বঙ্গোপসাগরে ট্রলারডুবিতে নিহতদের পরিবারে শোকের মাতম
খুলনা অফিস : বঙ্গোপসাগরে ট্রলারডুবিতে নিহত আট জনের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। স্বজনদের হারিয়ে তারা দিশেহারা। বাকরুদ্ধ তাদের বাবা-মা। গত বুধবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাত ৩টার দিকে বঙ্গোপসাগরের ১ নম্বর ফেয়ারওয়ে বয়ার কাছে ঝড়ে এফবি মারিয়া-১ নামের একটি ট্রলার ডুবে যায়। ওই ট্রলারে ছোমেদ ফরাজীর তিন ছেলে শহিদুল ফরাজী (৩৫), আনোয়ার ফরাজী (৪৫) ও কামরুল ফরাজীসহ (৪২) ১৭ জন জেলে ছিলেন। এদের মধ্যে ৯জন জীবিত ফিরেছেন। বাকি ৮জনের সলিল সমাধি ঘটেছে। বেঁচে যাওয়া ৯ জনের মধ্যে শহিদুল ফরাজী ছিলেন ট্রলারের প্রধান মাঝি। ট্রলারটির মালিকও তিনি। আপন দুই সহোদরকে হারিয়ে তিনি এখন বাকরুদ্ধ। বাড়িতে চিকিৎসা চলছে তার। নিহত অন্যরা হলেন-শরণখোলা উপজেলার রাজৈর গ্রামের আশরাফুল গাজী, শহিদুল হাওলাদার, ডাবলু হাওলাদার, রাজাপুর গ্রামের মোদাচ্ছের হাওলাদার, নলবুনিয়া গ্রামের রিয়ারজ হাওলাদার এবং উত্তর তাফালবাড়ি গ্রামের আলমগীর হোসেন। দুই ছেলের মৃত্যুর খবরে বাকরুদ্ধ বাবা ছোমেদ ফরাজী। তাদের বাড়ি শরণখোলা উপজেলার কোন্তাকাটা ইউনিয়নের রাজৈর গ্রামে।
জীবিতরা শরণখোলার এফবি সাগর ট্রলারে করে শনিবার দিনগত রাত আড়াইটার দিকে মংলায় এসে পৌঁছান। সেখান থেকে স্বজনরা তাদের বাড়িতে নিয়ে যান।
বেঁচে ফিরে আসা ওই ট্রলারের দ্বিতীয় মাঝি রাজৈর গ্রামের আবদুল মজিদ হাওলাদারের ছেলে মো. কবির হাওলাদার (২২) বলেন, ‘মোরা সিগনাল পাইয়া কূলে আইতে ছিলাম (তীরে)। বিষ্টি (বৃষ্টি) আর বাতাসে টেকতে (টিকতে) না পাইর্যা ওরা আস্টোজন (৮ জন) বোডের (ট্রলারের) কেবিনের মইদ্যে (ভেতরে) হান্দে (ঢোকে)। বুধবার রাইত (রাত) ৩টার দিকে মোরা ট্রলার নিয়া যহন (যখন) ১ নম্বর বয়ার কাছাকাছি আইছি, তহন বিশাল এক লাহরে (ঢেউ) বোড (ট্রলার) ফালাইয়া দেয়। মোরা ওপরে থাকা ৯জন ট্রলারের প্লোট ধইর্যা (প্লাস্টিকের ভাসনা/ফট) সাগরে ভাসতে থাকি। কিন্তু হেরা আর বাইরাইয়াতে (বের হতে) পারে নাই। তিন দিন পর শুক্রবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাইত সাড়ে তিনটা-চাইট্টার দিক মোরা ভারতের সীমানায় কেতুয়ার চরে যাইয়া উডি। হতন ভারতের এফবি সূর্যসেন নামের একটা বোডে মোগো উডাইয়া নেয়। মোগো আতপাও (হাত-পা) পানিতে সাদা ওই গ্যাছে। ভারতের বোডের মাঝি রবীন দাস মোগো ওষুধ ও খাওন দিয়া সুস্থ বানায়।’
ট্রলার মাঝি কবির আরও জানান, ঝড়ের কবলে পড়ে ভারতের ওই এলাকায় ভেসে যাওয়া শরণখোলার বিলাশ রায় কালুর এফবি সাগর-১ ট্রলারে তাদের ৯ জনকে শনিবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে ভারতের ট্রলারের মাঝি রবীন দাস উঠিয়ে দেন। এসময় তাদের আশ্রয়ে থাকা ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার নূরাবাদ এলাকার আরও ১৪ জেলেকে দেন শরণখোলার অপর ট্রলার তহিদুল তালুকদারের এফবি আজমীর শরীফ-১ এ।
এফবি সাগর ট্রলারের মালিক বিলাশ রায় কালু জানান, তার এবং তহিদুল তালুকদারের ট্রলার দু’টি ঝড়ের কবলে পড়ে ভারতের কেতুয়া এলাকায় চলে যায়। সেখান থেকে মারিয়া ট্রলারের ৯ জন ও চরফ্যাশনের ১৪ জেলেকে তাদের ট্রলারে নিয়ে আসে। এসব জেলেদের সবাই কমবেশি অসুস্থ বলে জানান তিনি।
অপরদিকে, নিখোঁজ জেলে ও ট্রলারের সন্ধানে কোস্টগার্ড তাদের উদ্ধার তৎপরতা আরও জোরদার করেছে। তাদের পাঁচটি টিম সুন্দরবন ও সমুদ্রের বিভিন্ন এলাকায় চিরুনি অভিযান পরিচালনা করছে।
এ ব্যাপারে মংলা কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের অপারেশন কর্মকর্তা লে. জাহিদ আল হাসান জানান, তাদের সামর্থ অনুযায়ী চেষ্টা চলছে। সুন্দরবন ও সমুদ্রের কাছাকাছি শরণখোলা, সুপতি, কচিখালী, দুবল, কোকিলমনিসহ পাঁচটি কন্টিনজেন্টের প্রায় ৫০ জন সদস্য উদ্ধার অভিযানে নিয়োজিত রয়েছেন।