শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

রোহিঙ্গা গণহত্যার তদন্ত শুরু আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের

নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা এক রোহিঙ্গা বাবা এক হাতে পানিতে আগলে রেখেছেন তার শিশুকে                                             -ফাইল ছবি

১৯ সেপ্টেম্বর, রয়টার্স, এএফপি : রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর চালানো গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ ঘটানোর দায়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযান ও হত্যাযজ্ঞের বিচারে আইসিসি এ পদক্ষেপ নিয়েছে। এতে করে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওপর পূর্ণ তদন্তের পথ খুলে গেল।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত-আইসিসি’র আইনজীবী ফাতো বেনসুদা গত মঙ্গলবার এ কথা জানিয়েছেন। ফাতো বেনসুদা জানান, রাখাইনে সেনা নিপীড়নের ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে নামার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে। প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত পূর্ণাঙ্গ তদন্তে নামবে। বার্তা সংস্থা জানায়, তদন্তে রোহিঙ্গাদের হত্যা, যৌন নিপীড়ন, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিতাড়িত করার বিষয়ে বেশি গুরুত্বারোপ করা হবে।

গত মাসে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মিয়ানমারের সামরিক নেতৃত্বকে বিচারের আহ্বান জানিয়ে দেওয়া জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন মিয়ানমার প্রত্যাখ্যান করেছে। মিয়ানমারে সরকারের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ যে প্রতিবেদন তৈরি করেছে’, সেটি তাঁদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

এর আগে গত বছরের নবেম্বরে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের প্রেক্ষাপটে একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে দেশটির সেনাবাহিনী। ওই প্রতিবেদনে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। কোনো রোহিঙ্গাকে হত্যা, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া, নারীদের ধর্ষণ বা লুটপাটের বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওই তদন্ত প্রতিবেদনের সমালোচনা করেছে এবং তা ‘হোয়াইট ওয়াশ’ করার প্রচেষ্টা বলে বর্ণনা করেছে। মিয়ানমার আইসিসিতে স্বাক্ষর না করলেও বিচারকেরা রুল দিয়েছেন যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের বিচার চলবে, কারণ বাংলাদেশ আইসিসির সদস্য।

গতকাল বুধবার যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্টের মিয়ানমারের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা। এমন সময় আইসিসির কাছ থেকে তদন্তের ঘোষণা এল।

হান্ট রাখাইনের উত্তরাঞ্চল পরিদর্শনে যাবেন। ওই অঞ্চল থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। এ ছাড়া তিনি দেশটির ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী অং সান সু চির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

এর আগে গতকাল সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার জন্য মিয়ানমারের শীর্ষ জেনারেলদের বারবার অভিযুক্ত করে জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। রোহিঙ্গা সংকটে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জাতিসংঘের তদন্তকারীরা বলেন, ‘রাজনীতি থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে সরানো উচিত বলে মন্তব্য করেছেন।

জাতিসংঘের ৪৪৪ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনাবাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্ব পরিবর্তন করা উচিত। সেই সঙ্গে দেশটির প্রশাসনের ওপর বাহিনীটি যেন আর কোনো ধরনের প্রভাব না রাখে, সেই ব্যবস্থা করা উচিত।

সংবাদ সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, বৌদ্ধ জাতিগোষ্ঠী সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির শাসনকর্তা কার্যত মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। পার্লামেন্টে এক-চতুর্থাংশ আসন সেনাবাহিনীর দখলে এবং তিনটি মন্ত্রণালয়ও তাদের নিয়ন্ত্রণে। ২০১১ সালে দেশটিতে রাজনৈতিক সংস্কার শুরু হওয়ার পরও তারা দাপট ধরে রেখেছে।

জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রধান মারজুকি দারুসম্যান জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে বলেছেন, নিষ্ঠুরতার স্তর অনুমান করা কঠিন। বেসামরিক জীবনের জন্য বিশাল অসম্মান।

প্রতিবেদনে জাতিসংঘে মিয়ানমারের দূত কাউ মো তুনকে প্রতিবেদন ‘একপেশে’ ও ‘ত্রুটিপূর্ণ’ বলায় সমালোচনা করা হয়েছে। এর আগে মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে রোহিঙ্গাদের জোর করে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে বাধ্য করার ঘটনায় আইসিসি বিচার করতে পারে কিনা তা জানতে চেয়ে আবেদন করেছিলেন ফাতো বেনসুদা। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ সেপ্টেম্বর নেদারল্যান্ডসের হেগে সংস্থাটির তিনজন বিচারক বিশিষ্ট প্রি-ট্রায়াল কোর্ট বিচারের পক্ষে রায় দেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ