বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

পরকিয়া অপরাধ নয়

 ২৭ সেপ্টেম্বর, এনডিটিভি/ আনন্দবাজার : পরকিয়া ‘অপরাধ নয়’ জানিয়ে এ সংক্রান্ত দেড়শ বছরের পুরনো একটি আইন বাতিল করে দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বে গতকাল বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে আইনটি বাতিলের রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ ব্যভিচার আইন ইতোমধ্যে বাতিল করে দিয়েছে। ব্যভিচারকে অপরাধ বিবেচনা করা হলে তা হবে উল্টো পথে হাঁটা এবং অসুখি মানুষকে শাস্তি দেওয়ার সমতুল্য। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারার এ আইনে বলা ছিল, কোনো ব্যক্তি কোনো বিবাহিত নারীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলে এবং তাতে ওই নারীর স্বামীর অনুমতি না থাকলে বিষয়টিকে ধর্ষণ বিবেচনা করে ব্যভিচারে লিপ্ত পুরুষের পাঁচ বছর পর্যন্ত জেল, জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ড হতে পারে।

বিবাহিত নারীকে ‘অপরাধের শিকার’ বিবেচনা করে ওই আইনে সম্পর্ক স্থাপনকারী পুরুষকেই দোষী হিসেবে গণ্য করার বিধান ছিল। ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ দেশে ফৌজদারি আইন হিসেবে ১৮৬০ সালে ব্রিটিশ সরকারের তৈরি করা দণ্ডবিধিই প্রয়োজনমত বদলে নিয়ে চালু রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশের ফৌজদারি দণ্ডবিধিতেও একই ধারায় একই ভাষায় একই শাস্তির কথা বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী বাংলাদেশেও ব্যভিচার দণ্ডনীয় অপরাধ বিবেচনা করা হয়।

আইনটি বাতিল চেয়ে করা মামলায় আবেদনকারীরা বলেন, ঔপনিবেশিক আমলে এই আইনের মাধ্যমে বিবাহিত নারীদের স্বামীর সম্পত্তি হিসাবে গণ্য করা হত; বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় এ ধারণা অচল। আইনটিতে নারী-পুরুষের মধ্যে অসমতা সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে বলেও দাবি করেছিলেন তারা।

সরকারি কৌঁসুলিরা ‘বিয়ের পবিত্রতা’ রক্ষার স্বার্থে আইনটি বহাল রাখার পক্ষে যুক্তি দেন। বৃহস্পতিবারের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনটিকে ‘নারীদের জন্য অপমানজনক’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। আদালত বলেছে, এ আইনে নারীর মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়, স্বাতন্ত্র্য খর্ব হয় এবং নারীকে তার স্বামীর সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়।

প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র এই রায়ে দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারাকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হিসেবেও বর্ণনা করেছেন। 

 “এটি (ব্যভিচার) বিবাহবিচ্ছেদের একটি বড় কারণ হতে পারে, তা নিয়ে সংশয় নেই। তবে এটা কোনোভাবেই অপরাধ নয়। যে আইন ব্যক্তিস্বাধীনতা ও নারীদের সমান অধিকারের দাবিকে খর্ব করে, তা সম্পূর্ণভাবে সংবিধানবিরোধী।”

বিচারপতি মিশ্র বলেন, ব্যভিচার সংসারে অশান্তির মূল কারণ নাও হতে পারে, হয়ত এটা সংসারে অসুখি হওয়ার ফলাফল।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ