে ইটভাটা তৈরি করছে। পরিবেশ দূষণের জন্য ইটভাটা অনেকাংশে দায়ী। ঢাকা শহরের বায়ূ দূষণের ৫৮ শতাংশ হয় ইট ভাটা থেকে।
মন্ত্রী বলেন, আমরা একটি পরিবেশ আইন করতে যাচ্ছি। সেটি বাস্তবায়ন হলে ইটভাটা এভাবে আর গড়ে উঠতে পারবে না। তবে আইনের বাইরেও জনসাধারণকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে বলে জানান তিনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবছর শহরাঞ্চলের পরিবেশ দূষণে দেশের ক্ষতি হচ্ছে ৬.৫ বিলিয়ন ডলার। এটি দেশের মোট জিডিপির অর্ধেক, অর্থাৎ ৩.৪ শতাংশ। এটি বিরাট উদ্বেগের বিষয়। কারণ, ২০১৫ সালেই পরিবেশ দূষণের কারণে মারা গেছেন ৮০ হাজার মানুষ। দেশব্যাপী যে রোগব্যাধি হচ্ছে তার ২৮ শতাংশ রোগের কারণ পরিবেশ দূষণ। যেখানে বিশ্বব্যাপী এর গড় হার ১৬ শতাংশ।
সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা সিটিতে সুউচ্চ ভবন ও অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে ৭৫ শতাংশ চাষযোগ্য জমি হারিয়ে গেছে। পাবনার মতো ছোট শহরেও ৫০ শতাংশের মতো জমি হারিয়ে গেছে। বাংলাদেশে বায়ু দূষণের ফলে প্রতি বছর মোট জিডিপি এক শতাংশ হ্রাস পাচ্ছে। নন-কমপ্লায়েন্স শিল্প ও অপর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ফলে নগরের বাতাস এবং ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানি দূষণ হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এক টন সুতায় রঙ ফিনিশিং করতে ২০০ মেট্রিক টন দূষিত পানি নদী বা খালে গিয়ে পড়ে। যা রাজধানীর আশেপাশের এলাকার দরিদ্র মানুষের মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে হলে পরিবেশ দূষণ বিশেষ করে নগরাঞ্চলের এ দূষণ অবশ্যই কার্যকর ও টেকসইভাবে বন্ধ বা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে বলেও পরামর্শ দেয়া হয়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ