বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

এ কেমন বর্জনের ডাক!

সাম্প্রদায়িক শক্তিকে বর্জনের ডাক দেয়া হয়েছে হিন্দু বৌদ্ধ খৃস্টান ঐক্য পরিষদের মহাসমাবেশ থেকে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ওই মহাসমাবেশের আয়োজন করা হয়। মহাসমাবেশের বিষয় আশয় নিয়ে এক দীর্ঘ প্রতিবেদন মদ্রিত হয়েছে জনকণ্ঠ পত্রিকায়। সেখানে যেসব বক্তব্য ও আকাক্সক্ষা প্রকাশ করা হয়েছে তার অনেক কিছুই প্রশ্নবোধক। প্রথমেই প্রশ্ন জাগে মহাসমাবেশের ডাক নিয়ে। সেখানে তো সাম্প্রদায়িক শক্তিকে বর্জনের ডাক দেয়া হলো। কিন্তু হিন্দু বৌদ্ধ খৃস্টান ঐক্য পরিষদ কোন্্ শক্তি? এরা কি সাম্প্রদায়িক শক্তি নয়? আমরা জানি হিন্দু বৌদ্ধ ও খৃস্টান- এরা বিশেষ বিশেষ ধর্ম সম্প্রদায় এবং এদের সবারই সম্প্রদায়গত পরিচয় রয়েছে। এখন এই তিন সম্প্রদায় এক হয়ে যখন ঐক্য পরিষদ প্রতিষ্ঠা করে, তখন তো তাকেই মহাসাম্প্রদায়িক শক্তি হিসেবে বিবেচনা করতে হয়। এমন বিবেচনাকে কি অযৌক্তিক বলা যাবে? এখন এদের উদাহরণ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ মুসলমানরা যদি মুসলিম ঐক্য পরিষদ নামে কোন সংগঠন গড়ে তোলে, তখন তাকে কী বলা হবে? নিশ্চয়ই বলা হবে সাম্প্রদায়িক সংগঠন। এটাই এখন বিশ্ব সভ্যতার রেওয়াজ। একই কর্মের এখন রায় হয় দুই ধরনের। সন্ত্রাস কিংবা সাম্প্রদায়িকতা দোষে অন্যরা দুষ্ট হলে তা প্রকাশের ভাষা হয় অন্যরকম। আর মুসলমানরা জড়িত থাকলে তার ভাষা হয় কঠোর ও ঘৃণাত্মক। তাহলে আমরা কি এখন বিদ্বেষমাখা এক প্রহসনের সভ্যতায় বাস করছি? আশার কথা হলো, এমন সভ্যতায় বসবাসের পরও কোটি কোটি মুসলমান নিরীহ নাগরিকের মতোই জীবনযাপন করে যাচ্ছে। লাখ লাখ মুসলমান নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হওয়ার পরও এই সভ্যতার কাছেই তারা সুবিচার কামনা করছে। আর শুভ সংবাদ হলো, বাংলাদেশের মুসলমানরা উদার ও ধর্মপ্রাণ। সাম্প্রদায়িক হিংসা ও বিদ্বেষ থেকে তারা মুক্ত। তাই তারা হিন্দু বৌদ্ধ খৃস্টান ঐক্য পরিষদের মতো কোন সাম্প্রদায়িক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেনি।
এখানে আর একটি প্রশ্ন উত্থাপন করা যায়। বাংলাদেশে হিন্দু বৌদ্ধ খৃস্টানদের ওপর কি কোন জুলুম-নির্যাতন হয় না? জুলুম-নির্যাতনের ঘটনা তো আমরা দেখি, পত্র-পত্রিকায়ও সেসব খবর মুদ্রিত হয়। প্রশ্ন জাগে, মুসলমানরা কি ওইসব জুলুম-নির্যাতন থেকে মুক্ত দরিদ্র ও অসহায় নাগরিকদের কপালে একই দুর্ভোগ। এখানেই চলে আসে মানবিক মূল্যবোধ ও সুশাসনের প্রশ্ন। গণতান্ত্রিক রাজনীতির বদলে দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি প্রসারের কারণে সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ বাড়ছে। আর একটি বিবেচনার বিষয় হলো, হিন্দু হওয়ার কারণে অর্থাৎ ধর্মীয় কারণে যদি কোন নাগরিক নির্যাতনের শিকার হন, তাহলে কী করা হবে? আমাদের বিবেচনায় এ ক্ষেত্রে দলবাজি ও ক্ষমতার রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করে উচিত হবে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করা। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের এবং রাজনীতিবিদ ও ধর্মীয় নেতাদের করণীয় আছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ