বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

১৯৯১ সালের মতো নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের অধীনে একাদশ নির্বাচন হতে হবে -ব্যারিস্টার মওদুদ

গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে নাসির উদ্দিন আহম্মদ পিন্টু স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল নেতাকর্মীর মুক্তির দাবিতে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার : ১৯৯১ সালের মতোই সংবিধানের বাইরে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের অধীনে একাদশ নির্বাচন হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, সংবিধান মানুষের জন্য; সংবিধানের জন্য মানুষ নয়। সংবিধান কোনোদিন বাধা হতে পারে না মানুষের কল্যাণের জন্য। গতকাল সোমবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে এই প্রতিবাদ সভা হয়।
ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, ১৯৯১ সালের নির্বাচন আপনাদের মনে আছে। বিচারপতি সাহাবুদ্দিন সাহেব প্রধান বিচারপতি থাকা অবস্থায় তিনি অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান হয়েছিলেন। সেটা কী সংবিধানে ছিলো? ছিলো না। পরে একাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সেটাকে বৈধতা দেওয়া হয়েছিলো। এখানেও তাই হবে। আজকে সরকার বলছে যে, নির্বাচনকালীন সরকার হবে। এই ধরনের সরকার বলতে সংবিধানে কিছুই নাই। তার মানে সংবিধানের বাইরে গিয়ে তারা এই সরকার করতে চাচ্ছেন। তাহলে আমরা যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলছি সেটাও তো সংবিধানের বাইরে থেকেও করা যায়।
তিনি বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়ার দাবিটি যারা অসাংবিধানিক বলেছেন, তারা অবাস্তব কথা বলেছেন। নির্দলীয় সরকার সংবিধানসম্মত কি না তার জবাব জনগণ দেবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন জনগণই আদায় করবে।
সরকারের উদ্দেশ্যে সাবেক আইনমন্ত্রী বলেন, সংবিধানের বাইরে গিয়ে যদি আপনারা নির্বাচনকালীন সরকার করতে রাজি হন, তাহলে আসুন সংবিধানের বাইরে গিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের ব্যবস্থা করি। এতে দেশের মানুষ আশান্বিত হবে, দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে, একটা নির্ভেজাল গণতন্ত্র হবে। সেই নির্বাচনে দেশের মানুষ যাকে খুশি তাকে ভোট দেবে এবং সত্যিকার অর্থে একটা প্রতিনিধিত্বশীল সরকার আমরা সেই নির্বাচনের মাধ্যমে পাব।
তিনি আরও বলেন, সরকারের সাথে আমাদের তফাৎটা হলো তারা সংবিধানের বাইরে গিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার করতে চায়। এই নির্বাচনকালীন সরকারের কারা থাকবেন ? যিনি প্রধানমন্ত্রী আছেন তিনি থাকবেন, এখন যারা মন্ত্রী আছেন তাদের মধ্যে বেশির ভাগ মন্ত্রীই থাকবেন। তাদের অধীনেই প্রশাসন থাকবে, পুলিশ বাহিনী থাকবে, র‌্যাব থাকবে। নির্বাচন পরিচালনা তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলে আসছেন, চলতি বছরের শেষ দিকে ‘সংবিধান মেনে’, অর্থাৎ তার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। তবে ২০১৩ সালের মত এবারও নির্বাচনের আগে মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনের মাধ্যমে একটি ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ গঠন করা হবে। অন্যদিকে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অনঢ় বিএনপিসহ বিরোধী দলীয় জোট।
তিনি বলেন, সরকারের সাথে আমাদের তফাতটা হলো তারা সংবিধানের বাইরে গিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার করতে চায়। এই নির্বাচন কালীন সরকারের কারা থাকবেন? যিনি প্রধানমন্ত্রী আছেন তিনি থাকবেন, এখন যারা মন্ত্রী আছেন তাদের মধ্যে বেশির ভাগ মন্ত্রীই থাকবেন। তাদের অধীনেই প্রশাসন থাকবে, পুলিশ বাহিনী থাকবে, র‌্যাব থাকবে। নির্বাচন পরিচালনা তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আজকে যারা বলছেন যে, নির্দলীয় সরকার অসাংবিধানিক। তারা ১৯৯৫-৯৬ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন যে, নির্দলীয় তত্ত্বাবথায়ক সরকার ব্যবস্থা তার ধারণা, এটা তার ব্রেইন চাইল্ড। তারা ১৭৩ দিন হরতাল করেছিলেন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য। আজকে তারাই উল্টো কথা বলেছেন।
জাতিসঙ্ঘে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সফর সম্পর্কে সরকারের বক্তব্যের জবাবে মওদুদ আহমদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বড় বড় নেতারা যে ভাষায় কথা বলেছেন তাতে মনে হচ্ছে যে, তারা খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে, তারা খুবই আতঙ্কিত হয়েছেন বলে মনে হয়। কী করে এটা সম্ভবপর হলো জাতিসংঘ থেকে বিএনপিকে দাওয়াত দেবে জাতিসঙ্ঘ যাওয়ার জন্য। এটা তাদের সহ্য হয় নাই। তারা অনেক বিরূপ মন্তব্য করেছেন যার সঙ্গে সত্যের কোনো সম্পর্ক নাই। যেমন একটা উদাহরণ দেই। আমাদের মহাসচিব কখনোই বলেন নাই যে, তিনি জাতিসংঘের মহাসচিবের সাথে সাক্ষাৎ করবেন। সকলেরই জানা এটা কখনো এই পর্যায়ে হয় না। সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল ও তার টিমের সাথে আমাদের মহাসচিবের নেতৃত্বে সাক্ষাৎ করেছেন। সেখানে তারা কোনো নালিশ করতে যান নাই, সরকারের সমালোচনা করতে যান নাই। তারা গেছেন দেশের বর্তমান বাস্তব অবস্থা তুলে ধরার জন্য। এটা আমাদের মহাসচিবের দায়িত্ব ছিলো এটাকে উপস্থাপন করেছেন। দেশে সত্যিকারের অবস্থাটা কী, আইনের শাসনের কী অবস্থা, বিচার বিভাগের কী অবস্থা, মৌলিক অধিকারের কী অবস্থা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হচ্ছে, গুম হয়ে গেছে তিন শত নেতা-কর্মী- এগুলো তিনি তুলে ধরেছেন। সরকার এতে বিচলিত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর সভাপতিত্বে আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুল ইসলাম নাহিদের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সহসভাপতি মোশাররফ হোসেন খোকন, তেজগাঁও থানার সহসভাপতি হাফিজুর রহমান কবির, শাহবাগ থানার কৃষক দলের সভাপতি এম. জাহাঙ্গীর আলম।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ